ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আল্লাহপাকের জিকির থেকে গাফেল না হই

Daily Inqilab মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ

২৭ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৪ পিএম | আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

এই দুনিয়াতে আল্লাহপাকের কুদরতের বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। তাঁর প্রশংসা করেও কেউ শেষ করতে পারবে না। তিনি এতই বড়, এতই মহান। আল্লাহপাক স্বয়ং কোরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন : পৃথিবীতে যত গাছ আছে তার সব যদি কলম হয়ে যায়, আর পৃথিবীর সব সাগর-মহাসাগর এবং তার সঙ্গে আরও সাত সমুদ্র যোগ করে তার সবই যদি কালি হয় আর আল্লাহপাকের কথা লেখা হতে থাকে, তাহলে সে কলম ও কালি ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু আল্লাহপাকের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। (সূরা লুকমান : ২৭)।

এরপর আল্লাহপাক বলেন : তোমাদের সকলকে সৃষ্টি করা ও পুনর্জীবিত করা (আল্লাহর পক্ষে) একজন মানুষকে (সৃষ্টি করা ও পুনর্জীবিত করা)-এর মতোই। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছু দেখেন। (সূরা লুকমান : ২৭)। এ আয়াতেও আল্লাহপাকের কুদরত ও ক্ষমতার বিবরণ দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর সবাই মিলে চেষ্টা করলেও, সকল সামর্থ্য ব্যয় করলেও একজন মানুষ কেউ সৃষ্টি করতে পারবে না। আল্লাহপাক বলেন, তোমাদের সবাইকে সৃষ্টি করা এবং মৃত্যুর পর আবারও সৃষ্টি করা আমার কাছে একজনকে সৃষ্টি করা ও পুনরায় জীবিত করার মতোই। আল্লাহর কাছে বিষয়টি একেবারেই সহজ।

আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন কোরআনে কারীমে এভাবে তাঁর কুদরতের বিবরণ দিয়েছেন। মানুষ যেন তাঁর প্রতি ইমান আনে। তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করে। তাঁর হুকুম-আহকাম মেনে চলে। আমাদের দুনিয়ার এ জীবনই তো শেষ নয়। সামনে আমাদের জন্য আখেরাতের অনন্তকালের জীবন অপেক্ষা করছে। আখেরাতের তুলনায় এ দুনিয়ার জীবন কিছুই নয়। আখেরাতের জীবনের শুরু আছে, শেষ নেই।

মাটি থেকে নিয়ে আসমান পর্যন্ত সমগ্র পৃথিবী যদি সরিষা দানা দিয়ে পূর্ণ করে ফেলা হয় আর এখান থেকে বছরে একটি করে সরিষা দানা সরানো হয়, তাহলে একদিন এ পৃথিবী ভর্তি সরিষা দানা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আখেরাতের জীবন কখনো শেষ হবে না। অতএব সে অনন্ত জীবনের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য দুনিয়ার জীবনেই নেক কাজ করে যেতে হবে। যারা নেক কাজ করবে না, আল্লাহর নাফরমানি করে জীবন কাটাবে, তারা মৃত্যুর সময় বড় আফসোস করবে। বলবে, আল্লাহ আমাদেরকে আর কিছুদিন সময় দিন, আমরা পূর্ণ নেককার হয়ে যাব।

কোরআনে কারীমে বিষয়টি আল্লাহপাক এভাবে তুলে ধরেছেন : আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তোমরা (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করতে থাকো, সেদিন আসার পূর্বে যেদিন তোমাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হবে আর সে বলবে, হে আমার রব, আমাকে যদি একটু সুযোগ দিতেন। তাহলে আমি দান-সদকা করব এবং নেককার বান্দা হয়ে যাব। কারও নির্দিষ্ট সময় হয়ে গেলে তাকে আর সুযোগ দেয়া হবে না। আর তোমরা যা কিছু করো আল্লাহপাক তা জানেন। (সূরা মুনাফিকুন : ১০, ১১)।

সুতরাং আমাদেরকে হায়াত থাকতে থাকতে আখেরাতের পুঁজি সংগ্রহ করতে হবে। নেক আমল করতে হবে। দুনিয়া যেন আমাদেরকে আল্লাহ থেকে, আখেরাত থেকে গাফেল করে না রাখে। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বান্দাদের সতর্ক করে দিয়ে ইরশাদ করেছেন : হে ঈমানদাররা, তোমাদেরকে যেন তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে না রাখে। এমনটা যারা করবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মুনাফিকুন : ০৯)।

দুনিয়া আমাদেরকে আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল করে দেয়। সম্পদের পেছনে মানুষ জীবন শেষ করে দেয়। সন্তানদের জন্যও অনেক সময় মানুষ দ্বীন থেকে দূরে সরে যায়। এ বিষয়ে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। কোনোভাবেই যেন সময় নষ্ট না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু জিকির করতে হবে। আল্লাহপাকের নামের জিকিরের অনেক ফায়েদা। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন : যারা ঈমান আনে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তর শান্তি পায়। (সূরা রা’দ : ২৮)।

দিলের শান্তি ও প্রশান্তির মাধ্যম হলো আল্লাহপাকের জিকির। আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে যার কলব প্রশান্ত থাকবে তার মৃত্যুর সময় আল্লাহপাক তাকে সম্বোধন করে বলবেন : হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার রবের কাছে ফিরে চলো এমতাবস্থায় যে, তুমিও তার প্রতি সন্তুষ্ট আর তিনি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা ফাজর : ২৭-৩০)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসলামের শিক্ষা গুরুজন মান্যতার
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-২
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
আরও

আরও পড়ুন

যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড

যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড

যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল

যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল

ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা

ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা

টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের

টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের

নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ

নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ

রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল

রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল

দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক

বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক

৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪

৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪

থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত

থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত

গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক

গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক

নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী

নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’

সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়

সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে

পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে