চিকিৎসা-ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলছে বর্ণের তারতম্য
১৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৯ এএম | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৯ এএম
অনেক ক্ষেত্রে মানুষ বর্ণ ও জাতিভেদের শিকার হয়। কিন্তু চিকিৎসার ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য ইচ্ছাকৃত না হলেও তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। বার্লিনের দুই বিশেষজ্ঞ বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
আজকের যুগেও চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ মানুষদের মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়। ফলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ে। এমারজেন্সির সময়ে দেখা যায়, কোনো রোগীর ঠোঁট নীল হয়ে গেছে। অথবা লাল ছোপ বা ফুসকুড়ি প্রদাহের লক্ষণ হতে পারে। যেমন বার্লিনের শারিটে হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড. এফসোনা শেনকোরু মনে করেন, কৃষ্ণাঙ্গ রোগীদের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বেশি ত্রুটি দেখা গেছে।
কিন্তু কালো ত্বকের মানুষের ক্ষেত্রে এমন লক্ষণ শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। কারণ, সে ক্ষেত্রে ঠোঁটের রং ও ত্বকের অবস্থা বোঝা সহজ নয়। ড. শেনকোরু নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘‘আমি কোনো এমার্জেন্সি রুমে থাকলে শুধু শেখানো বিষয় বা লক্ষণের সন্ধান করতে পারি। ফলে পরিণতি হিসেবে আমি ভুল করতে পারি, কঠিন রোগের ক্ষেত্রেও হয়তো গুরুত্ব না বুঝতে পারি। এর অর্থ, আমি হয়তো চিকিৎসার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবো না।''
ড. শেনকোরু সেই অবস্থা বদলাতে চান। তিনি চর্মরোগ-বিদ্যার ক্ষেত্রে ত্বকের রংয়ের বিশেষজ্ঞ। তাঁর মতে, ‘‘আমার সময়কার টেক্সট বইয়ের দিকে তাকালে উজ্জ্বল বর্ণের প্রতিনিধিত্ব চোখে পড়বে।''
তিনি বার্লিনের শারিটে হাসপাতালে কাজ করেন। জালিদ সেহুলিও সেখানে কর্মরত। তিনি চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বহুকাল সোচ্চার রয়েছেন। জালিদ মনে করেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা প্রিন্ট মিডিয়ার দিকে নজর দিলে লক্ষ্য করবেন যে, তারা খুব ঘনঘন বাঁধাধরা উপকরণ ব্যবহার করে। যে কোনো সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রেও সেটা দেখা যায়।''
যেমন মাংকি পক্সের মতো রোগ প্রায়ই কালো ত্বকের উপর দেখানো হয়। এমনকি ২০২২ সালে সেই ভাইরাস গোটা বিশ্ব, বিশেষ করে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক শ্বেতাঙ্গ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লেও সেই মনোভাবে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
ডেনমার্কে এক ল্যাবে বানরের মধ্যে সেই ভাইরাস প্রথম আবিষ্কৃত হওয়ায় সেটির নাম মাংকি পক্স রাখা হয়েছিল। করোনা ভাইরাসের মতো সেটিও পশু থেকে অন্য পশু বা মানুষের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। তবে বানর নয়, ইঁদুর জাতীয় প্রাণীই সেই সংক্রমণ ঘটায় বলে জানা গেছে। আফ্রিকার পশ্চিম ও মধ্যভাগে সেই ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও সেটি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক শ্বেতাঙ্গ মানুষও আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু মিডিয়ায় মূলত কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের ছবি দেখা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাংকি পক্স নামকরণের মধ্যে বর্ণবাদী এবং কলঙ্কজনক প্রবণতার পরিচয় রয়েছে।
বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ মানুষের মনে বানর, পক্স ও আফ্রিকাকে সমান চোখে দেখার বাঁধাধরা এক ধারণা কাজ করে। শ্বেতাঙ্গ মানুষের চোখে সেই রোগ ‘অন্যদের' আক্রান্ত করে বলে যে ধারণা চালু আছে, গবেষণার ক্ষেত্রে সেটাকে ‘আদারিং' বলা হয়। ডাব্লিউএইচও এখন সেই রোগকে ‘এম পক্স' হিসেবে বর্ণনা করার পরামর্শ দিচ্ছে। জালিদ সেহুলি বলেন, ‘‘ভিজিবিলিটির ক্ষমতা কম নয়, কারণ আমরা অনেক কিছু ছবি ও চাক্ষুস অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অবচেতনেই শিখি।''
জালিদ হাসপাতালে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, রোগীরা জার্মান না বুঝলে প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝি ও বৈষম্য দেখা যায়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দোভাষীও সব সময়ে পাওয়া যায় না। ফলে অতি কম তথ্যের ভিত্তিতে ভুল চিকিৎসা হয়। যেন কী ঘটছে, রোগীরা তা না বুঝলেও কিছুই এসে যায় না।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে এফসোনা শেনকোরু ব্যক্তিগত উদ্যোগে সোশাল মিডিয়ায় ‘পিপল অফ কালার' বা ভিন্ন বর্ণের মানুষের জন্য তথ্য দেন। হাসপাতালেও তিনি এখন ‘স্কিন অফ কালার ডার্মাটোলজি' বিষয়ে পরামর্শ দেন।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত