আদালতে মুখোমুখি ট্রাম্প ও সাবেক পর্ন তারকা, চরম উত্তেজনা

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৮ মে ২০২৪, ০১:৩১ পিএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৪, ০১:৩১ পিএম

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্টর্মি ড্যানিয়েলস একটি কথিত যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। নিজের যৌন কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে ঘুষ দেয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শুনানি চলছে নিউইয়র্কের আদালতে। এই মামলায় মঙ্গলবার যখন ড্যানিয়েলস ও ট্রাম্পকে প্রথমবারের মতো আদালত মুখোমুখি করেন, তখন আদালত ও আশপাশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

 

ঢিলেঢালা কালো পোশাকে, পিছনে চুল বেঁধে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস। ট্রাম্পের মুখোমুখি হলেও এসময় তাকে একবারও তাকাতে দেখা যায়নি সাবেক প্রেসিডেন্টের দিকে। আদালতের কাঠগড়ায় তিনি যতক্ষণ ছিলেন, ততক্ষণ সেই যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন। ট্রাম্প ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতির ৩৪টি অপরাধমূলক মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্যে একটি ছিল, ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে ড্যানিয়েলসকে এক লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্টের আইনজীবী, সেই কারণে।

 

এই ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন ড্যানিয়েলস, সেই সাথে ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন মিলনের কথাও অস্বীকার করেছেন তিনি। যদিও তার দাবি, তার মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্পের প্রাক্তন আইনজীবী মাইকেল কোহেন তাকে টাকা দিয়েছিলেন। ঘুষ গ্রহণ করার কারণে তাকে যে কোনও সময় আদালতে হাজির করা হতে পারে, এই ধারণা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু সব নাটকীয়তার জবাব মিললো মঙ্গলবার আদালতে তার উপস্থিতির মধ্য দিয়ে। আদালতে শুনানিতে তিনি ট্রাম্পের সাথে এই কেলেঙ্কারির ঘটনার মুহুর্তগুলো বর্ণনা করছিলেন। যদিও তখন ট্রাম্পের আইনজীবী বিষয়টিকে ভুল বলে দাবি করছিলেন আদালতে। এই শুনানির সময় বিচারপতি হুয়ান মের্চান প্রসিকিউটরদের এ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য না চাওয়ার জন্য সর্তক করেন।

 

ড্যানিয়েল আদালতে কথা বলার সময় দেখছিলেন ট্রাম্প

দিনের শুরুতে ট্রাম্পের আইনজীবীরা ২০০৬ সালে ড্যানিয়েলসের কথিত যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে কী প্রশ্ন করা যেতে করতে পারে এ নিয়ে বিচারপতি মের্চানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময় প্রসিকিউশন বলেন, কেন ড্যানিয়েলকে অর্থ দেয়া হয়েছিলো কিংবা সেটির উদ্দেশ্য কী ছিল, সেটি নিয়ে প্রশ্ন করা দরকার। ড্যানিয়েলস ট্রাম্পের সাথে তার এই কথিত যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনাটি নিয়ে এই প্রথম আদালতে কথা বলেননি। এর আগেও এটি নিয়ে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে, টেলিভিশনে কথা বলেছেন।

 

দিনের শুরুতে আদালতে উপস্থিত হওয়ার পর অনেকটা নার্ভাস দেখা যাচ্ছিলো তাকে। তিনি দ্রুত গতিতে কথা বলছিলেন। তখন আদালত তাকে ধীর স্থির হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান। এই শুনানিতে প্রসিকিউটরা এমন কিছু প্রশ্ন করছিলেন, যাতে কিছুটা বিব্রত হন ড্যানিয়েলস। তখন বিচারক সর্তক করেছিলেন প্রসিকিউশনকে।

 

এ সময় ড্যানিয়েলস আদালতে ২০০৬ সালের সেই ঘটনার বর্ণনা করে বলেন, তখন ট্রাম্পের সাথে একটি ডিনারের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনুরোধ পেয়েছিলেন তিনি। ড্যানিয়েলস আদালতকে বলেন, তিনি প্রথমে ট্রাম্পের সাথে ডিনারে যোগ দিতে চাননি। কিন্তু ট্রাম্পের এক সহযোগী তাকে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করছিলো। এরপর তিনি ট্রাম্পের স্যুটে ডিনারের সেই দিনের বর্ণনা দেন। যেখানে তিনি বলেন তিনি সিল্কের একটি পায়জামা পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করেন।

 

ড্যানিয়েল আদালতকে বলেন, এরপর তিনি বাথরুমে গেলেন। বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখেন ট্রাম্প শুধুমাত্র একটি বক্সার শর্টস ও একটি টি শার্ট গায়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। পরে সেখানে ঘটে যাওয়া সেই যৌন মিলনের বর্ণনা দেন আদালতে।

 

ট্রাম্পের আইনজীবীরা ড্যানিয়েলসকে জেরা করার আগে প্রসিকিউটররা একাধিকবার আপত্তি তোলেন। তারা তখন বলেন ড্যানিয়েলসের স্বাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এটিকে একটি পক্ষপাতমূলক আচরণ বলেও বর্ণনা করেন তার আইনজীবীরা। এ কারণে এই শুনানিতে ড্যানিয়েলসকে কয়েকবার থামানোর চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা।

 

তখন বিচারপতি মের্চান আদালতে বলেন, স্বাক্ষীকে নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন কাজ। তবে ঘটনা সংক্ষেপে বলার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ঘটনাগুলো যে এত বিশদভাবে বলা হচ্ছে, তা অপ্রয়োজনীয়। যদিও আদালতে শুনানির পরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন যে তিনি মনে করেন, বিচার প্রক্রিয়া ভালোভাবে চলছে। সূত্র: বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

এবার এভারেস্ট চূড়ায় চট্টগ্রামের বাবর আলী

এবার এভারেস্ট চূড়ায় চট্টগ্রামের বাবর আলী

বান্দরবানে বন্দুক যুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত

বান্দরবানে বন্দুক যুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত

আমিরাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হলে কর্মসংস্থান হবে আরো ব্যাপক বাংলাদেশির

আমিরাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হলে কর্মসংস্থান হবে আরো ব্যাপক বাংলাদেশির

এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ

এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ

১৭ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৩৬ কোটি ডলার

১৭ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৩৬ কোটি ডলার

৪৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে

৪৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

ডলার সঙ্কটের মধ্যে ব্যাংক এমডিদের ফুর্তি খরচ ৫৫ হাজার ডলার

ডলার সঙ্কটের মধ্যে ব্যাংক এমডিদের ফুর্তি খরচ ৫৫ হাজার ডলার

পরীক্ষা শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলার মাঠে, বজ্রপাতে প্রাণ গেল শিক্ষার্থীর

পরীক্ষা শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলার মাঠে, বজ্রপাতে প্রাণ গেল শিক্ষার্থীর

এনভয় টেক্সটাইলসের এমডি নিয়োগ চ্যালেঞ্জ: অসত্য তথ্য দেয়ায় সালাম মুর্শেদীর স্বজনের করা রিট খারিজ

এনভয় টেক্সটাইলসের এমডি নিয়োগ চ্যালেঞ্জ: অসত্য তথ্য দেয়ায় সালাম মুর্শেদীর স্বজনের করা রিট খারিজ

সাজানো আগুনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা

সাজানো আগুনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা

নাটকীয়তার পর  সিটিই চ্যাম্পিয়ন

নাটকীয়তার পর  সিটিই চ্যাম্পিয়ন

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: সমালোচনার ঝড়

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: সমালোচনার ঝড়

এয়ার এ্যাস্ট্রা’র বনানী সেলস অফিস উদ্বোধন করলেন সাদিয়া ইসলাম মৌ

এয়ার এ্যাস্ট্রা’র বনানী সেলস অফিস উদ্বোধন করলেন সাদিয়া ইসলাম মৌ

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী ‘বিধ্বস্ত’ হেলিকপ্টারের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগ হয়েছে

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী ‘বিধ্বস্ত’ হেলিকপ্টারের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগ হয়েছে

'ভুয়া তথ্য' ছড়িয়ে বিশকেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

'ভুয়া তথ্য' ছড়িয়ে বিশকেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

এখনও নিখোঁজ ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী

এখনও নিখোঁজ ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী

চীনে নতুন রুট চালু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনগুলো

চীনে নতুন রুট চালু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনগুলো

বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আগ্রহী কানাডা

বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আগ্রহী কানাডা

কুমিল্লায় ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় সাত জনের মৃত্যুদণ্ড, সাতজনের যাবজ্জীবন

কুমিল্লায় ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় সাত জনের মৃত্যুদণ্ড, সাতজনের যাবজ্জীবন