ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ কার্তিক ১৪৩১

হে তরুণ শিক্ষার্থীরা তোমরা সঠিক অবস্থান নিয়েছ: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৬ জুন ২০২৪, ১২:৪৩ পিএম | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪, ১২:৪৩ পিএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্র সমাজ তথা তরুণদের উদ্দেশে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী চিঠি লিখেছেন। সেখানে তিনি ফিলিস্তিনপন্থী মার্কিন শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করেছেন।

চিঠিতে তিনি লিখেছেন, আমি এই চিঠিটি সেই তরুণদের উদ্দেশে লিখছি যাদের জাগ্রত বিবেক তাদেরকে গাজার নির্যাতিত নারী ও শিশুদের রক্ষায় এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিয় তরুণ শিক্ষার্থীরা! এটি তোমাদের প্রতি আমার সহানুভূতি এবং সংহতির বার্তা। বর্তমানে যে ইতিহাস রচিত হচ্ছে তাতে তোমরা সঠিক পক্ষে অবস্থান নিয়েছ। তোমরা প্রতিরোধ ফ্রন্টের একটা অংশ গড়ে তুলেছ এবং দখলদার ও নির্দয় ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রকাশ্য সমর্থক মার্কিন সরকারের নিষ্ঠুর চাপের মধ্যে থেকেও একটা সম্মানজনক সংগ্রাম শুরু করেছ।

তোমরা যে উপলব্ধি ও অনুভূতি নিয়ে সংগ্রাম করছ ঠিক সেই উপলব্ধি ও অনুভূতি নিয়েই তোমাদের থেকে অনেক দূরবর্তী অঞ্চলে বিশাল এক প্রতিরোধ ফ্রন্ট বছরের পর বছর ধরে সংগ্রাম করছে। এই সংগ্রামের লক্ষ্য হলো- প্রকাশ্য জুলুম বন্ধ করা যা ‘জায়নবাদী’ (ইহুদিবাদী) নামক সন্ত্রাসী ও নির্দয় নেটওয়ার্ক ফিলিস্তিনি জাতির উপর বহু বছর ধরে চালিয়ে আসছে এবং তাদের দেশ দখল করার পর তাদের ওপরই চরম নির্যাতন ও নিপীড়ন চালাচ্ছে। বর্ণবাদী ইসরাইল আজ যে গণহত্যা চালাচ্ছে তা গত কয়েক দশক ধরে চলমান চরম জুলুম ও নিষ্ঠুরতারই ধারাবাহিকতা।

মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের নিয়ে গঠিত একটি জাতির স্বাধীন ভূখণ্ড হলো ফিলিস্তিন এবং এর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বিশ্বযুদ্ধের পর জায়নবাদী নেটওয়ার্কের পুঁজিপতিরা ব্রিটিশ সরকারের সহায়তায় ধীরে ধীরে কয়েক হাজার সন্ত্রাসীকে এই ভূখণ্ডে নিয়ে আসে; তারা শহর ও গ্রামে হামলা চালিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা অথবা তাদেরকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যেতে বাধ্য করে। তারা সেখানকার মানুষের কাছ থেকে তাদের বাড়িঘর, বাজার ও ক্ষেত-খামার কেড়ে নেয় এবং দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ‘ইসরাইল’ নামে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করে।

প্রথম ব্রিটিশ সাহায্যের পরে এই দখলদার সরকারের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যারা দখলদারদেরকে নিরবচ্ছিন্নভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে, এমনকি ক্ষমার অযোগ্য অসাবধানতার সাথে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ খুলে দিয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে সাহায্য করে যাচ্ছে।

প্রথম দিন থেকেই জায়নবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনের অসহায় জনগণের বিরুদ্ধে ‘লৌহ মুষ্টি’ নীতি অবলম্বন করেছে। তারা সব ধরণের বিবেক-বিবেচনা এবং মানবীয় ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে উপেক্ষা করে দিন দিন বর্বরতা, সন্ত্রাস ও নিপীড়ন বৃদ্ধি করেছে। মার্কিন সরকার ও অন্য সহযোগীরা এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও জুলুমের বিরুদ্ধে ন্যূনতম ভ্রুকুটিও প্রদর্শন করেনি। এখনও গাজায় চলমান ভয়াবহ অপরাধ সম্পর্কে মার্কিন সরকারের কিছু বক্তব্য অবাস্তব এবং ভণ্ডামিপূর্ণ।

এমনি এক অন্ধকারাচ্ছন্ন ও হতাশাজনক পরিবেশ থেকে প্রতিরোধ ফ্রন্টের উদ্ভব হয় এবং ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র গঠিত হওয়ার পর তা এই ফ্রন্টকে বিস্তৃত ও শক্তিশালী করে তোলে। আন্তর্জাতিক জায়নবাদের নেতারা এই মানবিক ও সাহসী প্রতিরোধকে সন্ত্রাসবাদ বলে ঘোষণা করেছে। আর এই জায়নবাদী নেতারাই আমেরিকা ও ইউরোপের বেশিরভাগ মিডিয়া কোম্পানির মালিক অথবা এসব কোম্পানিতে তাদের অর্থ ও ঘুষের প্রভাব রয়েছে। যে জাতি ইহুদিবাদী হানাদারদের অপরাধের মোকাবেলায় নিজ ভূমিতে আত্মরক্ষা করে সে কি সন্ত্রাসী?! আর এমন জাতিকে মানবিক সাহায্য দেওয়া এবং তাদের হাতকে শক্তিশালী করা কি সন্ত্রাসবাদের প্রতি সাহায্য বলে বিবেচিত হতে পারে?

বিশ্ব আধিপত্যবাদের বিদ্বেষী নেতারা সবচেয়ে মৌলিক মানবিক ধারণাগুলোকেও বিকৃত করছে। তারা এমন ভান করে যে, নিষ্ঠুর ও সন্ত্রাসী ইসরাইল আত্মরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে; আর স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা ফিলিস্তিনিরা সন্ত্রাস করছে। তাদেরকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে। আমি তোমাদেরকে এই বলে আশ্বস্ত করতে চাই যে, পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। পশ্চিম এশিয়ার সংবেদনশীল অঞ্চলের জন্য ভিন্ন রকমের ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। বিশ্বব্যাপী অনেক বিবেক জাগ্রত হয়েছে এবং সত্য প্রকাশ পাচ্ছে।প্রতিরোধ ফ্রন্ট শক্তিশালী হয়েছে এবং আরও শক্তিশালী হবে। নতুন ইতিহাস রচিত হচ্ছে।

তোমরা অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও জনগণ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। তোমাদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সহযোগিতা ও সমর্থন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ঘটনা যা সরকারের পুলিশি পদক্ষেপের তীব্রতা ও চাপের মোকাবেলায় কিছুটা স্বস্তিদায়ক। আমি তোমাদের প্রতি অর্থাৎ তরুণদের প্রতি সহানুভূতি জানাই এবং তোমাদের দৃঢ়তাকে সম্মান করি। আমাদের অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য এবং বিশ্বের সকল মানুষের জন্য কুরআনের শিক্ষা হলো সত্যের পথে অবিচল থাকা: 'কাজেই আপনি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছেন তাতে অবিচল থাকুন' (সূরা হুদ, আয়াত ১১২ একাংশ)। আর মানব সম্পর্কের বিষয়ে কোরানের শিক্ষা হলো-'অত্যাচার করো না এবং অত্যাচারিত হয়ো না' (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৯ একাংশ)। এই আদেশসহ এ ধরণের আরও শত শত আদেশ রপ্ত করার পাশাপাশি সেগুলো অনুসরণের মাধ্যমে প্রতিরোধ ফ্রন্ট এগিয়ে যাচ্ছে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় বিজয় অর্জন করবে। আমি তোমাদেরকে কুরআনের সাথে পরিচিত হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আগের শিরোপা ‘বাই চান্স’ আসেনি,মেয়েরা প্রমাণ করেছে: সাবিনা

আগের শিরোপা ‘বাই চান্স’ আসেনি,মেয়েরা প্রমাণ করেছে: সাবিনা

অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়

অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়

হাসিনা পালিয়ে না গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো: ইসমাইল সম্রাট

হাসিনা পালিয়ে না গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো: ইসমাইল সম্রাট

কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০

কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০

দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার

দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার

বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ

বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ

রাসুল সা. এর জীবনাদর্শই আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি- সিলেটে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী

রাসুল সা. এর জীবনাদর্শই আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি- সিলেটে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী

অলরাউন্ডারদের তালিকায় তিনে মিরাজ, শীর্ষ বোলার রাবাদা

অলরাউন্ডারদের তালিকায় তিনে মিরাজ, শীর্ষ বোলার রাবাদা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী মাছপাড়ায় অবৈধ ৬টি স্বর্ণের বারসহ চোরাচালান কাজে ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী মাছপাড়ায় অবৈধ ৬টি স্বর্ণের বারসহ চোরাচালান কাজে ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে

মানবাধিকারের নামে সমাকামিতা প্রমোট করা জনগণ মানবে না

মানবাধিকারের নামে সমাকামিতা প্রমোট করা জনগণ মানবে না

ইসরাইলি হামলায় আরও ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরাইলি হামলায় আরও ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত

পর্তুগাল জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল সম্পন

পর্তুগাল জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল সম্পন

শিক্ষার সব স্তরে 'ইসলাম শিক্ষা' বাধ্যতামূলকসহ ৭ দাবি

শিক্ষার সব স্তরে 'ইসলাম শিক্ষা' বাধ্যতামূলকসহ ৭ দাবি

আয়রন ডোমের আদলে তুরস্কের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ

আয়রন ডোমের আদলে তুরস্কের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ

ইরান সামরিক বাজেট তিন গুণ বাড়াবে

ইরান সামরিক বাজেট তিন গুণ বাড়াবে

রহস্যঘেরা মায়া সভ্যতার শহরের খোঁজ মেক্সিকোয়

রহস্যঘেরা মায়া সভ্যতার শহরের খোঁজ মেক্সিকোয়

উষ্ণায়নের প্রভাবে মাউন্ট ফুজিতে তুষারপাতে বিলম্ব

উষ্ণায়নের প্রভাবে মাউন্ট ফুজিতে তুষারপাতে বিলম্ব