ঢাকা   শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১১ কার্তিক ১৪৩১

ভারতে গণধর্ষিতা ছাত্রীকে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হলো না

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১১ এএম | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১১ এএম

নিজের কাকা ও তার দুই পরিচিত মিলে ধর্ষণ করেছিল মেয়েটিকে। সে গণধর্ষণের সেই ট্রমা কাটিয়ে চেয়েছিল ক্লাস টুয়েলভের বোর্ড পরীক্ষা দিতে। প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু পরীক্ষাটা আর দেওয়া হলো না। সৌজন্যে, তার স্কুল। নির্যাতিতা আর পাঁচ জনের সঙ্গে বসলে ‘পরিবেশ নষ্ট’ হবে, তাই তাকে বসতে দেওয়া হলো না জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায়! –এই সময়

এই একই যুক্তিতে তাকে স্কুলে যেতেও না করা হয়েছিল! ‘নষ্ট মেয়ের’ উপস্থিতি ‘নষ্ট করবে স্কুলের সুস্থ পরিবেশ!’ এই ঘটনার অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে অজমেরের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি)। তবে এই কিশোরী একা নয়। এই একই উদাহরণ রয়েছে বাংলাতেও। সেটা বছর কয়েক আগের কথা। উত্তর ২৪ পরগনার এক কিশোরী পাচার হয়ে গিয়েছিল অন্য এক শহরের যৌন-পল্লিতে। সেখান থেকে সে একদিন পুলিশ ও এনজিও-র সাহায্যে ফিরে আসে। আদরের মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে দ্বিধা করেননি মা-বাবা। তবে সে যখন স্কুলে গেল, সেখানে তাকে তার প্রধান শিক্ষিকা বললেন, ‘তুমি বাজে মেয়ে। তুমি স্কুলে এলে অন্যরা খারাপ হয়ে যাবে!’

বছর ১৫-র কিশোরী আঁতকে উঠেছিল এই কথা শুনে। সে বোঝেনি তার কি দোষ ছিল এতে। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে এসেছিল সে। পরে এই সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। সেই প্রধান-শিক্ষিকাকে শো কজ় করা হয়। মেয়েটি সেই স্কুল থেকেই পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দেয়। অন্য গল্প নয় আর এক নাবালিকারও। পাশের পাড়ার কয়েক জন তাকে গণ-ধর্ষণ করেছিল। এফআইআর হতেই অভিযুক্ত পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ। দীর্ঘ কাউন্সেলিংয়ের পরে সে ফের নিজের স্কুলে ফিরতে চেয়েছিল। তাকে সরকারি মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি জানিয়ে দেয়, ‘এ সব নোংরা মেয়েরা এই স্কুলে পড়ে না। তোর জন্য বাকিরাও নষ্ট হয়ে যাবে!’ রাজ্য সরকার পড়ুয়াদের যে সাইকেল দেয়, তা-ও তাকে দেওয়া হয়নি মাদ্রাসা থেকে। সে পরে প্রাইভেটে ক্লাস টেনের পরীক্ষা দিয়েছিল।

দেশের নানা প্রান্তে এমনও দেখা গেছে কোনও মেয়ের যদি স্কুলে থাকতে বিয়ে হয়ে যায় বা তারা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে, তাদেরও অনেক সময়ে ‘অন্যদের ভালোর জন্য’ ক্লাসে আসতে না করে দেওয়া হয়। পরীক্ষার প্রস্তুতি বাড়িতেই নিতে বলা হয়। রাজস্থানের এই বেসরকারি স্কুলটিও তার বাইরে নয়। মেয়েটির কোনও অপরাধ না থাকা সত্ত্বেও ‘স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হবে’ এমন একটি অচল যুক্তিতে তাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ বাড়িতে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। ছাত্রীটি তাই-ই করেছিল। সে জানিয়েছে, পরীক্ষার আগে যখন স্কুল থেকে অ্যাডমিট কার্ড আনতে গিয়েছিল, তখন স্কুল তাকে বলে যে সে ওখানকার ছাত্রীই আর নয়! কারণ সে একটানা চার মাস স্কুলে আসেনি। তাই নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। ফলে নেই কোনও অ্যাডমিট কার্ড। পরে ছাত্রীটি জানতে পারে, তার গণধর্ষণের ঘটনার পর পরই স্কুল থেকে তার নাম কেটে দেওয়া হয়েছে, কারণ অন্য পড়ুয়াদের অভিভাবকরা নাকি নির্যাতিতার সঙ্গে নিজের সন্তানদের পড়তে দিতে রাজি ছিলেন না!

স্কুলের এমন আচরণে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে কিশোরী। সে অন্য স্কুলের এক শিক্ষিকাকে পুরো বিষয়টি জানালে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। ওই শিক্ষিকা ছাত্রীটিকে চাইল্ড হেল্প-লাইন নম্বরে ফোন করার পরামর্শ দেন। ফোন পেয়েই তৎপর হয় অজমেরের সিডব্লিউসি। বিষয়টিতে তৎপর হয়েছে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি(সিডব্লিউসি)। মামলা দায়ের করেছে তারা। তদন্তে স্কুল কর্তৃপক্ষের দোষ প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনেরও। সিডব্লিউসি-র চেয়ারপার্সন অঞ্জলি শর্মা জানান, তিনি নির্যাতিতার সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন। আইনগত ভাবে তদন্ত চলছে। তবে মার্চে বোর্ডের পরীক্ষা দিতে না-পারা এই কিশোরী যাতে অবিলম্বে বোর্ড-পরীক্ষায় বসতে পারে, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। সব কিছু বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে, এ ব্যাপারে জেলার এডুকেশন অফিসারকে চিঠিও লিখেছেন তিনি, যাতে ওই ছাত্রীর কোনও শিক্ষাবর্ষ নষ্ট না হয়। তাঁর কথায়, ‘মেয়েটি যথেষ্ট মেধাবী। দশমের বোর্ড পরীক্ষায় ৭৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল। দ্বাদশের পরীক্ষায় বসতে পারলে হয়তো আরও ভালো রেজাল্ট করত। স্কুলের জন্য তার এক বছর নষ্ট হতে চলেছে। আমরা সেটা আটকানোর চেষ্টা করছি।’


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গফরগাঁওয়ে পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে সংঘর্ষ

গফরগাঁওয়ে পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে সংঘর্ষ

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের উন্নতি

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের উন্নতি

পটিয়ায় পৌরসভার অপরিকল্পিত ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ বন্ধের দাবি

পটিয়ায় পৌরসভার অপরিকল্পিত ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ বন্ধের দাবি

বাঘারচর বিজিবি ক্যাম্পে ১৭৫ বস্তা ধনিয়া জব্দ মালিকের প্রশ্ন আরো ২০ বস্তা গেলো কোথায়?

বাঘারচর বিজিবি ক্যাম্পে ১৭৫ বস্তা ধনিয়া জব্দ মালিকের প্রশ্ন আরো ২০ বস্তা গেলো কোথায়?

ফেসবুকে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করলেন সাদিয়া আয়মান

ফেসবুকে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করলেন সাদিয়া আয়মান

স্বল্পমূল্যে কৃষিপণ্য ক্রয় বিক্রয়ের জন্য ‘কৃষকের বাজার’ উদ্বোধন

স্বল্পমূল্যে কৃষিপণ্য ক্রয় বিক্রয়ের জন্য ‘কৃষকের বাজার’ উদ্বোধন

মানিকগঞ্জে এলাকাবাসীর অর্থায়নে রাস্তা মেরামত

মানিকগঞ্জে এলাকাবাসীর অর্থায়নে রাস্তা মেরামত

হতাহতদের সাহায্যার্থে একটি হটলাইন চালু করা যেতে পারে

হতাহতদের সাহায্যার্থে একটি হটলাইন চালু করা যেতে পারে

ভবদহের পানিবন্দি মানুষকে বাঁচাতে লংমার্চ কাল

ভবদহের পানিবন্দি মানুষকে বাঁচাতে লংমার্চ কাল

বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন?

বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন?

শ্বশুরবাড়িতে জামাইকে হত্যার অভিযোগ

শ্বশুরবাড়িতে জামাইকে হত্যার অভিযোগ

সরকার সঠিক পথেই এগুচ্ছে

সরকার সঠিক পথেই এগুচ্ছে

বন্যা-নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ ত্রাণ মাত্র ১০ কেজি চাল

বন্যা-নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ ত্রাণ মাত্র ১০ কেজি চাল

ছোট ফেনী নদীর দু’পাড়ে ভাঙন বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ

ছোট ফেনী নদীর দু’পাড়ে ভাঙন বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ

কদমতলী-হাসনাবাদ সেতু ৪ বছরেও শেষ হয়নি

কদমতলী-হাসনাবাদ সেতু ৪ বছরেও শেষ হয়নি

এআইর সাহায্যে প্রতিহত হল বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতি

এআইর সাহায্যে প্রতিহত হল বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতি

হিজবুল্লাহর হামলায় ৫ ইসরাইলি সেনা নিহত, আহত ১৯

হিজবুল্লাহর হামলায় ৫ ইসরাইলি সেনা নিহত, আহত ১৯

৮৫ মুসলিম হত্যার ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন থাই প্রধানমন্ত্রী

৮৫ মুসলিম হত্যার ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন থাই প্রধানমন্ত্রী

পাকিস্তানে ১০ পুলিশকে গুলি করে হত্যা করল জঙ্গিরা

পাকিস্তানে ১০ পুলিশকে গুলি করে হত্যা করল জঙ্গিরা

সাগরতল দিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে যাবে সৌরবিদ্যুৎ

সাগরতল দিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে যাবে সৌরবিদ্যুৎ