চীনের সঙ্গে ফের বাণিজ্যিক যুদ্ধ শুরু করতে পারেন ট্রাম্প
০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ পিএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ পিএম
চীন এমন এক সময় তার ধীরগতির অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা করার কথা ভাবছে, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। এবার যে প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে জিতেছেন ট্রাম্প, সেখানে চীনে তৈরি পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি ছিল।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উদ্দেশ্য ছিল, চীনকে একটি প্রযুক্তিগত পরাশক্তিতে পরিণত করা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বিজয় এখন তার ওই পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে হচ্ছে। এটি স্পষ্ট যে তার এই বিজয় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তির সম্পর্কের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে।
সম্পত্তির দামে মন্দা, সরকারের ঋণ ও বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং নিম্ন ভোগ চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মন্থর করে দিয়েছে। মূলত, করোনাভাইরাস মহামারির পর থেকেই এটি হয়েছে। অতএব, চীনের জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির (এনপিসি) সর্বশেষ ঘোষণা এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এনপিসি বা ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেস চীনের আইনসভার নির্বাহী সংস্থা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথমবার ক্ষমতায় এলেন, তখন তিনি চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন। চীন বিশ্লেষক বিল বিশপ বলেন, নতুন শুল্ক পরিকল্পনা গ্রহণের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাবা উচিৎ। `সে যখন শুল্ক সম্পর্কে কথা বলে, তখন বোঝা যায় যে সে মনে করে– চীন তার বাণিজ্য চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং চীন ও কোভিড তাকে ২০২০ সালের নির্বাচন হারতে বাধ্য করেছে,’ বলেন বিশপ।
২০২১ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করার পরেও চীনের ওপর ওয়াশিংটনের চাপ কমেনি। বাইডেন প্রশাসনও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে আরোপ করা সেই পদক্ষেপগুলো অব্যাহত রেখেছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তা আরও বিস্তৃত করেছে।
প্রথম দফায় ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় চীন একটি ধাক্কা খেয়েছিলো। তবে চীন এখন আরও বেশি দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। দুই বছর আগে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত কঠোর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর চীন তার অর্থনীতিকে মহামারি পূর্ববর্তী প্রবৃদ্ধির স্তরে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
তারা আশা করেছিলো যে দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে। কিন্তু তা তো হয়-ই নি। বরং, নিয়মিত হতাশাজনক অর্থনৈতিক খবরের উৎস হয়ে উঠেছে চীন।
এমনকি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে চীন তার অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ শুরু করার ঘোষণা করেছিলো। তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দেশটির বার্ষিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছিলো।
আইএমএফ আশা করছে, চীনের অর্থনীতি ২০২৪ সালে চার দশমিক আট শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। পরবর্তীতে চীনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি আরও কমে চার দশমিক পাঁচ শতাংশে পৌঁছাবে বলে তারা ধারণা করছে। তবে কয়েক দশকের অতি-দ্রুত প্রবৃদ্ধির শেষ হওয়ার জন্য দেশটির নেতারা প্রস্তুত ছিলেন।
২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন যে তার দেশ "দ্রুত প্রবৃদ্ধি থেকে উচ্চ-মানের উন্নয়নের পর্যায়ে" যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
উন্নত ম্যানুফ্যাকচারিং ও গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির (সবুজ শিল্প) দ্বারা চীনের অর্থনীতির মোড় ঘুরে যাবে বোঝাতে পরবর্তীতে প্রেসিডেন্টের বলা ওই কথাটি চীনের কর্মকর্তারা বারবার ব্যবহার করেছেন।
কিন্তু কিছু অর্থনীতিবিদ বলেন, চীন শুধুমাত্র রপ্তানি করে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।
মর্গান স্ট্যানলি এশিয়া’র সাবেক চেয়ারম্যান স্টিফেন রোচ বলেন, “চীন যদি সতর্ক না হয়, তবে তারা জাপানের মতো কয়েক দশকের দীর্ঘ স্থবিরতায় পরিণত হতে পারে।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৯০-এর দশকে এসে প্রথমবারের মতো জাপান জাপান একটি দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়ে যায়। তখন জাপানে শেয়ার, ভূমি, সম্পত্তির দাম বেড়ে যায়।
মি. রোচ বলেন, “এমন পরিস্থিতি এড়াতে চীনকে অব্যবহৃত ভোক্তা চাহিদার ওপর নির্ভর করতে হবে এবং রপ্তানি ও বিনিয়োগ-নেতৃত্বাধীন প্রবৃদ্ধি থেকে সরে আসতে হবে।”
এটি শুধু টেকসই প্রবৃদ্ধিকেই উৎসাহিত করবে না, বরং “বাণিজ্যিক উত্তেজনা এবং [চীনের] বাইরের ঝুঁকি কমাতে” সাহায্য করবে, বলেন তিনি।
দ্বিতীয় দফায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ক্ষমতায় ফিরে আসার মধ্য দিয়ে যে হুমকি তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলা করতে এই ধরনের আরও শক্তিশালী অর্থনৈতিক মডেল চীনকে সাহায্য করতে পারে।
নতুন অর্থনীতি, পুরনো সমস্যা
দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বব্যাপী কম খরচে পণ্য তৈরির কারখানা হিসেবে পরিচিত চীন। তারা এখন তাদের সেই পরিচিতিকে সেই উচ্চ প্রযুক্তির রপ্তানির মাধ্যমে পুনরায় অর্জন করার চেষ্টা করছে।
সৌর প্যানেল, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ক্ষেত্রে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ চীন।
ইন্টার্ন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) অনুযায়ী, সৌর প্যানেল উৎপাদনে এখন অন্তত ৮০ শতাংশ অংশীদার চীন। দেশটি বৈদ্যুতিক গাড়ি ও সেগুলোর ব্যাটারিরও সবচেয়ে বড় নির্মাতা।
আইইএ গত বছর বলেছিলো যে গ্রিন এনার্জিতে চীনা বিনিয়োগ বিশ্বের মোট বিনিয়োগের এক তৃতীয়াংশ। কারণ দেশটি “নবায়নযোগ্য শক্তিতে সক্ষমতা বাড়াতে অব্যাহতভাবে অসাধারণ অগ্রগতি দেখাচ্ছে।”
“উচ্চ-প্রযুক্তি ম্যানুফ্যাকচারিংকে সমর্থন করার জন্য নিশ্চিতভাবেই চীনে একটি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে,” লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ডেভিড লুবিন বলেন।
“এটি খুব সফল হয়েছে,” তিনি যোগ করেন।
২০২৩ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ি, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ও সৌর প্যানেলের রপ্তানি ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এক ট্রিলিয়ন ইয়ান বা ১৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। প্রথমবারের মতো এই শিল্পগুলো চীনকে তার বৈশ্বিক আধিপত্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।
এই রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে চীনের অর্থনীতিতে চলমান সম্পত্তি সংকটের আঘাত কিছুটা কমেছে।
“চীনের অতিরিক্ত ক্ষমতা বাড়বে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাদের আর কোনও প্রবৃদ্ধির উৎস নেই,” বলেন ন্যাটিক্সিস ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যালিসিয়া গার্সিয়া-হেরেরো।
ওই রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরোধও বেড়েছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়; গত মাসেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনে নির্মিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্ক ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে।
"এখনকার সমস্যা হলো, সেই পণ্যগুলোর বড় গ্রাহকরা, যার মধ্যে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে, সেগুলো গ্রহণ করতে ক্রমশ অনিচ্ছুক হয়ে উঠছে," বলেন মুডি'স অ্যানালিটিক্সের রিসার্চ ডিরেক্টর ক্যাটরিনা এল।
আজ যখন ট্রাম্প আবারও প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতা ও দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং চীনা রপ্তানিকে কোণঠাসা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তখন বেইজিংকে নিজেদের কাছে প্রশ্ন করতে হবে যে তার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করার জন্য সম্প্রতি গৃহীত পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট হবে কি না। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইন্দোনেশিয়ার নতুন কোচ ক্লাইভার্ট
কোপ দেলরের শেষ ষোলোতে কে কার মুখোমুখি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গাপটিল
পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি লাখো মানুষের
ভোগান্তিতে সেবা নিতে আসা জনসাধারণ
আদমদীঘিতে ফসলি জমিতে ফের কোল্ড স্টোর নির্মাণ
পদ্মার চরে শিকারিদের কবলে অতিথি পাখি
বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ৮ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ২০
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন
বিপন্ন প্রজাতির হনুমান পাচারকালে ২ জনের কারাদ-
মিরপুরে তুরাগ নদী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান
৪৮ ঘণ্টা পরও লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ
ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি
ভারত আইনের শাসন মানে না : রিজভী
ভয়াবহ দাবানলে ছাড়খাড় লস অ্যাঞ্জেলেস
সরকারের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশনা ইমরান খানের
‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’ : বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান
ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত
সচিবালয়ের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
আওয়ামী সরকারের অসহযোগীতায় ব্রাজিল থেকে গরুর গোশত আমদানি করা সম্ভব হয়নি : রাষ্ট্রদূত