আসাদের পতনে বিপদে পড়তে যাচ্ছে মিত্র ইরান?
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ পিএম | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ পিএম
সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বে আসায় মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হতে চলেছে। এতে বিপদে পড়তে যাচ্ছে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরান। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ শুরু করেছে ইরান। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা সিরিয়া সংঘাতে জড়িত সব দেশের মাঝে বৈরী গতিপথ ঠেকানোর প্রচেষ্টা হিসাবে এই যোগাযোগ চালু করা হয়েছে। সোমবার ইরানের সরকারি জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
ইসলামপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি নেতৃত্বে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের একটি জোটের তড়িৎগতির অভিযানে রোববার দামেস্কের পতন হয়েছে। বিদ্রোহীদের আন্দোলনের মুখে রক্তপাত এড়াতে দামেস্ক ছেড়ে পরিবারসহ মস্কোতে পালিয়ে গেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। সিরিয়ায় আসাদের এই পতনকে মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক প্রজন্মের ইতিহাসে অন্যতম এক মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট আসাদের পতন সিরিয়ায় বিভিন্ন পক্ষের স্বার্থে চরম আঘাত হেনেছে; যেখান থেকে আরব বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করে আসছিল ইরান ও রাশিয়া। আসাদের পতনের কয়েক ঘণ্টা পর ইরান বলেছে, দামেস্কের সঙ্গে সম্পর্ক দুই দেশের ‘‘দূরদর্শী এবং সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির’’ ওপর ভিত্তি করে অব্যাহত থাকবে। সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিত্বকারী একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে সিরিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইরান।
দামেস্কে সরকার পরিবর্তন সিরিয়ায় ইরানের ক্ষমতার ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে তেহরানের উদ্বেগ রয়েছে। কারণ আঞ্চলিক প্রভাবের ক্ষেত্রে চালকের আসনে ছিল ইরান। তবে আতঙ্কের কিছু নেই বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন ইরানি তিনজন কর্মকর্তা। একজন বলেছেন, সিরিয়ার নতুন শাসক গোষ্ঠীর মাঝে যাদের দৃষ্টিভঙ্গি ইরানের কাছাকাছি, তেহরান কেবল তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের কূটনৈতিক উপায় খুঁজছে।
দেশটির অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আসাদের উত্তরসূরীরা সিরিয়াকে তেহরানের কক্ষপথ থেকে দূরে ঠেলে দেবে কি না, সেটি নিয়েই ইরানের প্রধান উদ্বেগ। তবে ইরান এই ধরনের দৃশ্যপট এড়াতে আগ্রহী।’
আসাদ-পরবর্তী অস্থিতিশীল সিরিয়া লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র সরবরাহের একমাত্র স্থল রুট থেকেও বঞ্চিত করবে ইরানকে। শুধু তাই নয়, সিরিয়া হাতছাড়া হয়ে গেলে ভূমধ্যসাগরে প্রবেশাধিকার এবং ইসরায়েলের সঙ্গে ‘ফ্রন্ট লাইনও’ হারাবে তেহরান।
দেশটির জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছেন, দামেস্কে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রকে হারানো এবং গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার মুখোমুখি হওয়ায় সিরিয়ার নতুন নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন ইরানের নেতারা। তিনি বলেন, সিরিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থিতিশীল ও অতিরিক্ত আঞ্চলিক উত্তেজনা এড়ানোর পথ খুঁজছে তেহরান।
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের ভেতরের দু’টি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে তেহরান। এছাড়া আগামী কয়েক দিনের মাঝে ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থা সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এসএনএসসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকের পর সিরীয় নতুন নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে মূল্যায়ন করা হবে।
ইরানির কর্মকর্তাদের মধ্যে দু’জন বলেছেন, ইরানের ওপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ জোরদারের লক্ষ্যে ‘সিরীয় প্রেসিডেন্টকে ছেড়ে দিতে বাধ্য অথবা ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করার জন্য’ আসাদের অপসারণ ব্যবহার করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিরিয়া ইস্যুতে ট্রাম্পের এই অপকৌশলের বিষয়ে সতর্ক ছিল তেহরান।
২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্ব শক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি হিসেবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন তিনি। এরপর তেহরানের বিরুদ্ধে একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প; যা ইরানে চরম অর্থনৈতিক সংকট ও জনসাধারণের মাঝে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি করে। ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের নেওয়া নিখুঁত পদক্ষেপই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তেহরানের জন্য।
২০২০ সালে ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক কমান্ডার ও বিদেশে মার্কিন স্বার্থ এবং তার মিত্রদের ওপর হামলার মাস্টারমাইন্ড কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ড্রোন হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে পরে স্বীকার করেছিলেন।
বেলজিয়াম-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক পরিচালক আলী ভায়েজ বলেন, ‘ইরানের কাছে এখন কেবল দু’টি বিকল্প রয়েছে, ইরাকে পিছু হটা এবং প্রতিরক্ষামূলক সীমারেখা নির্ধারণ অথবা ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করা।’
আসাদের পতন ওই অঞ্চলে তেহরানের ক্ষয়িষ্ণু কৌশলগত নীতিকে উন্মোচন করেছে। লেবাননে হিজবুল্লাহ এবং গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ফলে ইরানের পরোক্ষ পরাজয় আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।
২০১১ সালে সিরিয়ায় শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের সময় ইরানের শাসকগোষ্ঠী আসাদের সমর্থনে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল। ঘনিষ্ঠ মিত্র আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে এবং ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব ঠেকাতে সিরিয়ায় বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করেছিল তেহরান। আসাদের পতনে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিরোধ চেইনের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলের অবসান ঘটেছে। কারণ হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ ও অর্থায়নের জন্য প্রধান ট্রানজিট রুট হিসাবে কাজ করেছিল সিরিয়া।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মুরাদনগরে একাডেমিক ভবন সংকটে ভর্তি হতে পারেনি দুইশতাধিক শিক্ষার্থী
ছাত্র জনতার উপর হামলা মামলায় ৮ আইনজীবী কারাগারে
আটঘরিয়ায় সরিষা খেতে মৌবাক্স
সরকারি বীজ সার বিক্রয়ের সময় জনতার হাতে আটক কৃষি কর্মকর্তা
খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল সিলেট
আসছে বাংলাদেশি শরণার্থীদের গণহত্যামূলক সিরিজ 'ফেউ'
ভারত দলে ফিরলেন শামি
কলাপাড়ায বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার শুভ উদ্বোধন
বদলগাছীতে সেলোমিশিন চালিত ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে হেল্পার জয় নিহত
সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতি : ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্রসচিবের দপ্তরে ডেকেছে সরকার
ফরিদপুরে আবারও সড়ক দুর্ঘটনা ৫ ঘন্টার ব্যবধানে দুই মটরসাইকেল আরোহী নিহত
আগামী নির্বাচনকে ইতিহাসের সেরা ও ঐতিহাসিক করতে চাই
রাবিতে চার হলে পবিত্র কোরআন পোড়ানো: তদন্ত কমিটি, সর্বোচ্চ শাস্তির হুঁশিয়ারি
রামগড় স্থলবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শনে - উপদেষ্টা ব্রি:জে:(অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ
দুমকীতে বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায় ছাত্রলীগ নেতা আটক
তারেক রহমানের ৩১ দফা ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রসংস্কারে-আরিফুল ইসলাম বিলাত
বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, জনগণের স্বপ্ন পূরণে নতুন পুলিশ সদস্যরা কাজ করবে- অ্যাডিশনাল আইজি
ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ, আবারও এগিয়ে মিলানোভিচ
ঢাবিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার