হিংসা, চুলার আগুন যেমন-২
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
পবিত্র কুরআনের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বনী ইসরাঈল তথা ইহুদী-খ্রিস্টানদের আলোচনা। জাতি হিসেবে তাদের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ। তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা দান করেছিলেন অজ¯্র বড় বড় নিয়ামত। আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিস সালামের পবিত্র কাফেলার প্রায় সকলেই ছিলেন বনী ইসরাঈল গোত্রভুক্ত। তাদেরকে দেয়া হয়েছিল আসমানি অনেক কিতাব। কিন্তু এতকিছু পেয়েও তারা শোকরগুজার ছিল না। ছিল না আল্লাহ তায়ালার হুকুমের পূর্ণ অনুগত। তাঁর বিধান তারা লঙ্ঘন করেছে। আসমানি কিতাবে হয়ত বিকৃতি ঘটিয়েছে, কিংবা তার ওপর আমল করা ছেড়ে দিয়েছে। নবীদেরকে নানাভাবে কষ্ট দিয়েছে।
এমনকি তাদের হাতে প্রাণও গেছে অনেক নবীর। পরিণামে তারা আমাদের কাছে আজ আলোচিত অভিশপ্ত এবং আল্লাহর গজবে নিপতিত জাতি হিসেবে। তাদের কিতাবসমূহে শেষ নবীর কথা ছিল। তাঁর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের বিবরণ ছিল। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহ তায়ালা যখন শেষ নবী হিসেবে পাঠালেন, তখন তারা তাঁকে চিনতেও পারল। সে চেনাও কেমন? পবিত্র কুরআনের বর্ণনানুসারেÑনিজের ছেলেসন্তানকে মানুষ যতটুকু শক্তির সঙ্গে চেনে, তাদের চেনা ছিল আরও গভীর, আরও শক্তিমান।
কিন্তু তা সত্ত্বেও কেবলই ইসরাঈলী না হওয়ার কারণে তারা একদিকে তাঁর নবুওত মেনে নিতে অস্বীকার করে। উপরন্তু যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে, হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে শেষ নবী হিসেবে মেনে নিয়েছে, তারা যেন এ সঠিক ও সরল পথ ছেড়ে আগের ভ্রান্ত ও বাঁকা পথে ফিরে যায়Ñতারা সে কামনাও করত। এর মূলে ছিল কেবলই হিংসাÑসঠিক দ্বীন আমরা মানি না তো তারা মানবে কেন? পবিত্র কুরআনের ভাষায় : আহলে কিতাবদের অনেকেই তাদের নিকট সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরও হিংসাবশত কামনা করেÑতোমাদের ঈমান আনার পরও যদি তারা তোমাদের কাফের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারত! (সূরা বাকারা : ১০৯)।
আরেকজনের কোনো নিয়ামত দেখে তা বিলুপ্তির কামনা করা হিংসার প্রথম ধাপ। এর পরের ধাপ হচ্ছে, মনে যখন কারও প্রতি হিংসা জন্ম নেয় তখন এর চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা। তা হতে পারে তার কোনো ক্ষতি করার মধ্য দিয়ে, হতে পারে তার কোনো ক্ষতিতে আনন্দ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এসব যেহেতু তার কর্ম। তাই এর কারণে সে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে। জবাবদিহিতার মুখোমুখি হবে তখনো, যদি সে তার হিংসার কথা মুখে প্রকাশ করে ফেলে। যতটুকু মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, অর্থাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে কারো প্রতি হিংসার ভাব উদ্রেক হওয়াÑতাতে গোনাহ হবে না।
তবে গোনাহ হোক আর নাই হোক, হিংসা অবশ্যই মানবচরিত্রের একটি মন্দ দিক। মনের হিংসার দাবিতে কেউ যদি অন্যায় আচরণ করে, ক্ষতি করার সুযোগ খোঁজে তাহলে তা যে নিন্দনীয়Ñতা কে অস্বীকার করবে! হিংসা যে মানুষকে অন্যায়ে উৎসাহিত করেÑতাও জানা কথা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা নবী মুহাম্মাদ (সা.)-কে শিখিয়েছেন হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা : এবং (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে। (সূরা ফালাক : ৫)।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে : তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থেকো। কারণ হিংসা নেক আমলসমূহকে গ্রাস করে নেয়, যেভাবে আগুন গ্রাস করে লাকড়ি (অথবা ঘাস)। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯০৫)। শুকনো ঘাস আর লাকড়ি যেমন আগুনের সামনে অসহায়, হিংসার আগুনের সামনে মানুষের নেক আমলও তেমনি অসহায়। হিংসার আগুন গ্রাস করে নেয় ব্যক্তির যাবতীয় নেক আমল।
নবীজী (সা.) আরেক হাদিসে হিংসাকে তুলনা করেছেন পানির সঙ্গে। দুই হাদিসের দুই উপমা বাহ্যত বিপরীতমুখী মনে হলেও এ বিবেচনায় তো অবশ্যই একÑআগুন যেমন লাকড়ি আর ঘাসকে জ্বালিয়ে শেষ করে দেয়, পানিও তেমনি আগুনকে নিভিয়ে দেয় মুহূর্তেই। আগুনের সামনে লাকড়ি আর ঘাসের প্রাচুর্য যেমন কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়, পানির সামনেও আগুনের বিশালতা উল্লেখ করার মতো কিছু নয়।
হাদিসের ভাষ্য এমন : সন্দেহ নেই, হিংসা নেক আমলসমূহের নূর ও আলোকে নিভিয়ে দেয়। (সুনানে আবু দাউ : ৪৯০৬)। হিংসা তাই সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। এ হিংসা কোনো মুমিনের চরিত্র হতে পারে না। হাদিসের বক্তব্য এমনই : কোনো বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও হিংসা একত্রিত হতে পারে না। (সুনানে নাসাঈ : ৩১০৯)।
মনকে হিংসামুক্ত রাখার জন্যে প্রিয় নবীজী (সা.) এর এ দুয়াটিও সবিশেষ উল্লেখযোগ্য : প্রভু আমার! আপনি আমার তওবা কবুল করুন, আমার পাপরাশি ধুয়ে দিন, আমার ডাকে সাড়া দিন, আমার দলীল-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করুন, আমার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার যবানকে সঠিক রাখুন আর আপনি আমার অন্তরের যাবতীয় কলুষতা দূর করে দিন। (সুনানে আবু দাউদ : ১৫১২)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল
ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা
টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের
নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ
রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল
দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম
এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’
বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক
৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪
থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত
গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী
ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’
সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত