মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে একচ্ছত্র পারমাণবিক ক্ষমতা বিপজ্জনক

Daily Inqilab দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স

২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২১ পিএম | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২১ পিএম



বিশ্ব পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে কিনা, তা সিদ্ধান্ত নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। মার্কিন অস্ত্রাগারে মজুদ প্রায় ৩হাজার ৭শ’ পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব, যা বিশ^কে বহুবার ধ্বংস করতে সক্ষম, সেগুলোর যেকোনো একটি প্রয়োগ করার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের সাথে পরামর্শ করার, প্রতিরক্ষা সচিবের সম্মতি বা জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যানের কাছে মতামত চাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
এর অর্থ হল, নিরাপত্তার জন্য শুধুমাত্র প্রায় ৩৩ কোটি ৪০ লাখ আমেরিকানকেই নয়, সেই সাথে অন্যান্য দেশের লাখ লাখ মানুষকেও এই প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিচক্ষণতা এবং স্থির স্নায়ুর উপর নির্ভর করতে হয়। এবং প্রয়োজনের তাগিদে তাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে, যা মানব ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে।
এই নির্বাচনে বা পরের নির্বাচনে যারই জয় হোক না কেন, তিনি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বিশেষে পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী হবেন। অবশ্যই, মার্কিন ভোটাররা নভেম্বরে সিদ্ধান্ত নেবেন যে, তারা কাকে এই ক্ষমতাটি দিতে চান। তবে, এই নতুন পারমাণবিক যুগে অবশ্যই এই একচ্ছত্র ক্ষমতার ঝুঁকি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
পারমাণবিক অভিযানগুলোর ক্ষেত্রে এই অনন্য ব্যবস্থা থাকলেও, মার্কিন সামরিক শক্তির অন্য কোন দিক আইনত এইভাবে পরিচালিত হয় না। সন্ত্রাসবাদের সন্দেহভাজনদের উপর ড্রোন হামলার অনুমোদনের জন্য, যুদ্ধের ময়দানের একজন কমান্ডার থেকে শুরু করে এই অঞ্চলের তত্ত¡াবধায়ক জেনারেল পর্যন্ত, প্রতিরক্ষা সচিব থেকে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত ওপর থেকে নীচে সুশৃঙ্খল নেতৃত্ব ক্রমের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।
বৃহত্তর অভিযান, যেমন অন্য দেশে পদাতিক আক্রমণের জন্য প্রেসিডেন্টকে মার্কিন কংগ্রেসের কাছে যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা সামরিক শক্তির ব্যবহার অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করতে হবে। একজন ব্যাক্তির হাতে এত বেশি নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা রাখা শুধু ঝুঁকিপ‚র্ণই নয়, মানুষের মধ্যে গভীর অস্বস্তি সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিক এটি জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ আমেরিকান প্রেসিডেন্টের একক পারমাণবিক কর্তৃত্ব নিয়ে অস্বস্তি বোধ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি পারমাণবিক হামলা ৩০ মিনিট বা তার কম সময়ের মধ্যে দেশটির প্রতিরক্ষা এবং নেতৃত্বকে ধ্বংস করে দিতে পারে, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তাই পাল্টা আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় দেয়া হয়। সামরিক পোষাকধারী যে কেউ সরাসরি প্রেসিডেন্টের আদেশ উপেক্ষা করলে অবাধ্যতার জন্য তিনি সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হতে পারেন।
অবশ্য, প্রেসিডেন্টের পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহারের আদেশ সশস্ত্র যুদ্ধের আইনের বৈধতা প‚রণ করতে ব্যর্থ হলে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা আদেশ অমান্য করার সিদ্দান্ত পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি প্রেসিডেন্ট অন্য একটি অপ্রীতিকর আক্রমণের আদেশ দেন।
তবে, শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে, প্রেসিডেন্টের আদেশ কার্যকর করতে তাদের অস্বীকৃতি কীভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। এটি একটি বিপজ্জনক অনিশ্চয়তা, যার সাথে বিশ্বকে বাঁচতে হচ্ছে।
মার্কিন কংগ্রেসের উচিত অবিলম্বে একটি নতুন আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অন্য একজন জেষ্ঠ্য কর্মকর্তার সম্মতি ছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র উৎক্ষেপণের আদেশ জারি করতে সক্ষম হতে বাধা দেবে, যদি না যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে আক্রমণের শিকার হয়।
একটি অস্থির পারমাণবিক যুগে বিশ্ব যখন টালমাটাল, তখন এই ধরনের পরিস্থিতিকে অনুমানম‚লক হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয় কংগ্রেসের। তাদের এমন আচরণ করা উচিত, যেন সবার জীবন তাদের উপর নির্ভর করে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
মার্কিন সমালোচনার কড়া জবাব দিলো পাকিস্তান
এবার পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার হুমকি ট্রাম্পের
পাকিস্তানে তালেবানের হামলায় ১৬ সেনা নিহত
আরও

আরও পড়ুন

ঘণকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু

ঘণকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০

আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়

আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়

পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!

আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!

ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ

ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ

তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী

তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী

গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ

গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ

প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস

প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস

৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়

৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়

বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়

বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়

ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড

ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে