একটি অদ্ভুত পাখি বেইজিং সুইফ্ট

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম

বেইজিং সুইফ্ট হল বেইজিং-এর প্রাচীনতম "আদিবাসীদের" মধ্যে একটি। এই পাখি প্রধানত বেইজিং শহরের কেন্দ্রস্থলে বসবাস করে। এমন জায়গায় সবসময় এই ছোট অদ্ভুত পাখিটি দেখা যায়। কেন একে অদ্ভুত বলা হয়?

 

প্রথমত, এই পাখিটি খুব ছোট, ওজন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম, কিন্তু তারা অত্যন্ত দ্রুত উড়তে পারে। অভিবাসনের সময় প্রতি ঘন্টায় ১৯০ কিলোমিটার উড়তে পারে পাখিটি, যা হাইওয়েতে আমাদের প্রতিদিনের ড্রাইভিং গতির চেয়েও অনেক বেশি।

 

দ্বিতীয়ত, তাদের অভিবাসন পথটিও অনেক দীর্ঘ, তারা প্রতি বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে বেইজিং থেকে উত্তর-পশ্চিমে মঙ্গোলিয়ায় যায় এবং তারপর চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হয়ে পশ্চিম দিকে যায়, জুংগার অববাহিকা থেকে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশ করে এবং একদম দক্ষিণে গিয়ে নভেম্বরের শুরুতে তারা শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকার মালভূমিতে উড়ে যায়, যাতে শীতের ঠান্ডা থেকে দূরে থাকতে পারে। পরের বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে বেইজিং-এর দিকে যাত্রা শুরু করে। রাউন্ড ট্রিপটি প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার, যা এশিয়া এবং আফ্রিকার ৩৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যায়, যার মধ্যে অনেক দেশ ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের অন্তর্ভুক্ত দেশ। তাই বেইজিং সুইফ্ট পাখিকে "বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রাকৃতিক দূত" নামেও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বেইজিং পরিষেবা বাণিজ্য মেলার মাসকট হল "ফুয়ান" "প্রোটোটাইপটিও বেইজিং সুইফ্ট।

 

আরও আশ্চর্যের বিষয় হল যে ৩০ হাজার কিলোমিটারের এই দীর্ঘ যাত্রার সময়, সুইফ্ট পাখিটি দিনরাত উড়তে থাকে, কখনও বিশ্রামের জন্য মাটিতে অবতরণ করেনা। তারা মূলত উড়ন্ত অবস্থায় খায়, পান করে এমনকি উড়ন্ত অবস্থায় ঘুমায়। এভাবে বেইজিংয়ে ফিরে আসা পর্যন্ত তারা উড়তে থাকে। বেইজিং-এ ফিরে আসার পর তারা একটি নিরাপদ বাসস্থান বেছে নেয় এবং পরবর্তী প্রজন্মের বংশবৃদ্ধি করে।

 

 

 

সুইফটের বিশেষ শারীরবৃত্তীয় কাঠামোর কারণে এর পায়ের চারটি আঙ্গুলই সামনের দিকে প্রসারিত। তাই তাদের পায়ের আঙ্গুলগুলো একে অপরকে ধরে রাখতে পারে না এবং তারা চড়ুইয়ের মতো ডালে বা তারের উপর বিশ্রাম নিতে পারে না। তাদের বেশিরভাগই বেইজিংয়ের লম্বা প্রাচীন ভবনগুলোতে নিম্নমুখী করে বাসা বানাতে পছন্দ করে; যাতে তারা তাদের ডানা ছড়িয়ে রাখতে পারে এবং ওড়ার জন্য উঁচু জায়গা থেকে লাফ দিয়ে উড়তে পারে।

 

আজ, এসব পাখিকে বেইজিং জুড়ে আধুনিক ভবনগুলোতে পাওয়া যায়, যা জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য চীনের প্রচেষ্টা প্রতিফলিত করে।

 

বেইজিং সেন্ট্রাল অ্যাক্সিস হেরিটেজ সেন্টারের গবেষক ইউয়ান জি চুন বলেছেন, "বেইজিং সুইফ্টগুলোর কিচিরমিচির এবং টাওয়ারগুলোতে তাদের ঘোরাঘুরি বেইজিংবাসীদের নস্টালজিয়া জাগিয়ে তোলে। তারা বেইজিংয়ের একটি শহরের প্রতীকও বটে। ২০১৮ সাল থেকে, আমরা বেইজিং সুইফ্ট নিয়ে গবেষণা চালিয়েছি এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছি।

 

তিনি আরো বলেন, "পুরানো বিল্ডিংগুলো তাদের তাপ সংরক্ষণ ক্ষমতা এবং আবহাওয়ারোধী হওয়ার কারণে বেইজিং সুইফ্টের বাসা বাঁধার জন্য আদর্শ স্থান। এই কাঠামোগুলো এমনকি কাকের মতো প্রাকৃতিক শিকারীদের থেকে সুইফ্টকে রক্ষা করে। আমরা বেইজিংয়ের চেং ইয়াং গেট মেরামত করার আগে তাদের বাসাগুলো চিহ্নিত করেছিলাম এবং তাদের আসল প্রবেশ পথগুলো সংরক্ষণ করেছি। এই বছরের পর্যবেক্ষণগুলো নিশ্চিত করেছে যে, এই মেরামত তাদের বাসস্থান ব্যাহত করেনি।"

 

যেহেতু বেইজিং একটি পরিবেশগত সভ্যতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা জোরদার করছে, তাই তার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বেইজিং সুইফ্ট-সহ বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণীকে ২০ মিলিয়নেরও বেশি বাসিন্দার ব্যস্ততম মেগাসিটিতে একীভূত করা একটি অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে।

 

চাং ইয়া ছুং, বেইজিং বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্রের শিক্ষা বিভাগের উপ-প্রধান, তিনি বলেন, "বেইজিং সুইফ্টের সংখ্যা এক দশক আগে তিন থেকে চার হাজার থেকে বেড়ে আজ ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। শুধু তাদের সংখ্যাই বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয়, উপযুক্ত বাসস্থানের সংখ্যাও প্রায় বিশটি পর্যবেক্ষণ পয়েন্ট থেকে শতাধিক হয়েছে।"


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কসবায় পাওনা টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটিতে কিশোর খুন

কসবায় পাওনা টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটিতে কিশোর খুন

সাবেক প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে বর্তমান প্রেমিক খুন

সাবেক প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে বর্তমান প্রেমিক খুন

ইবি শিক্ষার্থীকে মারধর, গড়াই ও রূপসা পরিবহনের পাঁচ বাস আটক

ইবি শিক্ষার্থীকে মারধর, গড়াই ও রূপসা পরিবহনের পাঁচ বাস আটক

বেনাপোলে বিজিবি-বিএসএফের সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সমন্বয় সভা

বেনাপোলে বিজিবি-বিএসএফের সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সমন্বয় সভা

পুতুলকে ডব্লিউএইচও থেকে অপসারণে অনলাইনে স্বাক্ষর গ্রহণ চলছে, ব্যাপক সাড়া

পুতুলকে ডব্লিউএইচও থেকে অপসারণে অনলাইনে স্বাক্ষর গ্রহণ চলছে, ব্যাপক সাড়া

বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি, সেচ ও সার্বিক উন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি, সেচ ও সার্বিক উন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

সোনারগাঁও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

সোনারগাঁও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

পুলিশের দুই এএসআই’য়ের মদ্যপ অবস্থায় অশ্লীল নৃত্য ভাইরাল: বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি

পুলিশের দুই এএসআই’য়ের মদ্যপ অবস্থায় অশ্লীল নৃত্য ভাইরাল: বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি

এবার চট্টগ্রাম মাতানোর পালা

এবার চট্টগ্রাম মাতানোর পালা

ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

প্রেক্ষাগৃহের পরে 'দরদ' এবার ওটিটিতে

প্রেক্ষাগৃহের পরে 'দরদ' এবার ওটিটিতে

সকল সমস্যার সমাধান বাস্তবায়ন করতে চাই: নবাগত ডিসি জাহিদুল ইসলাম

সকল সমস্যার সমাধান বাস্তবায়ন করতে চাই: নবাগত ডিসি জাহিদুল ইসলাম

কুয়েটের ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ২৪ এপ্রিল

কুয়েটের ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ২৪ এপ্রিল

রাজশাহীর পুঠিয়ায় ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষনের অভিযোগ, যুবক গ্রেফতার

রাজশাহীর পুঠিয়ায় ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষনের অভিযোগ, যুবক গ্রেফতার

রাজশাহীতে যুবদল নেতার বাড়িতে গুলিবর্ষন, বাবা নিহত

রাজশাহীতে যুবদল নেতার বাড়িতে গুলিবর্ষন, বাবা নিহত

খুবির অধীনে পাইকগাছা কৃষি কলেজ, ডিপ্লোমাধারীদের জন্য চালু হবে বিএসসি

খুবির অধীনে পাইকগাছা কৃষি কলেজ, ডিপ্লোমাধারীদের জন্য চালু হবে বিএসসি

তাবলীগ জামায়াতের উভয়পক্ষের বৈষম্য সংকট সমাধানের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

তাবলীগ জামায়াতের উভয়পক্ষের বৈষম্য সংকট সমাধানের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

টিউলিপের পদত্যাগ নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল

টিউলিপের পদত্যাগ নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল

ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি : আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি : আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

বিয়াই বাড়ি থেকে ফেরার পথে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল গৃহবধুর

বিয়াই বাড়ি থেকে ফেরার পথে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল গৃহবধুর