ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

ইরানি ড্রোনের জনপ্রিয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২০ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৭ এএম | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৭ এএম

আমেরিকান একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থিঙ্কট্যাঙ্কের মতে, ইরানি ড্রোনগুলো ইউক্রেন ও ইসরাইলকে ছাড়িয়ে গেছে এবং কমপক্ষে আরও দুটি মহাদেশে ইরানি ড্রোনের জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা গেছে।

 

সম্প্রতি, আমেরিকান ফাউন্ডেশন "ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসি" ইরানি অস্ত্রের ব্যাপরে বৈশ্বিক আগ্রহ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদনে বলেছেন: যদিও বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরান ও তার প্রক্সি যোদ্ধাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা প্রতিরোধ বা হামলার মাত্রা সীমিত করার জন্য ব্যাপক চেষ্টা করছে, কিন্তু আমাদের এটা মনে রাখতে হবে, মধ্যপ্রাচ্য এখন ইরানি অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রে ভরপুর। পার্স টুডে এবং ইরনা জানিয়েছে, আমেরিকান ফাউন্ডেশন " ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসি" এই প্রতিবেদনে লেবাননে ইরানের ড্রোনসহ আরো কিছু অস্ত্রের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেছে যে, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ গোষ্ঠীও প্রথম ঐতিহাসিক দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে। এতে একজন নিহত হয়েছিল। ইরানের তৈরি এ ড্রোন ২৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে করতে সক্ষম হয়েছিল।

 

এই আমেরিকান থিঙ্কট্যাঙ্কের বিশ্লেষণ অনুসারে, এগুলোই কেবল বর্তমান উদ্বেগজনক বিষয় নয় বরং ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান তাদের পক্ষে একটি অনুকূল আন্তর্জাতিক পরিবেশের সুযোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা এবং সামরিক অস্ত্র সরবরাহকারী হয়ে উঠছে।

 

এই থিঙ্কট্যাঙ্কের গবেষণা অনুসারে,ইরানের যেসব সুবিধাজনক দিক রয়েছে তার মধ্যে একটি হল যুদ্ধক্ষেত্রে তেহরানের স্বল্প খরচের ড্রোন ব্যবহার যা খুবই কার্যকর। উদাহরণ স্বরূপ, শহীদ-১৩৬ মডেলের ড্রোনের কথা বলা যায় যা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে মস্কো ৪৬০০টি এই ধরনের ড্রোন ব্যবহার করেছে। এই একই ড্রোন যা তেলআবিবের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে।

 

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: ইরানি ড্রোনগুলোর কার্যকারিতা ইউক্রেন এবং ইসরাইলকে ছাড়িয়ে গেছে এবং কমপক্ষে আরও দুটি মহাদেশে এর ব্যাপক চাহিদা দেখা গেছে। এভাবে ইরানি অস্ত্রের ব্যবহার থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সামরিক শক্তি অর্জনে ইরানের সাফল্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। তেহরান ভেনিজুয়েলাকে দেশীয় ড্রোন তৈরিতে সহায়তা করছে। এ ছাড়া ইরান ল্যাটিন আমেরিকার অন্য দেশগুলোকেও স্থানীয়ভাবে যেসব ড্রোন তৈরিতে সহযোগিতা করছে তার সথে ইরানের মোহাজের-টু ড্রোন ও শহিদ-১৭১ ড্রোনের মিল রয়েছে। ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনীও ইরানের মোহাজের-৬ ড্রোন ব্যবহার করছে। সুদানও ইরানি ড্রোন ব্যবহার করছে। একই ইরানি ড্রোন সুদানী সশস্ত্র বাহিনীকে হানাদার বাহিনীর হামলা ঠেকাতে এবং কিছু অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করেছে। এ কারণে, ইরান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে ৫০ কোটি ডলার মূল্যে অস্ত্র চুক্তিতে ড্রোন অন্তর্ভুক্ত হলে এতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

 

ইরানবিরোধী এই মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক একটি অভ্যন্তরীণ সংবাদ সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে যে "তেহরান ২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ড্রোন বাজারে তুরস্কের জায়গা দখলের পরিকল্পনা করেছে।"

 

প্রতিবেদনের অন্য একটি অংশে এই থিঙ্কট্যাঙ্কের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে শক্তিশালী উপস্থিতি বিশ্বের কাছে ইরানের সামরিক সক্ষমতা পরিচয় করিয়ে দেয়ার বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে। ২০২৪ সালে মালয়েশিয়া, কাতার ও ইরাকে আয়োজিত প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে ইরান তার সমরাস্ত্র প্রদর্শন করে এবং সউদী আরবেও সামরিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য একটি দল পাঠায়। মস্কো এবং বেলগ্রেড অস্ত্র প্রদর্শনীতেও ইরানি অস্ত্র নির্মাতারা অংশগ্রহণ করেছিল।

 

এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে, আমেরিকান এবং ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা ব্যতীত ইরান বৈশ্বিক অস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয় না। কারণ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী যথাক্রমে ২০২০ সালের অক্টোবর এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর ইরানের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং ২০১৫ সালে পারমাণবিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

 

আমেরিকান ফাউন্ডেশন "ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসিস" এই প্রতিবেদনে দাবি করেছে: বিশ্বব্যাপী ইরানের অস্ত্রের ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণের কারণে এই দেশটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী একটি সদস্য দেশ যখন ইরানি ড্রোন থেকে উপকৃত হচ্ছে এবং শীঘ্রই ইরানের তৈরি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও পেতে যাচ্ছে তখন নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের অস্ত্র রপ্তানির বিরুদ্ধে নতুন প্রস্তাব অনুমোদন করা অসম্ভব হবে।

 

এই প্রতিবেদনের লেখকরা, তেহরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর এবং একতরফা পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে পরামর্শ দিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের উচিত ইরানের ড্রোন বা অন্যান্য অস্ত্র উত্পাদন এবং মজুদের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক পদক্ষেপ নেয়া যাতে ইরানের সরবরাহ খাতকে ব্যাহত করা যায়।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত
শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের
বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করলেই সফল হবে জাতিসংঘ
এলোপাতাড়ি গোলাবর্ষণে ১২০ নিহত সুদানে
ভারতীয়দের ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ সউদীর
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত