পাকিস্তানে পুলিশের হাতে দুই ধর্মদ্রোহীর মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫ পিএম | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫ পিএম
সমাজকর্মীদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ম অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত দুই পুরুষকে পুলিশের হত্যা পাকিস্তানে নতুন করে মানবাধিকারের প্রশ্ন উত্থাপন করছে। ৩২ বছর বয়সি ডাক্তার শাহ নওয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে অপমান ও ধর্মবিরোধী কন্টেন্ট সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করার। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের সিন্ধ অঞ্চলে তাকে গ্রেপ্তার করার সময় বিরোধিতা করলে পুলিশ তাকে গুলি করে।
কিন্তু নওয়াজের পরিবারের মতে, এই অভিযোগ মিথ্যা। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল সে এবং হেফাজতে থাকাকালীন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে তাদের অভিযোগ। কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছিল যে, নওয়াজ আত্মপক্ষের কথা বলার সুযোগ পাবেন, জানায় তার পরিবার। এই নিয়ে একই সপ্তাহে এমন দুটি মৃত্যু হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর বালুচিস্তান অঞ্চলে একই অভিযোগে থানায় আটক থাকা ৫২ বছর বয়সি এক পুরুষকে হত্যা করা হয়।
এই হত্যার নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তানের মানবাধিকার সংগঠন এইচআরসিপি। একটি বিবৃতিতে তারা জানায় যে, ‘‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগ থাকা দুজনের বিচারবহির্ভূত হত্যা বিষয়ে তারা চিন্তিত। ধর্ম অবমাননার ঘটনাগুলিতে যে সহিংসতার ধারা দেখা যাচ্ছে, যেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মীরা অভিযুক্ত, সেটি খুবই উদ্বেগের বিষয়।'' পাকিস্তানে ইসলাম ধর্মের সমালোচনা বা নিন্দা করার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
যদিও আইনের এই ধারায় এখন পর্যন্ত কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি, কিন্তু বেশ কয়েকটি ঘটনায় উত্তেজিত জনতা বিচারের কাজ শুরু হবার আগেই অভিযুক্তকে মেরে ফেলে। গত কয়েক বছরে এমন ঘটনার হারও বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, স্পষ্ট প্রমাণ ছাড়াই শুধু অভিযোগ ওঠার কারণেই প্রাণ হারান অনেকে।
গত বছর পাঞ্জাব রাজ্যে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ থেকে উত্তেজিত জনতা একটি খ্রিষ্টান অধ্যুষিত এলাকায় হামলা করে কয়েকটি গির্জা পুড়িয়ে দেয়। শয়ে শয়ে মানুষ বাসা ছাড়তে বাধ্য হন। স্থানীয় খ্রিষ্টান বাসিন্দাদের মতে, এই ঘটনায় অভিযুক্তদের এখনও বিচার হয়নি। ২০১১ সালে পাকিস্তানে এই আইনের সংশোধনের পক্ষে থাকা পাঞ্জাবের সাবেক গভর্নর সলমান তাসীরকে তার নিজের দেহরক্ষীই খুন করে।
ওয়াশিংটন ডিসির গবেষণা সংস্থা উডরো উইলসন সেন্টার ফর স্কলার্সের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনাগুলি আসলে রাষ্ট্রের সমস্যা সমাধানে অনিচ্ছা বা অপারগতা, সমাজে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় শক্তির গভীর প্রভাবের মিশ্র ফল।''
কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে ব্যক্তিগত ঝগড়া বা ক্ষোভ মেটাতেও অনেকে ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে। পাকিস্তানে সংখ্যালঘু অধিকারকর্মী রুথ স্টিফেনের মতে পাকিস্তানের সরকার ধর্মীয় মৌলবাদীদের সংগঠিত করে ও উৎসাহ দেয়, যাতে করে এই সমস্যা আরো ঘনীভূত হয়।
তার মতে, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের সূত্রপাত হবে, ‘‘১৯৮০ সাল থেকে সামরিক স্বৈরাচারী রাষ্ট্রনেতা জিয়ার আমলে যেভাবে আইন ও আইনি প্রক্রিয়াকে বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে কাটাছেঁড়া করা হয়, তার পর্যালোচনা ও সংস্কার থেকে।''
মানবাধিকার আইনজীবী তাহিরা আবদুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালতে যাবারই দরকার নেই, শুধু গণপরিসরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করলেই হলো। সেটাই উত্তেজিত জনতাকে আরো উসকানি দেবে যাতে তারা আদালতে মামলার অপেক্ষা না করেই অভিযুক্তকে মেরে ফেলে।''
মানবাধিকার কমিশন এইচআরসিপি দাবি জানিয়েছে এই ঘটনাগুলির নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করুক সরকার। কিন্তু কুগেলমানের মতে, ইসলামিস্ট মৌলবাদীরা পাকিস্তানের রাজনীতিতে বহু ক্ষমতার অধিকারী।
তার মতে, ‘‘নাগরিক ও সামরিক নেতৃত্ব কোনোদিনই তাদেরকে রাগাতে চায়নি। পাকিস্তানের ইতিহাসজুড়ে আমরা দেখেছি যে, যারা ধর্ম অবমাননা আইনের ফায়দা লোটে বা যারা এই আইন ভঙ্গকারীদের প্রতি সহিংসতা সমর্থন করে, তাদের বিষয়ে রাষ্ট্র সব সময়েই খুব সাবধানী থেকে এসেছে।''
রুথ স্টিফেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলের উচিত পাকিস্তানকে এবিষয়ে চাপে রাখা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়স ফ্রিডমের মতে পাকিস্তান ধর্ম অবমাননা বিষয়ক আইনের প্রয়োগ বিশ্বে আরো অনেকের চেয়ে বেশি কঠোরভাবে করছে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল নিষেধাজ্ঞার পথ বেছে নেবে না বলে মত কুগেলমানের।
তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সরকারগুলি বারবার এই সমস্যাকে চিহ্নিত করে আসছে। কিন্তু শুধু চিহ্নিত করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, কিন্তু এতে করে অন্তত সমস্যাটি আলোচনায় থাকে, তাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।''
এবিষয়ে আরো যোগ করে তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক চাপ সমাজে বাড়ন্ত মব লিঞ্চিং থামাতে পারবে না, কিন্তু এই ইস্যুকে হারিয়ে যেতেও দেবে না। আর পাকিস্তানি সরকারকে আরেকটি বিষয় চাপে রাখবে। সেটা হলো, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সরকারগুলি, অন্তত পশ্চিমের দেশগুলি, এই বিষয়ে চিন্তিত যে ইসলামাবাদ এর সমাধান করতে চায় না বা করতে পারছে না।''
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি