বিজেপি মাঠে নামায় মমতার কি লাভ হলো?
২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৭:২১ পিএম | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৭:২১ পিএম
কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রথমে সাধারণ নাগরিকরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন। তাদের নেতৃত্বে কোনও রাজনৈতিক দল ছিল না, তাই কীভাবে তাদের মোকাবেলা করা হবে, তা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা ব্যানার্জীর সরকার চিন্তায় ছিল।
তবে সম্প্রতি প্রধান বিরোধী দল বিজেপি সরাসরি ওই ঘটনার প্রতিবাদে নেমে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছে। চেনা-জানা রাজনৈতিক বিরোধীদের মোকাবেলা সরকার আর ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে সুবিধাজনক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ‘স্কুলের বাচ্চাগুলো পর্যন্ত রাস্তায় নেমে গেছে, বৃষ্টিতে ভিজে প্রতিবাদ মিছিল করছে,’ কলকাতার একটি স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তনদের মিছিল দেখতে দেখতে মন্তব্য করছিলেন এক পথচারী।
কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে নেমেছিলেন ওই স্কুলটির ছাত্র-ছাত্রী ও প্রাক্তনরা। ওই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর থেকে দুই সপ্তাহের বেশি হয়ে গেল, প্রতিদিনই একাধিক ছোট বড় মিছিল-জমায়েত হচ্ছে কলকাতা বা শহরতলির রাস্তায়।
এইসব মিছিল-জমায়েতের জন্য নিয়মিতই যানজট লেগে থাকছে। তবে ওই যানজটে দীর্ঘক্ষণ আটকে পড়া কাউকেই বিশেষ বিরক্ত হতে দেখা যাচ্ছে না, যেটা সবসময়েই রাজনৈতিক মিছিল-জমায়েতের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়। চায়ের দোকানে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে দুই বন্ধুর মধ্যে আলোচনা কানে এল – ‘এটা কোথায় গিয়ে থামবে বোঝা যাচ্ছে না।’ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও সম্ভবত বুঝতে পারছিল না সাধারণ মানুষের এই প্রতিবাদ কোথায় গিয়ে থামবে।
আরজি কর হাসপাতালের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বিচার চেয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংগঠন প্রতিবাদে নামলেও সিংহভাগ প্রতিবাদ মিছিলের সংগঠক বা যোগদানকারীরা একেবারেই সাধারণ নাগরিক। তবে প্রথমদিকের ওই প্রতিবাদ মিছিলগুলিতে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা যে অংশ নেননি, তা নয়। এমনকি রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-নেত্রী ঘোষণা করেই মিছিলগুলিতে যোগ দিয়েছিলেন - বিশেষত ১৪ অগাস্টের 'রাতের রাস্তা দখল' কর্মসূচিতে।
ছিলেন অন্যান্য দলের নেতা-নেত্রীরাও। কিন্তু কারও গলায় সেদিন কোনও দলীয় স্লোগান শোনা যায়নি, দেখা যায়নি কোনও দলের পতাকাও। এরকম একাধিক মিছিল-জমায়েতে যোগ দিচ্ছেন বছর পঁচিশেকের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সির ছাত্র অঙ্কুশ পাত্র।
তিনি বলছিলেন, “অনেক স্কুল-কলেজের মিছিলেই দেখছি সাধারণভাবে একটা আবেদন থাকছে যে দলবিহীন, দলীয় পতাকা-বিহীনভাবে প্রতিবাদে শামিল হওয়ার কথা। তাদের নিজেদের মধ্যে হয়তো ডিবেট হচ্ছে, মতানৈক্য হচ্ছে, তবে যখন তারা পথে নামছেন, সেখানে কেউ কিন্তু কোনও দলের কথা বলছেন না বা দলীয় প্রভাব থাকছে না।” “তাদের গলায় মূলত যে স্লোগান শোনা যাচ্ছে, তা হলো ‘বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’,” বলছিলেন পাত্র।
পথে নামতে দেখা যাচ্ছে এমন বহু নারী-পুরুষকে, যাদের কাছে রাস্তায় নেমে কোনও ঘটনার প্রতিবাদ এই প্রথম। অঙ্কুশ পাত্রর কথায়, “আবার যখন প্রধান বিরোধী দলকে প্রতিবাদে নামতে দেখা যাচ্ছে, সেটা দেখে অনেক সাধারণ নাগরিক কিন্তু প্রতিবাদ থেকে শারীরিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, মানসিক সমর্থন থাকবে এই ইস্যুর প্রতি কিন্তু রাজনীতি যখন ঢুকে পড়েছে তখন আর সরাসরি সামনে আসব না আমরা। এই দুই ধরনের আখ্যানই আমি দেখতে পাচ্ছি।”
পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের নাগরিক-প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে দীর্ঘদিন পরে। এর আগে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে কিছুটা এ ধরনের নাগরিক প্রতিবাদ দেখা গিয়েছিল। তবে সেটি ছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের নীতির বিরুদ্ধে। আর এবারের প্রতিবাদ যেমন হচ্ছে বিচারের দাবিতে, তেমনই উঠে আসছে সমাজে পুঞ্জীভূত ক্ষোভও।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভাশিস মৈত্র বলছিলেন এই সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ক্ষমতাসীন দল এবং সরকারের কাছে অভিনব। তার কথায়, “এর একটা কারণ হলো এই প্রতিবাদীরা একেবারেই অচেনা-অজানা। কীভাবে এদের মোকাবেলা করা হবে, সেটা ক্ষমতাসীন দল বা সরকার জানে না।”
“সাধারণ নাগরিকদের প্রতিবাদ- যেটা শুরু হয়েছিল ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হওয়া এক নারীর বিচারের দাবিতে, বৃহত্তর প্রেক্ষিতে নারী-সুরক্ষার দাবিতে। রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি সেভাবে সরাসরি এই আন্দোলনে ছিল না গোড়ার দিকে। তারা দেখলো যে পতাকা-ছাড়া কোনও প্রতিবাদে তো ব্যাপক সাড়া পড়ছে, তাই এখন বিজেপি নেমে পড়লো নবান্ন ঘেরাও বা বনধ ইত্যাদিতে। সেটা আদৌ সাড়া ফেলেছে কি না, তা ভিন্ন প্রসঙ্গ, কিন্তু বিজেপির আন্দোলন মোকাবেলা করা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে অনেক সুবিধাজনক। কারণ এটা দুপক্ষের কাছেই চেনা রাজনৈতিক ময়দান, চেনা প্রতিপক্ষ,” বলছিলেন মৈত্র।
‘আমাদের তো একটাই চাওয়া– বিচার’
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে নেমে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুলেছে। আর এই দাবি ওঠার পরেই তৃণমূল কংগ্রেস টেনে আনছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে ঘটে যাওয়া নৃশংস ধর্ষণ-হত্যার নানা ঘটনার কথা।
যখন আরজি করের ঘটনার বিচার এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছে বিরোধী দল, তখন ক্ষমতাসীন দল নিজেরাও দোষীদের ফাঁসি চাইছে। এই রাজনৈতিক দাবি-পাল্টা দাবিতে কেউ কেউ মনে করছেন ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হওয়া তরুণী চিকিৎসকের বিচারের দাবিটা কিছুটা লঘু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গত প্রায় কুড়ি দিন ধরে নানা প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছেন কলকাতার পেশাজীবী সুজাতা ঘোষ। তিনি বলছিলেন, “আমাদের তো একটাই চাওয়া – বিচার। ওই তরুণী চিকিৎসক যেন বিচার পায়। তবে এখন যা দেখছি, ব্যাপারটার মধ্যে বিজেপি চলে আসায় বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে ঘটে যাওয়া একই ধরনের নৃশংস ধর্ষণ-হত্যার প্রসঙ্গ টেনে আনছে তৃণমূল কংগ্রেস।”
“হাথরাস-উন্নাও বা কাঠুয়ার ঘটনাগুলো কোনও অংশেই কম নৃশংস ছিল না। কিন্তু বিষয়টাতে রাজনৈতিক দলগুলো চলে আসার ফলে আমাদের মেয়েটির বিচারের দাবি লঘু হয়ে যাবে না তো? এই প্রশ্নটা আমার বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে শুরু করেছে,” বলছিলেন মিসেস ঘোষ।
তার কথায়, “ওই ১৪ অগাস্ট রাতে যেভাবে সব রাস্তায় শুধু কালো মাথা দেখা গিয়েছিল, সেরকমই যদি করে দেওয়া যেত, তাহলে মনে হয় রাজনৈতিক দলগুলো এই নৃশংস ঘটনা নিয়ে তাদের পরিচিত তরজা করতে পারত না। তারা এটা টের পেত যে সাধারণ মানুষ আসলে যে শুধুই বিচার চায়। একজন মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগটা তো দাবি নয়!”
বিশ্লেষক শুভাশিস মৈত্র বলছিলেন, “এই প্রতিবাদ আন্দোলনে নারীরা যে বিচারের দাবি তুলেছিলেন, তার সঙ্গেই নারীদের নিরাপত্তার দাবিও উঠেছিল। এই নিরাপত্তার সামাজিক দাবিটা আবার বহুমাত্রিক ছিল। এখন রাজনৈতিক দলগুলো এই আন্দোলনে ঢুকে পড়ার ফলে ওই সামাজিক দাবিগুলো হারিয়ে যাবে কি না, তা সময়ই বলবে।”
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড