ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের উদ্যোগ জার্মানিতে

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০১ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৯ এএম | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৯ এএম

শিল্পোন্নত বিশ্বে ইলেকট্রিক যানের ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু এমন গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাটারির কাঁচামালের চাহিদা পূরণ করা সহজ নয়। ফলে জার্মানিতে ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের বিশাল উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

 

জরুরি অবস্থায় বিদ্যুৎচালিত যানের ব্যাটারি যত দ্রুত সম্ভব পানিতে ফেলে দেওয়া উচিত। সেই ব্যাটারি রিসাইকেল করতে গেলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশাল বিধি মেনে চলতে হয়। এমন গুদাম কয়েক মিনিটের মধ্যে ফেনায় ডুবিয়ে দিতে হবে। ইলেকট্রিক ভেহিকেল ব্যাটারি অত্যন্ত দাহ্য এবং বিস্ফোরক।

 

রিসাইকেলের প্রথম কোম্পানি বিশাল মুনাফা করেছে। কারণ, ব্যাটারির মধ্যে কোবাল্ট ও নিকেলের মতো মূল্যবান ধাতু রয়েছে। ইএমআর কোম্পানির প্রতিনিধি মুরাত বায়রামের মতে, ‘‘২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানির রাজপথে দেড় কোটি ইলেকট্রিক যান নামবে বলে আমরা মনে করি। অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে ২০৩০ সাল আগামী পরশুর মতো।''

 

কয়েক মাস আগে ইউরোপে ইলেকট্রিক যানের সবচেয়ে বড় রিসাইক্লিং কারখানা খোলা হয়েছে। মুরাত বলেন, ‘‘আমরা জার্মানির সবচেয়ে দামী ফ্যাক্টরি ফ্লোরের একটির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি। নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেই অর্থ সাশ্রয় হয় না। এই ফ্লোর সম্পূর্ণ পানি-নিরোধক, কয়েক মিটার পুরু এবং সেখানে এমন সেন্সর রয়েছে, যে কোনো পদার্থ মাটিতে প্রবেশ করলেই যা অবিলম্বে আমাদের জানিয়ে দেবে।''

 

এই সব ব্যাটারিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় গাড়ির কারখানা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু খুব কম ব্যাটারিই এখানে আসে। রিসাইক্লিং প্লান্টের প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার লার্স মুন্ডিন বলেন, ‘‘আমরা মূলত নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা ও কার্যকর করি এবং নিজেরাই ব্যবহার করি। আমরা শিক্ষাকে যতটা সম্ভব গুরুত্ব দেই। পুরানো ব্যাটারি বেরিয়ে এলে এবং আচমকা বেশি পরিমাণে এসে পড়লে প্রস্তুত থাকতে চাই।''

 

কয়েক বছরের মধ্যে প্রথম প্রজন্মের ইলেকট্রিক যানগুলির ব্যটারি বাতিল হওয়ার পরই বিশাল পরিমাণে রিসাইক্লিং শুরু হবে। তখন বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি তথাকথিত ‘ব্ল্যাক মাস' ও সেগুলির মধ্যেকার ধাতু উদ্ধার করার উদ্যোগ নেবে। লার্স মুন্ডিন বলেন, ‘‘সবচেয়ে দামী ধাতু হিসেবে ৯৫ শতাংশ নিকেল, সেইসঙ্গে অবশ্যই অ্যালুমুনিয়াম ও তামা উদ্ধার করাই আমাদের লক্ষ্য।''

 

গোটা বিশ্ব ইলেকট্রিক যানের দিকে ঝুঁকছে এবং ব্যাটারির জন্য এই ধাতুগুলির চাহিদা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যাবে। রিসাইক্লিং করতে পারলে প্রস্তুতকারকদের এমন খনির উপর নির্ভরতা কমবে, যেখানে কাজের পরিবেশ খুবই খারাপ। মুরাত বায়রাম মনে করেন, কোম্পানিগুলি এখনো কাচামালের ক্ষেত্রে অন্য দেশের উপর অতিরিক্ত মাত্রায় নির্ভরশীল।

 

জার্মানির রিসাইক্লিং প্লান্টে উদ্ধার হওয়া উপাদান ইউরোপের উত্তরে এক পাইলট প্লান্টে জমা হয়। ব্যাটারি শ্রেডিং করে এক রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘ব্ল্যাক মাস' নামে পরিচিত অবস্থায় রূপান্তরিত করা হয়। একেই রিসাইক্লিং শিল্পের কালো সোনা বলা হয়। সেই মিশ্রণ থেকে নিকেল, ম্যাংগানিজ ও কোবল্টের সবুজ এক তাল বার করা যায়, যা সেভাবেই নতুন ব্যাটারিতে কাজে লাগানো যায়। কিন্তু সেটির মূল্য কি ন্যায্য? লার্স মুন্ডিন বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে সঠিক মূল্য বলা কঠিন, কারণ এই ব্যবসা এখনো গড়ে তোলা হচ্ছে। তাছাড়া বিশ্ব বাজারে মূল্য অনেক ওঠানামা করে। ফলে হিসেব করা কঠিন।''

 

কাজ একবার শুরু হলে প্রক্রিয়ার একটা বড় অংশ স্বয়ংক্রিয় করে তোলা হবে। কিন্তু রিসাইক্লিং-এর হার বাড়াতে ব্যাটারাগুলি আরো উন্নত করা প্রয়োজন। মুরাত বায়রাম বলেন, ‘‘গাড়ির ব্যাটারির প্রসঙ্গে বলতে হয়, আমরা স্পষ্ট দেখছি যে জার্মান গাড়ি কোম্পানিগুলি আরো বেশি করে রিসাইক্লিং-এর কথা ভেবে পণ্য ডিজাইন করছে। তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চাইছে, কারণ তারাও আমাদের মতোই কাচামাল পেতে আগ্রহী। তারাও চক্র পূর্ণ করতে চায়।''

 

অ্যালুমুনিয়ামের মতো উচ্চ রিসাইক্লিং হার নিশ্চিত করতে পারলে আরেকটি সুবিধাও পাওয়া যাবে। শেষ পর্যন্ত জলবায়ুর জন্যও এই উদ্যোগ ইতিবাচক হবে। এই রিসাইক্লিং প্ল্যান্টের পরিচালনকারীরা কোটি কোটি ইউরো বিনিয়োগ করেছেন। এই উদ্যোগ নিরাপদ হবে বলেই তাঁরা আশা করছেন। সূত্র: ডয়চে ভেলে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত
শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের
বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করলেই সফল হবে জাতিসংঘ
এলোপাতাড়ি গোলাবর্ষণে ১২০ নিহত সুদানে
ভারতীয়দের ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ সউদীর
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত