দ্য ইকোনমিস্ট

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল, সংবিধানের বিপরীতে হাঁটছেন ট্রাম্প

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৩ পিএম

প্রেসিডেন্ট হিসেবে উদ্বোধনী বক্তৃতায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তার প্রশাসন সংবিধান ভুলে যাবে না। অর্থাৎ এই প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন যে, তারা সংবিধানের পথেই হাঁটবেন। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি খুব বেশি সময় টেকেনি।

 

ক্ষমতাগ্রহণের পরই ট্রাম্প বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্যে রয়েছে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ বাতিলের আদেশ। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী থেকে আসা অধিকার। এতে বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছে বা প্রাকৃতিকভাবে নাগরিক হয়েছে ও আইনগতভাবে এখানকার অধীনে রয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যের নাগরিক। কিন্তু ট্রাম্প এমনটা মনে করেন না।

 

অপরদিকে সাংবিধানিক বিষয় হওয়ায় এই আইনে পরিবর্তন আনা কিংবা পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়াটা খুবই কঠিন। এ বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ স্টেটের পার্লামেন্টে পাস করতে হবে। তারপর সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ পাস করতে হবে ও হাউজে পাস করতে হবে। আবার বিষয়টি নিয়ে অনেকে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থও হতে পারেন।

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই প্রচেষ্টা আইনি বাধার মুখে পড়বে। এরই মধ্যে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ও অন্য সংস্থাগুলো তার এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তবে ট্রাম্প যেহেতু প্রেসিডেন্ট, তার হাতে অনেক ক্ষমতা থাকে। ফলে তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়াটা অনেক জটিল করে দিতে পারেন।

 

এরই মধ্যে ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে অবৈধ অভিবাসী কিংবা সাময়িক ভিসাধারী বাবা-মায়ের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

 

ট্রাম্পের আদেশের অধীনে, আগামী মাস থেকে ফেডারেল সরকার কোনো নবজাতকের বাবা-মা মার্কিন নাগরিক না হলে তাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি প্রদানকারী নথিপত্র ইস্যু করা হবে না। আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী অননুমোদিত অভিবাসীদের সন্তানদের এভাবে বাদ দেওয়া হবে। কিন্তু প্রায় ৩০ লাখ মানুষ যারা আমেরিকায় বিভিন্ন ধরনের কাজ বা স্টুডেন্ট ভিসায় বসবাস করছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

 

তুলনামূলকভাবে কিছু ধনী দেশ বিশেষ করে কানাডা, লাতিন আমেরিকার বেশিরভাগ দেশ তাদের দেশে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেককেই নাগরিকত্ব দিয়ে আসছে। আমেরিকাও গৃহযুদ্ধের শেষের দিকে একই পথে হাঁটা শুরু করেছিল। ১৮৫৭ সালে ড্রেড স্কটের সিদ্ধান্তকে বাতিল করার জন্য সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল। দেশটির ১৪তম সংশোধনী নিশ্চিত করেছে যে মুক্ত ক্রীতদাস এবং তাদের সন্তানরা এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের স্বীকৃতি পাবে।

 

কিন্তু ট্রাম্পের যুক্তি হলো, ১৪তম সংশোধনীতে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেকের জন্য সর্বজনীনভাবে নাগরিকত্ব প্রসারিত করার জন্য কখনও ব্যাখ্যা করা হয়নি।

 

ট্রাম্পের আদেশ আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এমনকি এটা বাস্তবায়ন করাও কঠিন হবে। পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময় আমেরিকানদের এখন তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য শুধুমাত্র একটি জন্মসনদ জমা দিতে হয়। এগুলো পিতামাতার নাগরিকত্ব বা আইনি অবস্থা রেকর্ড করে না। জন্মসনদ স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। তাই এই আইন খুব দ্রুত পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাজ্যগুলোতে এটা প্রায় অসম্ভব।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কুয়েট ভাইস-চ্যান্সেলরের সাথে অফিসার্স এসোসিয়েশনের নব-নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ

কুয়েট ভাইস-চ্যান্সেলরের সাথে অফিসার্স এসোসিয়েশনের নব-নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ

হরিপুরে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে, প্রাণ গেল যুবকের

হরিপুরে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে, প্রাণ গেল যুবকের

বাংলাদেশে তৈরি এয়ার কন্ডিশনার বাজারে নিয়ে এসেছে প্যানাসনিক

বাংলাদেশে তৈরি এয়ার কন্ডিশনার বাজারে নিয়ে এসেছে প্যানাসনিক

মহার্ঘ ভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা

মহার্ঘ ভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা

মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন নিয়ে যা বললেন মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট

মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন নিয়ে যা বললেন মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট

প্রয়োজনে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে একসঙ্গে নিয়োগ-এমপিভুক্তি: শিক্ষা উপদেষ্টা

প্রয়োজনে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে একসঙ্গে নিয়োগ-এমপিভুক্তি: শিক্ষা উপদেষ্টা

লক্ষ্মীপুরে সড়কে অবৈধ ড্রাম ট্রাক বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

লক্ষ্মীপুরে সড়কে অবৈধ ড্রাম ট্রাক বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

গোবিন্দগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ১০ পরিবার সর্বস্বান্ত, ৭টি  গরুর মৃত্যু

গোবিন্দগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ১০ পরিবার সর্বস্বান্ত, ৭টি গরুর মৃত্যু

বিপিএলে তানজিদের ছক্কার রেকর্ড

বিপিএলে তানজিদের ছক্কার রেকর্ড

ট্রাম্পের গণ-নির্বাসন এবং আইসিই অভিযান পরিকল্পনা কীভাবে কাজ করছে?

ট্রাম্পের গণ-নির্বাসন এবং আইসিই অভিযান পরিকল্পনা কীভাবে কাজ করছে?

নতুন বাংলাদেশে চাঁদাবাজদের ঠাঁই নেই -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

নতুন বাংলাদেশে চাঁদাবাজদের ঠাঁই নেই -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

বেক্সিমকোর শ্রমিকদের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ, বাস ও ট্রাকে আগুন

বেক্সিমকোর শ্রমিকদের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ, বাস ও ট্রাকে আগুন

ভোলা-৩ আসনের সাবেক সাংসদ শাওন এর মিথ্যা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

ভোলা-৩ আসনের সাবেক সাংসদ শাওন এর মিথ্যা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

গভীর রাতে জানালার গ্রীল কেঁটে কচুয়ায় প্রবাসীর বাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

গভীর রাতে জানালার গ্রীল কেঁটে কচুয়ায় প্রবাসীর বাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

হাসিনাকে 'মা' ডেকে অনুতপ্ত নন জয়, প্রয়োজনে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ডাকবেন বাবা

হাসিনাকে 'মা' ডেকে অনুতপ্ত নন জয়, প্রয়োজনে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ডাকবেন বাবা

‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ' নয়, বিশ্বের প্রয়োজন সমৃদ্ধি: মেদভেদেভ

‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ' নয়, বিশ্বের প্রয়োজন সমৃদ্ধি: মেদভেদেভ

শেখ হাসিনার ‘নিশি রাতের ভোট’ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

শেখ হাসিনার ‘নিশি রাতের ভোট’ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

আফসান-আল-আলমের শেরপুরে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান

আফসান-আল-আলমের শেরপুরে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান

ইনকিলাবে সাক্ষাৎকার দেওয়া রিজভীর ভিডিও ভাইরাল

ইনকিলাবে সাক্ষাৎকার দেওয়া রিজভীর ভিডিও ভাইরাল

গভীর রাতে জানালার গ্রীল কেঁটে কচুয়ায় প্রবাসীর বাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

গভীর রাতে জানালার গ্রীল কেঁটে কচুয়ায় প্রবাসীর বাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি