মার্কিন ডলারের ওপর আস্থা হারাচ্ছে বিশ্ব?
২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৯ পিএম

মার্কিন ডলারকে দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রবণতায় ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে—ডলার এখন উল্টো আতঙ্কের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন ডলার বিশ্বের প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে নয় শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে।
এই পতনের দুই-পঞ্চমাংশ ঘটেছে ১ এপ্রিলের পর থেকে। যদিও একই সময়ে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ০ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। তবে সুদের হার বাড়লেও ডলারের পতন প্রমাণ করে, বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রকে এখন ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন।
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদকে বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ২৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল ট্রেজারি মার্কেট, বৈশ্বিক বাণিজ্যে ডলারের আধিপত্য এবং ফেডারেল রিজার্ভের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি এই অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির কারণে সেই বিশ্বাসে এখন চিড় ধরেছে।
সংকটের শুরু হোয়াইট হাউজ থেকেই
ট্রাম্পের বেপরোয়া বাণিজ্যযুদ্ধ এবং শুল্ক বৃদ্ধির কারণে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং ভোক্তারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র মন্দার মুখোমুখি, একই সঙ্গে বাজেট ঘাটতিও ঊর্ধ্বমুখী। দেশটির মোট সরকারি ঋণ জিডিপির প্রায় ১০০ শতাংশ এবং বার্ষিক বাজেট ঘাটতি সাত শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা স্বাভাবিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত বেশি।
মার্কিন কংগ্রেস সম্প্রতি এমন একটি বাজেট পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে, যার ফলে আগামী এক দশকে আরও ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হতে পারে। এটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের কর ছাড়, এমনকি কোভিড মহামারির সময়ের ব্যয় এবং বাইডেন প্রশাসনের উদ্দীপনা প্যাকেজকেও ছাপিয়ে গেছে।
বাজারে অনাস্থা বাড়ছে
বিনিয়োগকারীরা এখন প্রশ্ন তুলছেন, ট্রাম্প আসলেই দেশ চালাতে সক্ষম কি না। হঠাৎ করে শুল্ক আরোপ, খাতভিত্তিক ছাড়—সব মিলিয়ে তার নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় স্পষ্টতা ও ধারাবাহিকতা নেই। এমনকি হোয়াইট হাউজের কিছু উপদেষ্টা ডলারকে বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে ধরে রাখার দায়ভার নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
এ অবস্থায় ফেডারেল রিজার্ভও চাপে পড়েছে। ট্রাম্প সুদের হার কমাতে চাপ দিচ্ছেন। ২০২৬ সালে তিনি নিজের পছন্দমতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান নিয়োগ করতে পারবেন।
এছাড়া, ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণে অনিয়ম ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রবণতাও বাড়ছে—যেমন, অভিবাসীদের এল সালভাদরে পাঠানো বা বিরোধী আইনজীবী ফার্মকে হেনস্তা করা, প্রভৃতি।
বিশ্বজুড়ে প্রভাব
বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের হাতে বর্তমানে ৮ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের মার্কিন সরকারি বন্ড রয়েছে—এর অর্ধেকেরও বেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছে, যাদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব চলে না। আগামী বছরে যুক্তরাষ্ট্রকে নয় ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ পুনঃঅর্থায়ন করতে হবে। যদি সেই বন্ডের চাহিদা কমে যায়, তাহলে সুদের হার বেড়ে যাবে এবং বাজেট ঘাটতি আরও বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস কী করবে? অতীতের অর্থনৈতিক সংকটে তারা বাজেট ব্যয় বাড়িয়ে সমাধান করেছিল। কিন্তু এবার তাদের দ্রুত কর বাড়াতে ও খরচ কমাতে হবে। বর্তমান রাজনৈতিক বিভাজনের বাস্তবতায় তা করা কঠিন হবে। ফলে বাজার থেকে চাপ না এলে নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।
ফেডের জটিল সমীকরণ
ফেড চাইলেও সহজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তারা যদি বন্ড কিনে বাজারে স্থিতি আনার চেষ্টা করে, তাহলে সেটি ঋণসংকটে থাকা সরকারের দায় মেটানোর চেষ্টা বলে মনে হতে পারে—যা উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় বিপজ্জনক।
আবার, ফেড যদি ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে না চলে, তাহলে বিদেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য ডলার সরবরাহেও প্রশ্ন উঠবে।
ডলারের ভবিষ্যৎ
মুদ্রার মান নির্ভর করে যে রাষ্ট্র সেটিকে সমর্থন দেয়, তার ওপর। যদি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল থাকে, ঘাটতির মোকাবিলায় ব্যর্থ হয় এবং নীতি নির্ধারণে পক্ষপাত দেখায়, তাহলে ডলারের ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে।
তাহলে বিকল্প কী? বিশ্বের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই মুহূর্তে ডলারের কোনো সমতুল্য নেই।
ইউরো জোন পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ সম্পদ তৈরি করতে পারে না। সুইজারল্যান্ড ছোট, জাপানের নিজস্ব ঋণ অনেক বেশি। সোনা বা ক্রিপ্টোকারেন্সির পেছনে রাষ্ট্রীয় সমর্থন নেই। ফলে বিনিয়োগকারীরা একের পর এক বিকল্পের পেছনে ছুটবে, যার ফলে বাজারে অস্থিরতা ও ‘বুম-বাস্ট’ চক্র বাড়তে থাকবে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ইন্ডিয়া যা চায়, 'র' বাংলাদেশে সেটাই বাস্তবায়ন করতে চায় : সৈয়দ ফয়জুল করীম

ঈশ্বরগঞ্জে মগটুলা ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ইউএনও'র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল বাউফল

বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে মোরেলগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির নিন্দা

জকিগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এসএসসি ফলপ্রার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু

ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশকে ঘিরে কিশোরগঞ্জে যুবদলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

দেশ অত্যন্ত সংকটের মধ্যে রয়েছে, কখন কি হয়ে যায় সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে: ড. আসাদুজ্জামান রিপন

চা শ্রমিকদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনমান উপযোগী মজুরি ঘোষণার দাবী জানালো বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন

কুবি শিক্ষক আনিছের বিরুদ্ধে ফের পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ

মানুষের স্বপ্ন ফিকে হতে দেবেন না: হেফাজত

শেরপুরে মেধা ও যোগ্যতায় কনস্টেবল পদে চাকুরি পেল ১৯ জন

জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখার আহ্বান শিবিরের

আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের স্ট্যাটাস ভাইরাল, কার নাম আছে?

গোপনে বিয়ে করা স্ত্রীকে জোরপূর্বক অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার পর তাকে আবার ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে।

বিভাজনের উর্ধে উঠে দায়িত্বশীল ও সতর্ক আচরণ করতে হবে ঃ পীর সাহেব চরমোনাই

কাল সারাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে

উখিয়ায় বনবিভাগের অভিযানে মাটি ভর্তি অবৈধ ট্রাক জব্ধ করে উদ্ধার

জটিলতা সৃষ্টি করে সরকারের মান-অভিমান গ্রহণযোগ্য না: আনু মুহাম্মদ

ড. ইউনূসের পদত্যাগ চায় না বিএনপি, তবে করলে বিকল্প বেছে নেবে জাতি : সালাহউদ্দিন আহমেদ

আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে