তাগুত থেকে সাবধান
৩১ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
‘তাগুত’ আরবি ভাষায় বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। এ শব্দটি সীমালংঘনকারী বা নির্ধারিত সীমা অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম ‘ইলামুল মুয়াক্কেয়ীন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ‘তাগুত বলা হয় এমন প্রত্যেক ইবাদতকৃত সত্তাকে কিংবা অনুসৃত সত্তাকে অথবা আনুগত্যকৃত সত্তাকে, যার সম্বন্ধে ইবাদতকারী বা অনুসরণকারী অথবা আনুগত্যকারী তার বৈধসীমা অতিক্রম করেছে এবং ইবাদাতকৃতসত্তা বা অনুসৃত সত্তা অথবা আনুগত্যকৃত সত্তা তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নিয়েছে বা সেদিকে আহ্বান বা অনুপ্রাণিত করেছে।’
সুতরাং এর দ্বারা বুঝা যায় যে, তাগুত এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই প্রভু ও উপাস্য হবার দাবিদার সাজে এবং আল্লাহর বান্দাহগণকে নিজের বন্দেগী ও দাসত্বে নিযুক্ত করে। আল কুরআনে ‘তাগুত’ শব্দটি আটবার ব্যবহৃত হয়েছে।
যথা : (১) ইরশাদ হয়েছেÑ অতএব যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহর উপর ঈমান আনবে সে এমন এক শক্ত ও দৃঢ়তার রজ্জু ধারণ করল যা কখনো ছিড়বে না, ভাঙ্গবে না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (সূরা বাকারাহ : ২৫৬)।
(২) ইরশাদ হয়েছেÑ আর যারা কুফরী করে তাগুত তাদের অভিভাবক, এরা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়, তারাই অনলকু-ের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা বাকারাহ : ২৫৭)। (৩) ইরশাদ হয়েছেÑ তুমি কি তাদেরকে দেখনি যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছিল, তারা ‘জ্বিবত’ ও ‘তাগুতে’ বিশ্বাস করে? (সূরা নিসা : ৫১)।
(৪) ইরশাদ হয়েছেÑ তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তাতে তারা ঈমান এনেছে, অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচার প্রার্থী হতে চায়, যদিও সেটাকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (সূরা নিসা : ৬০)।
(৫) ইরশাদ হয়েছেÑ যারা মুমিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, আর যারা কাফের তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। (সূরা নিসা : ৭৬)।
(৬) ইরশাদ হয়েছেÑ এবং তাদের কেউ তাগুতের এবাদত করেছে। তারাই অবস্থানের দিক থেকে নিকৃষ্ট এবং সরল পথ থেকে সবচেয়ে বেশি বিচ্যুত। (সূরা মায়েদাহ : ৬০)।
উপরোক্ত আয়াতসমূহের আলোকে দুটি বিষয়ের সন্ধ্যান লাভ করা যায়। এর একটি হলো ‘জ্বিবত’ এবং দ্বিতীয়টি হলো ‘তাগুত’। এই শব্দ দুটির মর্ম সম্পর্কে তাফসীরকার মনীষী বৃন্দের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। যথা : (১) হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : অবিসিনীয় ভাষায় ‘জ্বিবত’ বলা হয় যাদুকরকে। আর ‘তাগুত’ বলা হয় গনক বা জ্যোতিষীকে। (২) হযরত উমর (রা.) বলেন : ‘জ্বিবত’ অর্থ যাদু এবং ‘তাগুত’ অর্থ শয়তান। (৩) হযরত মালেক ইবনে আনাস (রা.) বলেন : আল্লাহ ব্যতীত যে সমস্ত জিনিসের উপাসনা করা হয়, সে সবই তাগুত বলে অভিহিত হয়।
(৪) ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন : হযরত মালেক ইবনে আনাস (রা.)-এর উক্তিটির অধিক পছন্দনীয়। তার কারণ, আল কুরআন থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায়। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলেন : তোমরা আল্লাহর এবাদত করো এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাক। (সূরা নাহল : ৩৬)। কিন্তু উল্লেখিত বিভিন্ন মতের মধ্যে কোন বিরোধ নেই, কাজেই এর যে কোন একটিই গ্রহণ করা যায়। মূলত, জ্বিবত বলতে প্রতিমা ও মূর্তিকেই বোঝানো হতো। পরে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য পুজ্য বস্তুতে এর প্রয়োগ হতে আরম্ভ করে। (রুহুল মায়ানী)।
মোট কথা, আল্লাহর মোকাবেলায় বান্দাহর প্রভুত্বের দাবিদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার তিনটি পর্যায় রয়েছে। (১) প্রথম পর্যায়ে বান্দাহ নীতিগতভাবে আল্লাহর শাসন কর্তৃত্বকে সত্য বলে মেনে নেয়। কিন্তু জীবনযাত্রার সর্বত্র আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে। একে বলা হয় ‘ফাসেকী’।
(২) দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে বান্দাহ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের শাসন কর্তৃত্বকে নীতিগতভাবে মেনে না নিয়ে নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় অথবা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করতে থাকে। একে বলা হয় কুফরী ও শিরক।
(৩) তৃতীয় পর্যায়ে বান্দাহ মূল মালিক ও সর্ব শক্তিমান আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং স্বীয় রাজ্যে এবং তার প্রজাদের মধ্যে নিজের হুকুম চালাতে থাকে। এই শেষ পর্যায়ে যে ব্যক্তি পৌঁছে যায়, তাকেই বলা হয় ‘তাগুত’। সুতরাং তার মাঝে ফাসেকী, কুফরী ও শিরক এবং আল্লাহ দ্রোহীতার সকল দোষই বিদ্যমান থাকে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল
ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা
টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের
নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ
রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল
দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম
এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’
বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক
৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪
থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত
গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী
ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’
সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত