যুক্তরাষ্ট্র কতটা গণতান্ত্রিক দেশ?
২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪১ পিএম | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪১ পিএম
পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে ৫ নভেম্বরে ভোট দেবেন অ্যামেরিকানরা। আর সেই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থী কিন্তু বিজয়ী নাও হতে পারেন। মার্কিন গণতন্ত্রের আলাদা কিছু দিক রয়েছে, আর সেগুলো নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন।
দীর্ঘদিন ধরে, নিজেদের গণতন্ত্রকে অনুকরণীয় হিসাবে দেখিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে, স্বাধীনতা অর্জনের পরে কিংবা স্বৈরশাসককে সরিয়ে দেয়ার পর গণতন্ত্র পুনর্গঠনে কোনো দেশের জন্য অ্যামেরিকা উদাহরণ হতে পারে। জন এফ কেনেডি থেকে বারাক ওবামা পর্যন্ত সব রাজনীতিবিদেরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি প্রদীপ্ত বাতিঘর হিসাবে তুলে ধরেছেন, সবার নজর কেড়েছেন। ১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে কেনেডি বলেছিলেন, বিশ্ব এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর গণতন্ত্রের দিকে তাকিয়ে আছে এবং ‘‘প্রতিটি শাখায়, প্রতিটি স্তরে, জাতীয়, রাজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের সরকারগুলোকে হতে হবে বাতিঘর বা সিটি আপঅন আ হিল।''
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি সারা বিশ্বের চোখ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। সেদিন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের উসকানিতে ডানপন্থি চরমপন্থিরা ইউএস ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায়। ২০২০ সালের নির্বাচনের পরে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরকে বাধা দেয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। ২০২৩ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় সংবাদ সংস্থা এপির একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ মনে করেন অ্যামেরিকাতে গণতন্ত্র খুব ভালোভাবে চলছে।
তাহলে, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দেশটির গণতন্ত্রের অবস্থা কী?
ম্যাককোর্টনি ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসির ডিরেক্টর এবং পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাইকেল বার্কম্যান ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, এটা বলতেই পারি, অ্যামেরিকানদের এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি খুব বেশি আস্থা নেই।''
তিনি আরো বলেন, ‘‘তারা এমন একটি কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে আছেন, যা মোটেও ঠিক মতো কাজ করছে না এবং তারা এমন কিছু জটিল সমস্যা দেখছেন, যা সরকার আসলেই সমাধান করেনি। যেমন: আগ্নেয়াস্ত্রকেন্দ্রিক সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তন।''
নেতা নির্বাচনে নিজেদের অক্ষমতার কারণে, প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান ২০২৩ সালের অক্টোবরে কয়েক সপ্তাহের জন্য কংগ্রেসকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। কিন্তু এমন বাধা ছাড়াই কংগ্রেসের হাউস বা সিনেট থেকে আইন প্রণয়নের মতো জরুরি বিষয়গুলোও চলছে ধীরগতিতে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের গভর্ন্যান্স স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো ভ্যানেসা উইলিয়ামসন ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘সিংহভাগ জনসমর্থন পেয়েও আইন পাস করা খুব কঠিন, কখনও কখনও অসম্ভব।''
তিনি আরো বলেন, ‘‘ওয়াশিংটনে কাজের ক্ষেত্রে গুরুতর অবহেলা রয়েছে।'' সবশেষ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র। কঠোর মেরুকরণ, ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে এক সাগর দূরত্ব—এর অর্থ হলো, নির্বাচিত সরকারের নেয়া অনেক সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট থাকে গোটা দেশের অর্ধেক।
২০২০ সালের নির্বাচনের ফল নিয়ে ট্রাম্পের নেতৃত্বে অনেক রিপাবলিকান বেশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। তারা দাবি করেছেন, নির্বাচনে তাদের উপেক্ষা করার চেষ্টা হয়েছে। এমনকি, নির্বাচনটি তাদের কাছ থেকে ‘চুরি' করেছে বলেও দাবি ছিল তাদের। ফলে ক্যাপিটল ভবনে আক্রমণ করতেও পিছপা হয়নি তারা। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর গণতন্ত্রণের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন ঘটনার নজির নেই বললেই চলে।
বার্কম্যান বলেন, ‘‘আমিও মনে করি, ৬ জানুয়ারি যা ঘটেছিল এবং নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে একটি পক্ষের অস্বীকৃতি গণতন্ত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়া গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য অনেক বেশি জরুরি।''
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা কমে গেলেও তা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে এমনটা হয়তো কেউই আশা করেন না।
উইলিয়ামসন বলেন, ‘‘গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ার সাম্প্রতিক উদাহরণগুলো ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে অনেক দীর্ঘস্থায়ী গণতন্ত্রবিরোধী চর্চা রয়েছে।''
এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিজয়ী হতে সর্বাধিক ভোট পাওয়া যথেষ্ট নয়।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প, কিন্তু তার প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটন তার চেয়ে ২৯ লাখ বেশি ভোট পেয়েছেন। এমন পরিস্থিতির মূলে রয়েছে ইলেক্টোরাল কলেজ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ৫০টি রাজ্যের প্রতিটিতে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্টোরাল কলেজ রয়েছে। যে প্রার্থী একটি রাজ্যের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাবেন, তিনি সেই রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল কলেজ নিজের পকেটে পুরবেন। একটু কঠিন লাগছে? উদাহরণটি দেখে নিন:
সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫৪টি ইলেক্টোরাল কলেজে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে প্রার্থী ক্যালিফোর্নিয়ায় বেশি ভোট পাবেন, রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল কলেজ তিনিই পাবেন। ভারমন্ট বা সাউথ ডাকোটার মতো ছোট রাজ্যে ইলেক্টোরাল কলেজ মাত্র তিনটি করে। সেখানেও একই নিয়ম, ভোটে যিনি জিতবেন তিনটি ইলেক্টোরালই তার।
প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হতে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট পেতে হয়। ফলে, জনগণের ভোট কেউ বেশি পেলেও, ইলেক্টোরাল ভোটের কারণে কম ভোট পাওয়া প্রার্থী দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন।
মার্কিন সিনেট—‘ভীষণ অগণতান্ত্রিক একটি প্রতিষ্ঠান'
মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থার আরেকটি দিক হলো, কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেট নিখুঁত গণতন্ত্রকে প্রতিফলিত করে না। একটি রাজ্যের জনসংখ্যা যাই হোক না কেন, প্রতিটি মার্কিন রাজ্যের চেম্বারে দুই জন সিনেটর থাকেন।
এর মানে হলো, কিছু রাজ্যে একজন সিনেটর কয়েক লাখ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। আবার কোনো ক্ষেত্রে কোটি মানুষের জন্যও সিনেটরের সংখ্যা মাত্র একজন। সিনেটে যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন প্রতিটি সিনেটরের ভোটও সমান, যদিও তারা বিভিন্ন সংখ্যার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন।
বার্কম্যান সিনেটকে ‘‘একটি ভীষণ অগণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান'' বলে অভিহিত করেছেন। উইলিয়ামসন বলেন, সিনেটকে যেভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, তাতে, ‘‘আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের জনবহুল অঞ্চলগুলোর জনগণের আকাঙ্ক্ষা ঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না।''
তবুও বাড়ছে অংশগ্রহণ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের জন্য হয়তো মডেল নয়, তবুও অ্যামেরিকানরা এই পদ্ধতিকে ছেড়ে দেননি। বরং আরো অনেক মানুষ এই পদ্ধতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশের বেশি। এটি শত বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতির রেকর্ড।
বার্কম্যান বলেন, ‘‘আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। গত ৮/১০ বছরে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বেড়েছে।'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি মনে করি এটি গুরুত্বপূর্ণ।'' সূত্র: ডয়চে ভেলে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ছবিয়ালের রজত জয়ন্তীতে ফারুকীর আবেগঘন পোস্ট
১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠক
বাংলাদেশিদের জন্য ই-ভিসা চালু করবে থাইল্যান্ড
সব সময় মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করেছে যুবদল- আবুল বাসার আকন্দ
"ভ্রমণশিল্পের সাথে জরিত ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ জীবন-জীবীকার ঝুঁকিতে পড়বে" - স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি
কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য : উপদেষ্টা নাহিদ
কোরআন মাজীদ স্পর্শ করে বা মসজিদে উঠে কসম করা প্রসঙ্গে?
কালীগঞ্জে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
পূর্বধলায় যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
গণহত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইইউর সহযোগিতা চাইলেন নাহিদ ইসলাম
গাজীপুরে হাজারেরও বেশি যুবকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ইউসেপ বাংলাদেশ
ইউজিসিতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ মডিউল নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত
জুলাই শহীদদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান
২৪ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেল মুছা
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে
ভবদহ নিয়ে কারও পকেট ভারি করতে দেয়া হবে না -অনিন্দ্য ইসলাম অমিত
রক্তের হোলিখেলা শেষ, আ'লীগের গণেশ উল্টে গেছে : রাশেদ প্রধান
ঈশ্বরগঞ্জে কলেজের কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
বেকারত্ব দূরীকরণের ভূমিকায় উদ্যোক্তাদের মিলনমেলা
রাজশাহী মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের এক নেত্রী পরীক্ষা দিতে এসে গ্রেফতার