ট্রাম্পের বিজয়ে ভারতের এক গ্রামে হতাশা, আরেক গ্রামে উল্লাস
০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপাড়ের নির্বাচনের এই ফলাফল দক্ষিণ ভারতের দুটি গ্রামে ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। একটি গ্রামের বাসিন্দারা আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েছেন। অন্যদিকে আরেকটি গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। -ফোর্বস
মূলত দ্বিতীয় এই গ্রামটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিসের পৈত্রিক গ্রাম। হ্যারিসের পরাজয়ে তারা হতাশ হয়েছেন। আর ট্রাম্পের জয় উদযাপনে ব্যস্ত গ্রামটিতে ট্রাম্পের রানিং মেট জেডি ভ্যান্সের স্ত্রীর পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। ট্রাম্প নির্বাচনে জয় পাওয়ায় জেডি ভ্যান্স যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন এবং তার স্ত্রী হবেন “সেকেন্ড লেডি”।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ফোর্বস। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল দক্ষিণ ভারতের দুটি ছোট গ্রামে বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জেডি ভ্যান্সের স্ত্রী উষার পৈতৃক বাড়ি ভাদলুরু গ্রামের বাসিন্দারা প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় উদযাপন করছেন। অন্যদিকে কমালা হ্যারিসের পৈত্রিক গ্রাম থুলসেন্দ্রপুরমে বসবাসকারীরা তার পরাজয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
ফোর্বস বলছে, তেলেগু-ভাষী দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশে অবস্থিত ভাদলুরু গ্রামের বাসিন্দারা উষা ভ্যান্সের পরবর্তী “মার্কিন সেকেন্ড লেডি” হওয়ার খবরটি পটকা ও বাজি ফাটিয়ে উদযাপন করেছে। নির্বাচনের আগে ওই গ্রামের হিন্দু পুরোহিত ট্রাম্পের জয়ের জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করেছিলেন এবং তিনি হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছিলেন, তারা আশা করেন— তিনি (উষা) “তার শিকড়কে চিনতে পারবেন এবং এই গ্রামের জন্য ভালো কিছু করবেন।”
উষা ভ্যান্সের দাদা ভাদলুরুর বাসিন্দা ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা গ্রাম ছেড়ে চলে যান এবং তার বাবা চিলুকুরি রাধাকৃষ্ণান যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার আগে বেশিরভাগ সময় চেন্নাই শহরেই অবস্থান করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও উষা ভ্যান্সের এই কৃতিত্ব উদযাপন করেছেন এবং বলেছেন, “উষা ভ্যান্সের শিকড় অন্ধ্রপ্রদেশে রয়েছে এবং তিনি তেলুগু ঐতিহ্যের প্রথম নারী হতে চলেছেন যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেকেন্ড লেডি হিসাবে কাজ করবেন”। এটিকে তেলেগু সম্প্রদায়ের জন্য “গর্বের মুহূর্ত” বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।
তবে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রতিবেশী রাজ্য তামিলনাড়ুর থুলসেন্দ্রপুরম গ্রামে বিপরীত দৃশ্য দেখা গেছে। কারণ ওই গ্রামের অনেক বাসিন্দা কমালা হ্যারিসের জয়ের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। কমালার পরাজয়ের পর তারা এখন বলছেন, তারা এই ফলাফলে হতাশ, কিন্তু তবুও তার কৃতিত্বের জন্য তারা গর্বিত। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের এক দিন আগে থুলসেন্দ্রপুরমের প্রধান মন্দিরে কমালার জয়ের জন্য একটি বিশেষ পূজাও করা হয়েছিল। সেই পূজায় বেশ কয়েকজন আমেরিকান পর্যটকও অংশ নিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জেডি ভ্যান্সের স্ত্রী ৩৮ বছরের উষা চিলুকুরি ভ্যান্সের জন্ম ও বেড়ে ওঠা আমেরিকার সান দিয়েগোর শহরতলিতে। ইয়েল এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। তবে তার পূর্বপুরুষরা থাকতেন অন্ধ্রপ্রদেশের ভাদলুরু গ্রামেই। তার দাদা ভাদলুরু গ্রাম থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর চেন্নাই শহরে। পরে উষার বাবা চিলুকুরি রাধাকৃষ্ণান উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
জেডি ভ্যান্সের স্মৃতিকথা হিলবিলি এলিজি থেকে তৈরি চলচ্চিত্র অনুযায়ী, আমেরিকায় আসার সময় চিলুকুরি রাধাকৃষ্ণানের সঙ্গে টাকা-পয়সা কিছু ছিল না বললেই চলে। ২০১৪ সালে কেন্টাকিতে জেডি ভ্যান্সকে বিয়ে করেন উষা। তাদের তিন সন্তান রয়েছে। অবশ্য নিজে কোনোদিন ভারতে পৈত্রিক গ্রামে না এলেও নিজের শিকড়কে কখনও অস্বীকার করেননি উষা। আর তাই পরবর্তী “মার্কিন সেকেন্ড লেডি”-কে নিয়ে আশায় বুক বাঁধছে ভাদলুরু গ্রামের বাসিন্দারা।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক