ভারতে মুসলিমদের সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে মোদী সরকারের প্রতিবেদনে বিতর্ক
১২ মে ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম | আপডেট: ১২ মে ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম
লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই ভারতে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ 'ভারতের জনসংখ্যায় সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ' শীর্ষক একটি ওয়ার্কিং পেপার প্রকাশ করেছে, যার উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। সেখানে এসেছে বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু জনসংখ্যার কথাও।
ওই প্রতিবেদনটির নাম দেয়া হয়েছে 'শেয়ার অফ রিলিজিয়াস মাইনরিটিস : আ ক্রস কান্ট্রি অ্যানালিসিস’, যেখানে নানা দেশের জনসংখ্যায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অংশ নিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এই প্রতিবেদনের সমালোচনা করছেন কারণ এখানে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু এবং সংখ্যালঘু মুসলমান জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং হ্রাস নিয়ে যে মাপকাঠিগুলি ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো তাদের মতে সঠিক নয়।
প্রতিবেদনটির উপসংহারে বলা হয়েছে, "১৯৫০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে হিন্দুদের জনসংখ্যা ৭.৮২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ১৯৫০ সালে দেশের মোট জনসংখ্যায় হিন্দুদের অংশ ছিল ৮৪.৬৮ শতাংশ আর ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৮.০৬ শতাংশ।" অন্য দিকে আরও বলা হয়েছে, “১৯৫০ সালে ভারতের মোট জনসংখ্যার ৯.৮৪ শতাংশ ছিল মুসলমান আর ২০১৫-তে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪.০৯ শতাংশে।"
অর্থাৎ প্রতিবেদনের বক্তব্য, ‘১৯৫০ সালের তুলনায় মুসলমানদের জনসংখ্যা ৪৩.১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ কিন্তু আসলে এটি জনসংখ্যা বৃদ্ধির শতাংশ নয়, বরং জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দু আর মুসলমানদের অংশে কী পরিবর্তন এসেছে, তার পরিসংখ্যান। তবে ভারতের অনেক চ্যানেলই এই পরিসংখ্যানকে বিভ্রান্তিকর ভাবে দেখিয়েছে, যেন হিন্দুদের সংখ্যা কমে গেছে আর মুসলমানদের সংখ্যা অত্যধিক বেড়ে গেছে।
পপুলেশন ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া সংবাদমাধ্যমের এই ভুল ব্যাখ্যার সমালোচনা করেছে। পপুলেশন ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক পুনম মুত্রেজা বিবিসিকে বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারি দেখিয়েছে যে "গত তিন দশকে মুসলমানদের জন্মহার কমেছে।" আবার বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের জেআরডি টাটা চেয়ারের ভিজিটিং প্রফেসর নরেন্দ্র পানি বিবিসিকে ব্যাখ্যা করছিলেন, "যদি কোনও সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কম হয়, তবে শতাংশের হিসাবে পরিবর্তনটি খুব বড় দেখাবে।" "একইভাবে, যদি কোনও সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা অনেক বেশি হয়, তাহলে শতাংশের দিক থেকে পরিবর্তনটা খুব ছোট বলেই মনে হবে। এটা একেবারে সাধারণ পাটিগণিত“, বলছেন তিনি।
সংখ্যালঘু জনসংখ্যা নিয়ে প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদের গবেষণাপত্রের মূল বক্তব্য হল, যে সমাজে সংখ্যালঘুদের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ আছে, সেখানে তিন দশকের মধ্যে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি অনেক স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একইভাবে, যদি কোনও সমাজে একটা প্রতিকূল পরিবেশ থাকে অথবা সংখ্যালঘুদের ‘পণ্য ও পরিষেবা’ থেকে বঞ্চিত করা হয়, সে ক্ষেত্রে ‘মোট জনসংখ্যায় তাদের অংশ হ্রাস পাবে’।
সংক্ষেপে, একটি সমাজব্যবস্থায় সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কী ধরণের আচরণ করা হয় তার একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায় এই প্রতিবেদন থেকে। এই ওয়ার্কিং পেপারটি লিখেছেন ডঃ শামিকা রবি, আব্রাহাম জোস এবং অপূর্ব কুমার মিশ্র। গবেষণাপত্রে ১৬৭টি দেশের জনসংখ্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে, যেখানে ১৯৫০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা প্রায় ২২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে শুধু মুসলমানদের সংখ্যাই বাড়েনি, বেড়েছে খ্রিস্টানদের সংখ্যাও। লেখা হয়েছে, “১৯৫০ সালে ভারতে খ্রিস্টানদের শতকরা হার ছিল ২.২৫ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৩৬ শতাংশে। এই সময়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জনসংখ্যা বেড়েছে ৫.৩৮ শতাংশ।“ গবেষণাপত্রটিতে শিখ, জৈন আর পার্সিদের জনসংখ্যারও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে বিশ্লেষণ
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠদের জনসংখ্যা (৭.৮২%) সব থেকে বেশি কমেছে ভারতে। এরপরই আসে মিয়ানমার। গত ৬৫ বছরে সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা কমেছে ১০ শতাংশ। মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যায় সংখ্যালঘুদের হার বেড়েছে।
নরেন্দ্র মোদীর উপদেষ্টা মণ্ডলীর সিদ্ধান্ত, "বিভিন্ন মহল থেকে যে বিতর্ক তোলা হয়, তার বিপরীতে গিয়েই, নিবিড়ভাবে ২৮টি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে ভারতে সংখ্যালঘুরা কেবল নিরাপদই নন, সমৃদ্ধও।"
“দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ এশিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভুটান এবং আফগানিস্তানের মতো দেশগুলিতে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে”, লেখা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
বিভ্রান্তিকর বিশ্লেষণ?
পপুলেশন ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক পুনম মুত্রেজা বলছেন, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী "গত তিন দশক ধরে মুসলমানদের জন্মহার কমছে।" “মুসলমানদের জন্মহার যেখানে ১৯৮১-৯১ সালে ছিল ৩৫.৯ শতাংশ, যা ২০০১-২০১১ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২৪.৬ শতাংশে। হিন্দুদের তুলনায় এই পতন বেশি। একই সময়কালে হিন্দুদের জন্মহার ২২.৭ শতাংশ (১৯৮১-১৯৯১) থেকে কমে ১৬.৮ শতাংশে (২০০১-২০১১) দাঁড়িয়েছে”, বলছিলেন পুনম মুত্রেজা।
তিনি আরও বলেন যে সব ধর্মীয় সম্প্রদায়েরই মোট প্রজনন হার বা টিএফআর কমেছে। সবথেকে বেশি কমেছে মুসলমানদের মোট প্রজনন হার। হিন্দুদেরও মোট প্রজনন হার কমেছে। এটা প্রমাণ করে যে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নারীরাই কম সংখ্যায় সন্তান প্রসব করছেন।
"প্রজনন হার শিক্ষা এবং আয়ের ওপরে নির্ভরশীল, এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। যে রাজ্যগুলিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, সেখানে প্রজনন হার কম। কেরল ও তামিলনাড়ু তেমনই রাজ্য", জানান তিনি।
সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা নিয়েও পুনম মুত্রেজা উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, "গবেষণাপত্রের ফলাফল ভুলভাবে প্রকাশ করে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ ছড়ানো হচ্ছে। এ ধরনের ব্যাখ্যা শুধু ভুলই নয়, বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন।“
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বিবিসির পক্ষ থেকে গবেষণাপত্রটির অন্যতম লেখক ড. শামিকা রবির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাদের কাছ থেকে কোনও সাড়া পাওয়া গেলে তা প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে ঘানার আক্রা, ঢাকার অবস্থান তৃতীয়
ডাকসু নির্বাচন : ছাত্রদলের সঙ্গে শিবির-বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান
লন্ডনে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, অবস্থার দ্রুতই উন্নতি
এবার নির্বাচন কমিশনের ডিসপ্লে বোর্ডে ভেসে উঠল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’
এবার মার্কিন পণ্যের ওপর ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা কানাডার
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার তথ্য বিভ্রান্তির অভিযোগ, কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে
আজ গরম চা দিবস
এলিফেন্ট রোডে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কোপ, ভিডিও ভাইরাল
গাজায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমা
জ্যাক স্মিথ বিচার বিভাগ থেকে পদত্যাগ করেছেন
তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে গ্যারেজের আগুন নিয়ন্ত্রণে
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, আগুনের বিরুদ্ধে দমকল বাহিনীর মরিয়া লড়াই
হাসিনাকে যে কারণে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতেই হবে ভারতকে: তুর্কি গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ
সিরিয়ার স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনায় সউদী আরবে বৈঠক
ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ৩২, মানবিক সংকট চরমে
চাটমোহর পৌর বিএনপির কাউন্সিলে আরশেদ-তাইজুল-সিন্টু নির্বাচিত
‘একদল খাইছে আরেকদল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে’ কথাটি ছিল ভেরি জেনারেল: আজহারী
নোয়াখালীর মাইজদী হর্কাস মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশে দিল জাবি ছাত্রদল
গরু চুরি করে বিএনপি নেতা ও তার স্ত্রীর ভূরিভোজ, অতঃপর...