টিটিপি দমনে যৌথ উদ্যোগে একমত পাকিস্তান-আফগানিস্তান, বাড়ছে আঞ্চলিক সহযোগিতা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৯ এএম | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০১ এএম

দীর্ঘদিনের উত্তেজনা ও সীমান্ত জটিলতার মধ্যেও অবশেষে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে এক ঐতিহাসিক সমঝোতায় পৌঁছেছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) দমনে যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আফগান শরণার্থীদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একমত হয়েছে উভয় দেশ। এই চুক্তিকে অনেকেই দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সংযোগের নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখছেন।

 

এই অগ্রগতি ঘটে শনিবার (১৯ এপ্রিল) পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের প্রথম আফগানিস্তান সফরে। সফরের উদ্দেশ্য ছিল দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনা প্রশমন, নিরাপত্তা সহযোগিতা পুনরায় শুরু এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংযোগ জোরদার করা। কাবুলে তিনি আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি, ‘অ্যাক্টিং’ প্রধানমন্ত্রী মোল্লা হাসান আখুন্দ ও উপপ্রধানমন্ত্রী মোল্লা আব্দুস সালাম হানাফির সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনা হয় নিরাপত্তা, বাণিজ্য, ট্রানজিট, শরণার্থী ও ভিসা ব্যবস্থাপনা—সবগুলো বিষয়ের ওপর।

 

বিশদ আলোচনায় উঠে আসে টিটিপি ইস্যু, যা ছিল বৈঠকের অন্যতম মুখ্য বিষয়। দুই দেশ সম্মত হয় যে এই সংগঠন উভয়ের জন্যই নিরাপত্তার হুমকি। এ কারণে গঠিত হবে একটি যৌথ কমিটি, যেখানে থাকবে গোয়েন্দা সংস্থা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পাকিস্তানের কাবুল দূতাবাসের প্রতিনিধি। এই কমিটি আফগান অংশীদারদের সঙ্গে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কাজ করবে। দার স্পষ্ট বলেন, "সীমান্তে নিরাপত্তা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করা না গেলে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণ সম্ভব নয়।"

 

অন্যদিকে, আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। উত্তরে দার আশ্বস্ত করেন, “পাকিস্তান কাউকে জোর করে ফেরত পাঠাবে না। তাদের মালামাল ও পুঁজি থাকবে সুরক্ষিত এবং কোনোভাবেই জোর খাটানো হবে না।” অভিযোগ পেলে দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এছাড়া পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে এবং কৃষিপণ্য পরিবহন ও ট্রানজিট প্রক্রিয়া সহজ করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। আলোচনায় সিএএসএ-১০০০ বিদ্যুৎ প্রকল্প, টিএপিআই গ্যাস পাইপলাইন, আফগান ট্রান্স রেললাইন এবং মধ্য এশিয়া-পাকিস্তান রেল সংযোগ নিয়েও গঠনমূলক আলোচনা হয়।

 

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি বলেন, “যদি আজকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হয়, তবে দুই দেশের মধ্যে অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংযোগ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে।” দার বলেন, “প্রত্যাবাসন হবে মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনকভাবে—এটি আমাদের নৈতিক, ধর্মীয় ও প্রতিবেশীসুলভ দায়িত্ব।” শেষ পর্যন্ত দুই দেশ একাধিক যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়, যারা এসব চুক্তি বাস্তবায়নে নজরদারি করবে এবং দ্বিপক্ষীয় সমস্যার কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করবে। এই সমঝোতা শুধু নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং আঞ্চলিক শান্তি, মানবতা ও পারস্পরিক উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করছে।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বেলগোরোড, কুরস্ক অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনা
সুনাম হারাচ্ছে এলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলো
চীনের মধ্যস্থতায় ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান
কাতারের কাছ থেকে বিলাসবহুল জেট গ্রহণ করেছেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রে সান দিয়েগোর একটি আবাসিক এলাকায় বাড়িঘরের ওপর বিমান বিধ্বস্ত!
আরও
X

আরও পড়ুন

জাতীয় স্বার্থে দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য সবার প্রতি জামায়াত আমিরের আহবান

জাতীয় স্বার্থে দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য সবার প্রতি জামায়াত আমিরের আহবান

বেলগোরোড, কুরস্ক অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনা

বেলগোরোড, কুরস্ক অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনা

সুনাম হারাচ্ছে এলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলো

সুনাম হারাচ্ছে এলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলো

চীনের মধ্যস্থতায় ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান

চীনের মধ্যস্থতায় ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান

বিশাল বহর নিয়ে ৩১ মে ঢাকায় আসছেন চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী

বিশাল বহর নিয়ে ৩১ মে ঢাকায় আসছেন চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী

কাতারের কাছ থেকে বিলাসবহুল জেট গ্রহণ করেছেন ট্রাম্প

কাতারের কাছ থেকে বিলাসবহুল জেট গ্রহণ করেছেন ট্রাম্প

মাওবাদী নেতাসহ ৩০ জনকে হত্যা করেছে ভারত : বিরোধী দলগুলোর নিন্দা

মাওবাদী নেতাসহ ৩০ জনকে হত্যা করেছে ভারত : বিরোধী দলগুলোর নিন্দা

গণ-অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা দিল সেনাবাহিনী

গণ-অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা দিল সেনাবাহিনী

অধ্যাপক ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’ : নাহিদ ইসলাম

অধ্যাপক ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’ : নাহিদ ইসলাম

ঈদের আগেই বাজারে মিলবে যেসব নতুন নোট

ঈদের আগেই বাজারে মিলবে যেসব নতুন নোট

প্রধান উপদেষ্টার কাছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের স্মারকলিপি

প্রধান উপদেষ্টার কাছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের স্মারকলিপি

জানতে দেয়া হয়নি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের সিদ্ধান্ত

জানতে দেয়া হয়নি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের সিদ্ধান্ত

পুঁজিবাজারে লেনদেন সূচক বেড়েছে

পুঁজিবাজারে লেনদেন সূচক বেড়েছে

কালোবাজারি রোধে কঠোর রেল

কালোবাজারি রোধে কঠোর রেল

বিদেশে খেলনার বাজার ৪০ হাজার কোটি টাকা

বিদেশে খেলনার বাজার ৪০ হাজার কোটি টাকা

অবৈধ রেলিক সিটিতে রাজউকের অভিযান, কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা

অবৈধ রেলিক সিটিতে রাজউকের অভিযান, কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা

সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাসহ ৫ দফা দাবি গণ অধিকার পরিষদের

সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাসহ ৫ দফা দাবি গণ অধিকার পরিষদের

দেশের সংকটময় যেকোনো পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব দেন জিয়া পরিবার -ব্যারিস্টার অমি

দেশের সংকটময় যেকোনো পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব দেন জিয়া পরিবার -ব্যারিস্টার অমি

বন্দরে শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

বন্দরে শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

চালককে হাতুড়িপেটা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই

চালককে হাতুড়িপেটা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই