ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৫ পৌষ ১৪৩১

ইইউ ভোটের পর জার্মানির ক্ষমতাসীন জোট ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১১ জুন ২০২৪, ০২:০৮ পিএম | আপডেট: ১১ জুন ২০২৪, ০২:০৮ পিএম

ইইউ ভোটে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলগুলি খারাপ ফল করেছে। আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের দাবি উঠেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর দল ইউরোপীয় নির্বাচনে খারাপ ফল করার পরই তিনি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

 

জার্মানিতেও চ্যান্সেলর শলৎসের উপর আগাম নির্বাচন করানোর জন্য চাপ বাড়ছে। শলৎসের দল সোস্যাল ডেমোক্র্যাট (এসপিডি)-এর ভোট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক নয় শতাংশে। তাদের শরিক দল গ্রিনদের ভোট কমে হয়েছে ১১ দশমিক নয় শতাংশ এবং এফপিডি-র পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ। বেশ কিছুদিন ধরে সমীক্ষাগুলির ফলে দেখা যাচ্ছিল, এক তৃতীয়াংশ জার্মান ফেডারেল সরকারের কাজে খুশি নয়। তাদের পোল রেটিং সমানে কমছে। ইইউ নির্বাচনে তাদের ফল প্রত্যাশার থেকেও খারাপ হয়েছে। দক্ষিণপন্থি এএফডি ১৫ দশমিক নয় শতাংশ ভোট পেয়ে তাদের সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।

 

ইইউ নির্বাচনে জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে সিডিইউ/সিএসইউ। তাদের পাওয়া ভোটের পরিমাণ ৩০ শতাংশ। সিডিইউ-র কৌশল ছিল, ইইউ পার্লামেন্টের এই ভোটকে ক্ষমতাসীন জোটের বিরুদ্ধে ভোটে পরিণত করা। ক্ষমতাসীন জোটের তিন দলের রংয়ের জন্য তাদের বলা হয় 'ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশন'। সিডিইউ-র স্লোগান ছিল, 'সিডিইউ-র পক্ষে ভোট দেয়ার আরেকটা কারণ-ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশন'।

 

সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ মার্ৎস ও সিএসইউ নেতা মার্কুস জুইডা দাবি করেছেন, জার্মানিতেও আগাম নির্বাচন করা হোক। কারণ, ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটের বিরুদ্ধে মানুষ ভোট দিয়েছেন। তারা এই জোটের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন। তাদের মতে, যদি এরপরও জোট সরকারে থাকে, তাহলে মানুষ খুবই হতাশ হবেন।

 

সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, জোটের তরফে এক সেকেন্ডের জন্যও আগাম নির্বাচনের কথা ভাবা হচ্ছে না। জার্মানিতে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৫ সালে। সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান।

 

ফ্রান্সের পরিস্থিতির সঙ্গে জার্মানির পরিস্থিতির ফারাক আছে। ফ্রান্সে ম্যাখোঁ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফল যাই হোক না কেন, তিনি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন। কিন্তু জার্মানিতে আগামী নির্বাচনে হেরে গেলে শলৎসকে ক্ষমতা হারাতে হবে। ফরাসি প্রেসিডেন্টকে দেশের মানুষ নির্বাচিত করে। জার্মান চ্যান্সেলরকে নির্বাচিত করেন জিতে আসা এমপি-রা।

 

নতুন নির্বাচন মানে এসপিডি, গ্রিন, এফপিডি-র ঝুঁকি

 

রাজনৈতিক স্থিরতার স্বার্থে জার্মানিতে বুন্ডেস্টাগ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত সহজ নয়। এটা তখনই সম্ভব, যদি চ্যান্সেলর সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি-রা তাকে যদি সমর্থন না করে। তখন শলৎস প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের কথা বলবেন।

 

জোটের শরিক দলগুলি এর বিরুদ্ধে। এর ফলে শুধু যে ক্ষমতা হারানোর ভয় থাকছে তাই নয়, অনেক এমপি হয়ত আবার নির্বাচিত হয়ে আসবেন না, এমন সম্ভাবনাও থাকছে। এখানেই প্রশ্নটা উঠছে, ক্ষমতা হারানোর ভয়ের ফলে কি তারা জোটের সমস্যা ও দ্বন্দ্ব মেটাতে পারবেন? বেশ কিছুদিন হলো, এই তিন দলের মধ্যে সম্পর্ক ভালো নয়।

 

তাদের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই রাজনৈতিক বিরোধ হয়। দুই বাম-মনোভাবাপন্ন দলের সঙ্গে আর্থিক উদারবাদী দলের রাজনৈতিক স্বার্থ একেবারে আলাদা। জোটের মধ্যে বড় একটা বিরোধ আগামী দিনে হতে পারে। আগামী ৩ জুলাই সরকার ২০২৫ সালের বাজেটের খসড়া পেশ করবে।

 

সরকার যা প্রজেক্ট করতে চাইছে এবং দলগুলি যে পরিমাণ অর্থ খরচ করতে চাইছে, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। এই বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী কিছু বলেননি। কিন্তু মনে করা হচ্ছে, এই ফারাক আড়াই থেকে পাঁচ হাজার কোটি ইউরোর।

 

অর্থমন্ত্রী পরিস্থিতির মোকাবিলায় সামাজিক ক্ষেত্রে খরচ কমাতে চাইবেন। তিনি বেশি ঋণ নেয়ার পক্ষপাতী নন। কিন্তু এসপিডি ও গ্রিনদের অনেকে চান, ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে যে ফাঁকগুলি আছে, তা বন্ধ করে, নতুন করে ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে।

 

জোটের ভবিষ্যৎ

 

এসপিডি নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, সামাজিক ক্ষেত্রে কোনোভাবে তারা খরচ ছাঁটাই মেনে নেবেন না। এই ধরনের বাজেট মানার কোনো সম্ভাবনাই নেই। দলের তরফ থেকে এই কথা ইতিমধ্যেই স্পষ্টভাবে সরকারকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, শলৎস কি এই কাজ করতে পারবেন?

 

শলৎস এতদিন মধ্যপন্থা নিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। ইউরোপীয় নির্বাচনে তিনি নিজেকে 'চ্যান্সেলর অফ পিস' হিসাবে তুলে ধরেছিলেন। তা কাজে আসেনি।

 

ইউরোপীয় নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর শলৎসকে খুব বিষন্ন বা চিন্তিত দেখাচ্ছে না। নির্বাচনের রাতে তিনি দলের সদরদপ্তরে এমনভাবে হেঁটেছেন, যা দেখে মনে হয়েছে, তার কোনো চিন্তা নেই। শান্তভাবে তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন।

 

গত তিন দশকের রাজনৈতিক জীবনে বারবার দেখা গেছে, হার হলে বা ধাক্কা লাগলে তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। তিনি বিচলিত হন না।

 

তবে এফডিপি নেতা লিন্ডনারও আপস করার কোনো ইচ্ছে দেখাচ্ছেন না। তাদের ভোট কমেছে। কিন্তু তারপরেও তারা বলছে, মানুষ স্থিতিশীলতার পক্ষে।

 

গ্রিন পার্টির নেতারা বলতে শুরু করেছেন, দলীয়. স্বার্থের আগে দেশের স্বার্থকে রাখতে হবে। বাজেট নিয়ে প্রকাশ্যে লড়াই করাটা ঠিক হবে না। সূত্র: ডয়চে ভেলে।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

টানা তৃতীয়বারের মতো সুপার কাপের ফাইনালে বার্সালোনা

টানা তৃতীয়বারের মতো সুপার কাপের ফাইনালে বার্সালোনা

ইন্দোনেশিয়ার নতুন কোচ ক্লাইভার্ট

ইন্দোনেশিয়ার নতুন কোচ ক্লাইভার্ট

কোপ দেলরের শেষ ষোলোতে কে কার মুখোমুখি

কোপ দেলরের শেষ ষোলোতে কে কার মুখোমুখি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গাপটিল

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গাপটিল

পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি লাখো মানুষের

পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি লাখো মানুষের

ভোগান্তিতে সেবা নিতে আসা জনসাধারণ

ভোগান্তিতে সেবা নিতে আসা জনসাধারণ

আদমদীঘিতে ফসলি জমিতে ফের কোল্ড স্টোর নির্মাণ

আদমদীঘিতে ফসলি জমিতে ফের কোল্ড স্টোর নির্মাণ

পদ্মার চরে শিকারিদের কবলে অতিথি পাখি

পদ্মার চরে শিকারিদের কবলে অতিথি পাখি

বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ৮ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ২০

বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ৮ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ২০

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন

বিপন্ন প্রজাতির হনুমান পাচারকালে ২ জনের কারাদ-

বিপন্ন প্রজাতির হনুমান পাচারকালে ২ জনের কারাদ-

মিরপুরে তুরাগ নদী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান

মিরপুরে তুরাগ নদী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান

৪৮ ঘণ্টা পরও লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ

৪৮ ঘণ্টা পরও লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ

ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি

ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি

ভারত আইনের শাসন মানে না : রিজভী

ভারত আইনের শাসন মানে না : রিজভী

ভয়াবহ দাবানলে ছাড়খাড় লস অ্যাঞ্জেলেস

ভয়াবহ দাবানলে ছাড়খাড় লস অ্যাঞ্জেলেস

সরকারের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশনা ইমরান খানের

সরকারের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশনা ইমরান খানের

‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’ : বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান

‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’ : বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত

সচিবালয়ের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

সচিবালয়ের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া