ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

ইরাকে পারিবারিক আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ, নারী অধিকার কমার শঙ্কা

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৭ আগস্ট ২০২৪, ০৩:০৫ পিএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০৩:০৫ পিএম

 

গোটা মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ইরাকের পারিবারিক আইনকে সবচেয়ে উদার বলে ধরে নেয়া হয়। তবে এই আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। এর ফলে বাল্য বিবাহ বেড়ে যাওয়া ও নারী অধিকার কমার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে চলছে প্রতিবাদ, সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক।

 

‘এটাই বাগদাদ’, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী আলি আল মুকদাম ইরাকের রাজধানীতে হওয়া প্রতিবাদের ছবি দিয়ে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ এমনটাই লিখেছেন। সপ্তাহান্তের এই প্রতিবাদে প্রায় ৫০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। তিনি আরো লিখেছেন, ‘ইরাকের রাজধানী কখনও কান্দাহার ছিল না, হবেও না।’ আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই কথা বলেছেন তিনি।

 

ইরাকের পার্সোনাল স্ট্যাটাস আইন বা পারিবারিক আইনের মাধ্যমে বিয়ে, বিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব ও উত্তরাধিকারের মতো ইস্যুগুলো নির্ধারিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এই বিষয়গুলোকে ধর্মীয়ভাবে সামলানো হলেও ইরাকে তা ১৯৫৯ সালে পাস হওয়া ১৮৮ নং আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। সুন্নি ও শিয়া মুসলিম আদালতের পরিবর্তে সিভিল জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

তবে বর্তমানে রক্ষণশীল শিয়া মুসলিম দলের সঙ্গে যুক্ত রাজনীতিবিদেরা এর পরিবর্তন ঘটাতে চান। ৪ আগস্ট তাদের আনা এই আইনের সংস্কার পার্লামেন্টে পেশ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে দেশটির মানধিকারকর্মী ও রাজনীতিবিদেরা ‘জোট ১৮৮' গঠন করেছে। তারাই সপ্তাহান্তের বিক্ষোভের আয়োজন করেছে।

 

বিক্ষোভে অংশ নেয়া স্থানীয় এক ব্যক্তি ডি-ডাব্লিউকে বলেন, ‘‘আমাদের যে আইন এখন রয়েছে তা ভালোর জন্য পরিবর্তিত হতে পারে, খারাপ কিছুর জন্য নয়। আমরা পেছনের দিকে যেতে পারি না।'' রাশা নামের ৫৩ বছরের ঐ ব্যক্তি নিপীড়নের ভয়ে তার পুরো নাম প্রকাশ করতে চাননি। ইরাকের শহর নাজাফে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রাশা বলেন, ‘‘আমার মতে তারা নারী অধিকারকে ঘৃণা করে, আর এ কারণেই তারা আইনের পরিবর্তন চায়।''

 

কী পরিবর্তন

 

নতুন আইন অনুযায়ী ব্যক্তির বিয়ে সিভিল আদালত নাকি ধর্মীয় আদালতে নিবন্ধিত হবে তা বেছে নিতে পারবেন দম্পতিরা। যারা পরিবর্তনের পক্ষে তাদের দাবি ইরাকে বিয়ে মূলত ধর্মীয়ভাবেই হয়। তা আইন মোতাবেক না হলেও সামাজিকভাবে ন্যায়সঙ্গত বলেই বিবেচিত হয়। তাদের দাবি আইনের সংস্কারটি এই বাস্তবতার নিরিখেই করা হচ্ছে।

 

কিন্তু বিরোধীদের দাবি আইনি ব্যবস্থা বেছে নেয়ার মধ্য দিয়ে ইসলামিক আইনের ক্ষতিকর ব্যাখ্যার সুযোগ তৈরি হবে। যেমন, বর্তমান আইনে বিয়ের আইনি বয়স ১৮ হলেও ধর্ম অনুসারে নয় বছরের শিশুকেও বিয়ে দেয়া যেতে পারে। জাতিসংঘের হিসাবে, এরই মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সে বিয়ের হার এক তৃতীয়াংশ। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে অনিবন্ধিত বিয়ের কারণে শিশুদের বিয়ে এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

 

আইনের পরিবর্তন হলে নারী অধিকারের দিক থেকে দেশটি পিছিয়ে পড়বে বলেও মনে করেন বিরোধীরা। এর ফলে ইরাকের সমাজ আরো বিভক্ত হয়ে পড়বে বলেও তাদের আশঙ্কা। বর্তমান আইনটি সব ইরাকির উপর সমানভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু সংশোধনীটি পাস হলে সমাজে সংঘাত তৈরি হবে এবং ইরাকের আইনি ব্যবস্থাও এতে ভেঙে পড়বে বলে মনে করেন তারা।

 

আইন পাসের সম্ভাবনা কতটা

 

ইরাকের পারিবারি আইন এর আগেও পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ২০০৩, ২০০৫, ২০১৪ ও ২০১৭ সালে তা ব্যর্থ হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সংসদের বিরোধী দলগুলির মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে এবার তা পাস হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

 

শেষবার যখন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তখন সুন্নি রাজনীতিকেরা আইন পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছিলেন। বর্তমানে পৃথক আরেকটি বিল পাসের প্রস্তাব রয়েছে তাদের, যার মাধ্যমে চরমপন্থি ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস গ্রুপের সাবেক সদস্যদের ক্ষমা করার সুযোগ তৈরি হবে। এর আগে শিয়া মুসলিম রাজনীতিকেরা এর বিরোধিতা করেছিল। তারা উভয়ই এখন একে অপরের আনা বিল সমর্থন করার সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে।

 

ব্রিটিশ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের ইরাক ইনিশিয়েটিভের প্রকল্প পরিচালক রেনাদ মনসুর বলেন, ‘অতীতে জ্যেষ্ঠ নেতারা এটিকে পর্দার আড়ালে ঠেলে দিতে পেরেছেন। এখন এটি পাস হবে কিনা তা বলা কঠিন, তবে তা আগের চেয়ে পাসের অনেক কাছাকাছি রয়েছে।’

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল
যে সব শর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত
শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের
বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করলেই সফল হবে জাতিসংঘ
আরও

আরও পড়ুন

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরও গাজায় হামলা ইসরাইলের, নিহত অন্তত ৩০

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরও গাজায় হামলা ইসরাইলের, নিহত অন্তত ৩০

জুলাই ঘোষণা : কারা যাচ্ছেন আজকের বৈঠকে

জুলাই ঘোষণা : কারা যাচ্ছেন আজকের বৈঠকে

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল

যে সব শর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি

যে সব শর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি

এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

নোয়াখালীর সদর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু আটক

নোয়াখালীর সদর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু আটক

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ