প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধন কেন সিন নদীতে গোলাপ ছুড়লেন আলজেরিয়ান অ্যাথলেটরা?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:০২ পিএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:০২ পিএম

বর্ণাঢ্য ও ব্যতিক্রমী আয়োজনে উদ্বোধন হয়ে গেল প্যারিস অলিম্পিকের। প্রথমবারের মতো অলিম্পিক গেমসের মূল ভেন্যুর বাইরে নদীতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে ব্যতিক্রমী এক কাণ্ড ঘটিয়েছেন আলজেরিয়ান অ্যাথলেটরা। তাদের জাহাজ প্যারেডে অংশ নেওয়ার সময় তারা সিন নদীতে গোলাপ ফুল ছুড়ে মারেন। এর মধ্য দিয়ে ১৯৬১ সালে প্যারিসে ঘটা গণহত্যায় নিহতদের স্মরণ করেন আলজেরিয়ানরা।

আফ্রিকান অ্যাথলেটদের বোট ভাগাভাগি করেন আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, আলবেনিয়া ও জার্মানি থেকে ২০২৪ অলিম্পিকে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিরা। সেই বোট থেকেই গোলাপ ছুড়ে মারা হয় সিন নদীতে। এই ঘটনার পেছনে জড়িয়ে আছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা। যা ঘটেছে ১৯৬১ সালের ১৭ অক্টোবরে এই সিন নদীতে, যেখানে আলজেরিয়ার মানুষকে ডুবিয়ে হত্যা করা বা হত্যা করে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ঔপনিবেশিক ফ্রান্সের বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে আলজেরিয়ান অলিম্পিক কমিটি এক বার্তায় জানিয়েছে, ‘আমাদের অধিকার আদায়ের লক্ষে শহীদ হওয়ার হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে অলিম্পিকের উদ্বোধনীতে সিন নদীতে আলজেরিয়ার প্রতিনিধি ফুল নিক্ষেপ করেছে। বিশেষ করে সেই ব্রিজ থেকে আমরা তাদের স্মরণ করেছি যেখানে তারা শহীদ হয়েছিল, সৃষ্টিকর্তা তাদের ক্ষমা করুন।’

সিন নদীতে ঘটে যাওয়া সেই বর্ণনা নিচে আমরা অলোচনা করব। তার আগে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের মতো মঞ্চে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার ব্যাপারে নিয়ম কী বলে, তা জেনে নেওয়া যাক। আলজেরিয়া তাদের নাগরিকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি লালন করে আসছে ৬৩ বছর ধরে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির নিয়ম অনুযায়ী– যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক বার্তা প্রদান বা প্রদর্শন ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ থাকবে, যতক্ষণ তা হবে শান্তিপূর্ণ।

দীর্ঘ ১৩২ বছর ফরাসি শাসনের অধীনে ছিল আলজেরিয়া। পরবর্তীতে তারা ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের ঠিক আগে ১৯৬১ সালে ১৭ অক্টোবর প্যারিসে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। ইতিহাসবিদদের বয়ান অনুযায়ী, প্যারিস এলাকায় আলজেরিয়ার মানুষদের ওপর যে দমনমূলক কারফিউ দেওয়া হয়েছিল, সেটার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল আলজেরিয়ার মুক্তিকামী সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের ফরাসি শাখা।

— Le con qui ose tout (@leconquiosetou1) July 26, 2024

সেই বিক্ষোভে কমপক্ষে ১২০ জন আলজেরিয়ানের মৃত্যু হয়েছিল বলে ইতিহাসবিদরা বলে আসছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১২,০০০’র বেশি বিক্ষোভকারীকে। কারও কারও মতে, তাদের মধ্য থেকেও তিন শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। ইতিহাসবিদরা বলছেন, অভিযোগ রয়েছে সেদিন অনেক বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে সিন নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তাদের কাউকে আবার আহত অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল নদীর ঠাণ্ডা পানিতে।

সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘আলজেরিয়ার মুসলিম কর্মী’ ও ‘আলজেরিয়ান ফরাসি মুসলিম’-দের ‘টার্গেট’ করে যে কারফিউ চালু হয়েছিল, সেটার বিরুদ্ধেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। তারপরই এই গণহত্যার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার বিষয়ে ফরাসি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিৃবতি না দিলেও, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো সাম্প্রতিক সময়ে সেটিকে ‘ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছেন।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি : আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি : আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

বিয়াই বাড়ি থেকে ফেরার পথে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল গৃহবধুর

বিয়াই বাড়ি থেকে ফেরার পথে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল গৃহবধুর

ফেনীতে আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন

ফেনীতে আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন

ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি: আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী

ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি: আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী

গৌরনদীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মটরসাইকেল চালকসহ নিহত - ২

গৌরনদীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মটরসাইকেল চালকসহ নিহত - ২

বরিশাল সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক কারাগারে

বরিশাল সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক কারাগারে

পীরগঞ্জে আইএফআইসি ব্যাংকের কম্বল বিতরণ

পীরগঞ্জে আইএফআইসি ব্যাংকের কম্বল বিতরণ

‘তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে যেতে হবে’

‘তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে যেতে হবে’

ছাত্রীদের আবাসনের জন্য মাসে ৩ হাজার টাকা দেবে ঢাবি

ছাত্রীদের আবাসনের জন্য মাসে ৩ হাজার টাকা দেবে ঢাবি

নারী ও শিশুর অধিকার সুরক্ষায় কাজ করার আহ্বান ইউজিসি’র

নারী ও শিশুর অধিকার সুরক্ষায় কাজ করার আহ্বান ইউজিসি’র

তাবলীগ জামাতে বৈষম্য নিরসনের দাবি

তাবলীগ জামাতে বৈষম্য নিরসনের দাবি

অস্ট্রেলিয়ার শ্রীলঙ্কা সফরে যোগ হলো একটি ওয়ানডে

অস্ট্রেলিয়ার শ্রীলঙ্কা সফরে যোগ হলো একটি ওয়ানডে

কোট চাঁদপুরে জামায়াত নেতা হত্যা মামলার আসামীকে কুপিয়ে হত্যা

কোট চাঁদপুরে জামায়াত নেতা হত্যা মামলার আসামীকে কুপিয়ে হত্যা

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে গবেষণায় সহায়তার নিশ্চয়তা প্রদান করা প্রয়োজন- সিকৃবি ভিসি

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে গবেষণায় সহায়তার নিশ্চয়তা প্রদান করা প্রয়োজন- সিকৃবি ভিসি

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য শেরপুর বিএনপির মিছিল

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য শেরপুর বিএনপির মিছিল

সৈয়দপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিফলেট বিতরণ

সৈয়দপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিফলেট বিতরণ

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে পটুয়াখালীতে মেয়েদের হকি ম্যাচ অনুষ্ঠিত

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে পটুয়াখালীতে মেয়েদের হকি ম্যাচ অনুষ্ঠিত

কুকুর পরিচালনা শিখতে ইতালি যাচ্ছেন পুলিশ কর্তারা

কুকুর পরিচালনা শিখতে ইতালি যাচ্ছেন পুলিশ কর্তারা

ফেদেরারের যে রেকর্ড এখন জোকোভিচের

ফেদেরারের যে রেকর্ড এখন জোকোভিচের

কুষ্টিয়ায় আ.লীগ নেতাকে হাতুড়িপেটায় মাথা ফাটাল, যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দল নেতারা

কুষ্টিয়ায় আ.লীগ নেতাকে হাতুড়িপেটায় মাথা ফাটাল, যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দল নেতারা