চীন সফর, ভারত সম্পর্ক, নাকি পশ্চিমা চক্রান্ত?
২৮ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৩ পিএম | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৩ পিএম
এই মুহুর্তে ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন, কোটা আন্দোলন এবং ১৭ কোটি ১০লাখ জনসংখ্যার একটি জাতির ক্রমাগত একটি স্পর্শকাতর দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটার মধ্য দিয়ে ফুঁসছে বাংলাদেশ।
দেশটি এর রাজপথগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর বুলেট এবং রক্তে ভেজা ছাত্রদের মধ্যে একটি চলমান যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছে। প্রবীন মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য ৩০শতাংশ কোটা পুনর্বহালের উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাজার হাজার শিক্ষার্থী সারা বাংলাদেশে বিক্ষোভ করেছে। এবং প্রাণঘাতি বিক্ষোভটি বাংলাদেশের গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাকে তুলে ধরেছে।
এই ছাত্র বিক্ষোভের প্রতি আচরণের সাথে আরও একটি ভুল ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীকে ঝাঁকুনি দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার চীন সফরের ভুল। তাহলে, বাংলাদেশের ছাত্র বিক্ষোভ কি শেখ হাসিনার চীন সফরের ফল, নাকি আরও কোনও গভীর ষড়যন্ত্র?
চাকরির কোটার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের গণবিক্ষোভ এখন শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে রূপ নিয়েছে। যা কোটা আন্দোলন হিসাবে শুরু হয়েছিল, তা দ্রুত বাংলাদেশের সবচেয়ে খারাপ সঙ্ঘাতগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে, সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, দেশব্যাপী ইন্টারনেট বিঘœ ঘটানো হয়েছে, ২হাজার ৫শ’ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সঙ্ঘাতে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ১শ’৭৪ জন মারা গিয়েছে।
একদা উপমহাদেশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে বিবেচিত শাসকের এই দমন-পীড়ন জাতিকে ধারাল অস্ত্রের ডগায় ঠেলে দিয়েছে এবং তার সরকারের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এবং একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে, বিশে^র দৃষ্টি এখন স্থির হয়ে আছে ঢাকায় একটি চলমান নাটকের উপর।
একজন নেত্রী যিনি বাংলাদেশে গণহত্যার বৃষ্টি বইয়ে দিয়েছেন, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী নারী সরকার প্রধানদের অন্যতম। শেখ হাসিনা ভারত ও চীন উভয়কেই তার পাশে রেখেছিলেন। কিন্তু এই সময় কোথায় চালে ভুল হয়েছে তার? উত্তর: কর্ম সংস্থান সঙ্কট, অর্থনীতির নি¤œগতি, এবং ভারতের দিকে ঝুঁকে থাকা সত্ত্বেও চীনা ঋণ নেয়ার প্রবণতা।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এমনিতেই একটি কঠিন সময় পার করছে। দেশ তার মানবসম্পদ দক্ষতার দিক থেকেও তুলনামূলক অন্যান্য দেশগুলোর থেকে পিছিয়ে রয়েছে, যা এর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার যোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এদিকে, প্রতি বছর বাংলাদেশের চাকরির বাজারে ২০ লাখেরও বেশি তরুণ ভাগ্য অন্বেষণ করেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৬লাখ ৫০হাজার ¯œাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, মেধার অপচয় বিশ্বের সপ্তম জনবহুল দেশে কর্মসংস্থান সঙ্কটের তীব্রতাকে চিহ্নিত করেছে।
যদিও প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশকে চীনের বিকল্প হিসেবে দেখে, কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বাংলাদেশী তারুণ্য উপযুক্ত চাকরির অভাবে হতাশায় ভুগছে। এর মধ্যে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি আচরণটিও হয়েছে শেখ হাসিনার ভুল।
হাসিনা, যিনি প্রতিবেশী অঞ্চলে নির্দ্বিধায় ভারতের সেরা বন্ধু, অনেক সমালোচক বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তার ভারতকে পাশ কাটিয়ে চীনে নিষ্প্রভ সফরকে দায়ী করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ১শ’ ৯৬ সদস্যের একটি বিশাল প্রতিনিধি দল নিয়ে চীনে গিয়েছিলেন। কিন্তু, সফর থেকে তড়িঘড়ি দেশে ফিরতে হয়েছে তাকে।
এটি উল্লেখ্য যে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চীন ও ভারত উভয়ের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে উত্তপ্ত ভূমি হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলে ভারত-চীন-পাকিস্তান ত্রিভুজ সবচেয়ে অস্থিরতাপূর্ণ এবং বিপজ্জনক কৌশলগত গঠনগুলির মধ্যে একটি। এবং এখানে, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানকে বলা হয় ভারতকে আলিঙ্গন করে থাকা মৃত্যুর ত্রিভুজ। এই পটভূমিতে, বেইজিং বছরের পর বছর ধরে ঢাকার শীর্ষ ব্যবসায়িক অংশীদার হওয়ার জন্য নয়াদিল্লির সাথে প্রতিযোগিতা করে আসছে।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, ঋণ কর্মসূচিতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চীনের বর্তমান অনাগ্রহের পেছনে রয়েছে ভারতের প্রতি হাসিনার অতিরিক্ত ভক্তি। ভয়ঙ্কর কর্মসংস্থান সঙ্কট এবং ভঙ্গুর অর্থনীতির মধ্যে অনেক বাংলাদেশীরা মনে করছেন যে, এটি এখন সীমা অতিক্রম করেছে এবং এই রোষ শীঘ্র স্তিমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এই সঙ্কটের মধ্যে আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে ইন্ধন জোগানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এই প্রথমবারের মতো তিনি দেশে চলমান অস্থিরতার মধ্যে ওয়াশিংটনকে সরাসরি উল্লেখ করেছেন।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, শেখ হাসিনা জেষ্ঠ্য গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের বলেছেন যে, তিনি এমন পরিস্থিতি প্রত্যাশা করছিলেন, যা স্পষ্টটই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর পদক্ষেপ নিয়ে ক্রমবর্ধমান পশ্চিমা চাপের ইঙ্গিত।
এছাড়া, এটা গুরুত্বপূর্ণ যে বিরোধী দল বিএনপিকে শেখ হাসিনার সরকার মার্কিন স্বার্থের প্রতিনিধি হিসেবে দেখে। সবকিছু মিলিয়ে, এরপর কী হবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। কারণ এই মুহুর্তে আরও কোনো গণবিক্ষোভ তার পক্ষে হজম করা অসম্ভব।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিরলে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কর্তৃক বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিল উদ্ধার
বিএসএফের হাতে আটক যুবক ফেরত আনলো বিজিবি
নিজেকে আ.লীগের চক্রান্তের শিকার দাবি এনবিআরের সেই মতিউরের
হিলিতে দিনব্যাপী ৪৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ
মহিলাদের জন্য সংসদে কোন সংরক্ষিত আসন চাই না : মুফতি ফয়জুল করীম
কারামুক্ত ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীন
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী তারুণ্য উৎসব উদযাপন
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
আটঘরিয়ায় মসজিদের মাইক চুরি
রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বে কমিশন গঠন
শায়খ ফুলতলী আমাদের বেহেশতের পথ দেখিয়েছেন: দামেস্কের শায়খ সাইয়্যিদ ফাদি জু’বা
সৈয়দপুরে নববধূ মুক্তার হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
ইভটিজিংয়ের জেরে ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ খ্যাত কিশোরীর আত্মহত্যা
গাজীপুরে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ: ৩ এসআই ক্লোজ, ওসি তদন্ত বদলি