নামাজ রবের নিকট একনিষ্ঠ আত্মসমর্পণ

Daily Inqilab মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস

২৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:২১ পিএম | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:২১ পিএম

ইমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজ। এটি ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। নামাজ ফরজ হয়েছে মেরাজের রাতে আল্লাহপাকের আরশে। সে রাতে আল্লাহপাক ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছিলেন। রাসূলেপাক (সা.) ফিরে আসার পথে হযরত মূসা (আ.)-এর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি ৫০ ওয়াক্তের চেয়ে কমিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শে রাসূল (সা.) আল্লাহর দরবারে ফিরে যান।

আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কমিয়ে দেন। আবারও দেখা হয় হযরত মূসা (আ.)-এর সঙ্গে। তিনি আরো কমিয়ে আনতে বলেন। এভাবে নয় বার রাসূল (সা.) ফিরে গিয়েছেন আর প্রতিবারই পাঁচ ওয়াক্ত করে কমানো হয়। অবশেষে ৪৫ ওয়াক্ত কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ করা হয়। এরপর আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন রাসূল (সা.) কে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন : আমার কাছে যখন কোনো বিষয়ের ফয়সালা হয়ে যায় তখন তা আর পরিবর্তন হয় না। অতএব এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিনিময়ে পঞ্চাশ ওয়াক্তেরই সওয়াব প্রদান করা হবে। (জামে তিরমিজি : ২২১)।

কোরআনে কারীমে রাসূলকে লক্ষ্য করে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন : আপনি নামাজ আদায় করুন। দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের কিছু সময়ে। নিশ্চয়ই নেক আমল গোনাহকে মিটিয়ে দেয়। (সূরা হুদ : : ১১৪)। এ আয়াতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা বলা হয়েছে। দিনের দুই প্রান্ত বলতে সূর্য হেলে পড়ার আগে ও পরে। সূর্যের হেলে পড়ার আগে আমরা ফজরের নামাজ আদায় করি। সূর্য হেলে যাওয়ার পর আদায় করি জোহর ও আসর। আর রাতের কিছু অংশে পড়া হয় মাগরিব ও এশা। তো দিনে তিন ওয়াক্ত, রাতে দুই ওয়াক্ত। মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সহিহ বুখারীতে এসেছে, এক সাহাবি পর নারীকে চুম্বন করে ফেললেন। চুম্বনের পর সাহাবি অত্যন্ত অনুতপ্ত হন। তিনি পেরেশান হলেন, এত বড় গোনাহ করে ফেললাম, আমার কী উপায় হবে? তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ঘটনার বিবরণ শোনালে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন এ আয়াত নাজিল করেন : নিশ্চয়ই নেক আমল গোনাহকে মিটিয়ে দেয়। (সূরা হুদ : ১১৪)। সাহাবি প্রশ্ন করলেন, ‘নামাজ পড়লে এবং নেক কাজ করলে গোনাহ মাফ হয়ে যাবে’ এটা কি শুধু আমার জন্যই? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এ বিধান উম্মতের সব সদস্যের জন্য। (সহিহ বুখারী : ৪৬৮৭)।

কেউ যদি তওবার নিয়ত ছাড়াই নামাজ আদায় করে, তাহলে এর দ্বারা সগিরা গোনাহ মাফ হয়ে যায়। প্রতি ফরজ নামাজের পর তিন বার ইস্তিগফার পড়া সুন্নত। তো যে ব্যক্তি ফরজ নামাজের পর তওবার নিয়তে তিন বার ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ পড়বে তার কবিরা গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন, ইনশাআল্লাহ।

সহিহ বুখারীর অপর হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি তোমাদের কারও বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে, সে ওই নদীতে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোনো ময়লা থাকতে পারে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, না, তার দেহে কোনো ময়লা থাকতে পারে না। রাসূল (সা.) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্ত এমনই। আল্লাহপাক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সুবাদে সকল গোনাহ মাফ করে দেন। (সহিহ বুখারী : ৫২৮)।

নামাজ এমন এক ইবাদত যার মাধ্যমে বান্দা তার মালিক ও রব আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের সামনে নিজের দীনতা ও হীনতার চ‚ড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকে। নামাজের পদ্ধতিটাই এমন, এর দ্বারা মহান মালিকের সামনে তাঁর গোলামের গোলামি প্রকাশ পায়। নামাজে তাকবিরে তাহরিমার জন্য হাত ওঠানোর অর্থ হলো আত্মসমর্পণ করা। কেউ যখন কারও সামনে আত্মসমর্পণ করে তখন তার দৃশ্য এমনই হয়ে থাকে।

যুদ্ধের ময়দানে দুই পক্ষ লড়াই করছে। কোনো এক পক্ষ দুর্বল হয়ে পরাজয়বরণ করা ও নিঃশেষ হওয়ার উপক্রম হলে অপর পক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণের সময় সকলেই তাদের অস্ত্র ফেলে দিয়ে খালি হাত উঁচু করে নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করে নেয়। হাতে বন্দুক রেখে আত্মসমর্পণ হয় না।

তো নামাজে তাকবিরে তাহরীমার অবস্থাটা লক্ষ করুন। বান্দা যখন কান পর্যন্ত হাত তোলে তখন সে থাকে রিক্তহস্ত। যেন বান্দা বোঝাতে চাইছে, হে আল্লাহ আমি বহু অন্যায় করেছি, গোনাহ করেছি, সীমালঙ্ঘন করেছি কিন্তু আপনার দরবার ছেড়ে পালিয়ে যাব কোথায়। মাওলা আমি আপনার দরবারে হাজির হলাম। আমার সকল দীনতা, হীনতা স্বীকার করে দুই হাত তুলে আত্মসমর্পণ করলাম।

 


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার