বাংলাদেশের ছাত্র বিক্ষোভ: হাসিনা সরকারের জন্য আসন্ন সমস্যা
২৭ জুলাই ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম
বাংলাদেশে সহিংস ছাত্র বিক্ষোভ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রায় ২শ’ জন মারা গেছে। তাহলে কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি মাত্র কয়েক মাস আগে নির্বাচনে জিতেছেন, পরবর্তী প্রজন্মের উপর তার প্রভাব হারিয়েছেন? এবং ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী দেশটি যে অস্থিরতার মধ্যে জড়িয়েছে, তা কি ছড়িয়ে পড়েছে?
কিন্তু প্রথমত, কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের ছাত্রদের ওপর সরকারী বাহিনী হামলা চালানোর পর এই মহুর্তে বাংলাদেশ নৃশংস সহিংসতার দিনগুলো থেকে বিরতি নিচ্ছে। যদিও তথ্য উপলব্ধের উপায় সীমাবদ্ধ রয়েছে, তবে পরিস্থিতির দিকে নজর দিলে একটি প্রাথমিক চিত্র উঠে আসছে।
১ জুলাই বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত সরকারি চাকরির প্রায় ৫৬শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, যা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মুক্তিযোদ্ধা/মুক্তিবাহিনী, তাদের সন্তান এবং এমনকি নাতি-নাতনিদের জন্যও সংরক্ষিত থাকবে, এমন একটি পূর্ববর্তী সরকারি আদেশ বহাল রাখার পর ছাত্রদের বিক্ষোভ শুরু হয়।
রাজপথে থাকা শিক্ষার্থীরা বলেছে যে, তারা আমলাতন্ত্রকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে রাজনৈতিকভাবে জোটবদ্ধ করার একটি পদক্ষেপ হিসাবে যা দেখেছে, যেটির বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করছে।
১৪ জুলাই ছাত্রদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসলে প্রতিবাদকারীদের ক্ষোভকে উস্কে দেন এই বলে যে, প্রতিবাদকারীরা রাজাকার ছিল। এই শব্দটি সেইসব বাংলাদেশিদের জন্য ব্যবহৃত হয়, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন করায় তাদের বিশ্বাসঘাতক হিসাবে দেখা হয়।
বিক্ষোভের সময় পুলিশের সাথে লড়াই হয়েছে, সরকারী ভবন আইটি সেন্টারে আগুন দেয়া হয়েছে, একটি মেট্রো স্টেশন ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
সরকারের দেখা মাত্র নজরে গুলি করার নির্দেশ, দেশব্যাপী কারফিউ, ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সকে নামানো হয়েছে।
২১শে জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য কোটা ৫ শতাংশে নামিয়ে এনে আগের আদেশ বাতিল করে। আদেশটি শান্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে, যদিও ছাত্র গোষ্ঠীগুলি এখনও প্রধানমন্ত্রী হাসিনার কাছে ছাত্র হত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছে এবং দমন-পীড়নের জন্য তার মন্ত্রীদের পদত্যাগ দাবি করেছে।
গত ৩ সপ্তাহে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলি ও বুলেটে প্রায় ২শ’ জন নিহত, সহ¯্রাধিক চোখে আঘাতসহ ভিভিন্নভাবে আহত হয়েছে। এখন উদ্বেগের বিষয় হলো, কারফিউ প্রত্যাহার করা হলে এবং ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরায় সম্পূর্ণরূপে চালু করা হলে, বিক্ষোভের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে, যা হাসিনা সরকারের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে, যাদের একসময় ছাত্র আন্দোলনের চ্যাম্পিয়ন হিসাবে দেখা হত।
প্রকৃত অর্থে, হাসিনা সরকারের প্রতি কিছুটা আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ রয়েছে। জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র বলেছেন, ইউএনএসজি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে ঢাকায় দাঙ্গা পুলিশ কর্তৃক জাতিসঙ্ঘের চিহ্নিত যানবাহন ব্যবহার করায়।
এদিকে, মার্কিন কংগ্রেসের একটি শুনানিতে একজন জেষ্ঠ্য মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন যে, তারা সহিংসতা শান্ত করতে এবং দেখামাত্র গুলি করার আদেশ প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছেন।
অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি পরোক্ষভাবে দাবি করেছেন যে নির্বাচনের সময় তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাগুলি তাকে বাংলাদেশে একটি মার্কিন ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দিতে বাধ্য করার জন্য আরোপ করা হয়েছে। তাহলে এটা কি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আর ভারত কেন চিন্তা করবে?
বাংলাদেশ ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীদের মধ্যে একটি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শপথ গ্রহণ এবং দ্বিপাক্ষিক সফরের জন্য জুন মাসে ভারতে দুটি সফরের সময় নেতাদের মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী সম্পর্ক দেখা গেছে। কিন্তু, বিক্ষোভ অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যেখানে ভারত বাণিজ্য, জ্বালানি এবং সংযোগের ক্ষেত্রে তার একটি শক্তিশালী অংশীদার।
১৯৭১ সম্পর্কিত কোটার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এমন একটি বার্তা বহন করে যা ভারত বিরোধী হয়ে উঠতে পারে। কারণ ভারত শুধু মুক্তিবাহিনীর সাথে যুক্ত ছিল না। কিন্তু এখন বিরোধীরা দেশটিকে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রতি পক্ষপাতে অভিযুক্ত করেছে।
প্রায় ১০হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী বাংলাদেশে রয়েছে। প্রায় ৭হাজারকে জনকে ইতিমধ্যেই সরিয়ে নিতে হয়েছে, এবং দীর্ঘায়িত বিক্ষোভ তাদের জীবনকে ব্যাহত করবে।
বাংলাদেশের সমস্যাগুলি দ্রুত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাথে একটি সমস্যা হয়ে উঠেছে। হাসিনা সরকার এই সপ্তাহে প্রতিবাদ করে, যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা দেন যে যদি নিরপরাধ বাংলাদেশীরা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে আসতে পারে, তবে তাদের জাতিসংঘের আইনের অধীনে তাদের আশ্রয় দেয়া হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি দিয়ে তীব্র তিরস্কার করেছে।
বাংলাদেশের অন্য প্রধান অংশীদার চীন, যে অভ্যন্তরীণ সহিংসতার জন্য প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সমালোচনা করবে না এবং ভারত বেইজিংকে সুযোগ দিতেও চাইবে না।
প্রতিবাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশও ভারতের প্রতি সংবেদনশীল ছিল, যেমন, সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে মুসলিমদের বিক্ষোভকে ভারতের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে অভিহিত করা। ফলে মোদি সরকার বাংলাদেশের এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না।
বাংলাদেশে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়ন, এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার মাত্র ছয় মাস পর সহিংসতার মাত্রা, সরকারী বাহিনীর আচরণ এবং নির্বিচার গুলিতে কয়েক ডজন মানুষ মারা যাওয়ার ফলে দেশে আরেকটি অগণতান্ত্রিক শাসনামল শুরু হয়েছে। এবং তার সরকারের জনপ্রিয়তার জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এটা হাস্যকর যে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা এবং ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার রাজনীতি এবং ক্ষমতায় ফিরে আসা সবটাই ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। তাই, এই বিক্ষোভের মদ্য দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের সমর্থন হারানো সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।
ভারত সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে, কিন্তু শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়, বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে, তার প্রতিবেশী এলাকায় এ ধরনের অশান্তি নিয়ে চুপ থাকতে পারবে না।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খুবির অধীনে পাইকগাছা কৃষি কলেজ, ডিপ্লোমাধারীদের জন্য চালু হবে বিএসসি
তাবলীগ জামায়াতের উভয়পক্ষের বৈষম্য সংকট সমাধানের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন
টিউলিপের পদত্যাগ নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল
ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি : আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী
বিয়াই বাড়ি থেকে ফেরার পথে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল গৃহবধুর
ফেনীতে আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন
ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি: আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী
গৌরনদীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মটরসাইকেল চালকসহ নিহত - ২
বরিশাল সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক কারাগারে
পীরগঞ্জে আইএফআইসি ব্যাংকের কম্বল বিতরণ
‘তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে যেতে হবে’
ছাত্রীদের আবাসনের জন্য মাসে ৩ হাজার টাকা দেবে ঢাবি
নারী ও শিশুর অধিকার সুরক্ষায় কাজ করার আহ্বান ইউজিসি’র
তাবলীগ জামাতে বৈষম্য নিরসনের দাবি
অস্ট্রেলিয়ার শ্রীলঙ্কা সফরে যোগ হলো একটি ওয়ানডে
কোট চাঁদপুরে জামায়াত নেতা হত্যা মামলার আসামীকে কুপিয়ে হত্যা
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে গবেষণায় সহায়তার নিশ্চয়তা প্রদান করা প্রয়োজন- সিকৃবি ভিসি
বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য শেরপুর বিএনপির মিছিল
সৈয়দপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিফলেট বিতরণ
তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে পটুয়াখালীতে মেয়েদের হকি ম্যাচ অনুষ্ঠিত