দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক শাসনের স্মৃতি, ইতিহাস কি আবার ফিরে আসছে?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ এএম | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ এএম

দক্ষিণ কোরিয়ার কো জে-হাক আজও ভুলতে পারেন না সেই দিনটি, যখন সামরিক শাসনের সময় তিনি নিজের চোখে দেখেছিলেন নারকীয় এক দৃশ্য। ৮৭ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ মনে করেন, সেই সময়ের অভিজ্ঞতা আজকের গণতান্ত্রিক দক্ষিণ কোরিয়ার মূল্য উপলব্ধি করার প্রধান কারণ।

 

১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসে, প্রেসিডেন্ট সিংম্যান রির স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। সেই সময় কো জে-হাক একটি সরকারি ভবনে কাজ করছিলেন।তিনি জানালা দিয়ে দেখেছিলেন, কীভাবে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। কয়েকদিন পরই সামরিক শাসন জারি করা হয়।

 

দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সামরিক শাসন একটি গভীর ক্ষত।কয়েক দশকের সামরিক শাসনের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও দেশের মানুষের মনে দগদগে।চলতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল উত্তর কোরিয়ার প্রভাব মোকাবিলার অজুহাতে সামরিক শাসন ঘোষণা করেন।তবে কোনো স্পষ্ট প্রমাণ বা ব্যাখ্যা ছাড়াই এই ঘোষণা দেওয়া হয়, যা মানুষকে সংশয়ী করে তোলে। জনমনে ধারণা হয় যে প্রেসিডেন্ট তার রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।

 

ইউনের সামরিক শাসনের ঘোষণার পরই সাধারণ মানুষ ও আইনপ্রণেতারা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন। আইনপ্রণেতারা পার্লামেন্টে প্রবেশ করে সামরিক শাসন বাতিলের চেষ্টা করেন, যেখানে জনগণ সেনাদের বাধা দেওয়ার জন্য একত্রিত হয়। এমনকি সেনাদের মধ্যেও আদেশ পালনে অনীহা দেখা যায়।

 

দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সামরিক শাসনের সবচেয়ে নৃশংস দিকটি ছিল ১৯৮০ সালের গওয়াংজু গণহত্যা। তখন সামরিক শাসনের নামে শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এসব ঘটনার প্রভাবেই ১৯৮৮ সালে দেশটি গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যায়।

 

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রজন্মের মানুষ শঙ্কিত। প্রবীণরা মনে করেন, অতীতে কোনো কোনো পরিস্থিতিতে সামরিক শাসন প্রয়োজন ছিল, তবে বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। তরুণ প্রজন্ম এই শাসনের কুফল সম্পর্কে জানলেও তা প্রত্যক্ষ করেনি, তবু তারা শঙ্কিত।

 

পরিবেশ কর্মী কেলি কিম বলেন, “আমরা গণতন্ত্রের জন্য অনেক সংগ্রাম করেছি। আবার তা হারাতে চাই না। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা ছাড়া জীবন অর্থহীন।”দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক শাসনের অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবারও গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে। তবে এ অভিজ্ঞতা স্মরণ করিয়ে দেয়, গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না। তথ্যসূত্র : বিবিসি


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড