বাকশক্তির ব্যবহার, শৈথিল্য ও সীমালঙ্ঘন-১
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
‘তুমি বড় বেশি কথা বলো’, ‘অত কথা বলো না’, ‘অমুকে শুধু বকবক করে’Ñএ জাতীয় নানা বাক্যের সাথে আমরা পরিচিত। অন্যদের এ রকম বাক্য ব্যবহার করতে শুনি, নিজেরাও বলি। তার মানে অতিকথা। অহেতুক কথা বা প্রয়োজনের বেশি কথা আমরা পছন্দ করি না। কেউ পছন্দ করে না। যে ব্যক্তি নিজে বেশি কথা বলে অভ্যস্ত সেও অন্যের মুখে বেশি কথা শুনতে চায় না। সেও অন্য কেউ যখন বেশি কথা বলে অমনি মন্তব্য করে ‘তুমি বড় বেশি কথা বলো’।
অর্থাৎ বেশি কথা বলাটা যে ভালো নয়, তা সকলেই জানে ও মানে, কিন্তু অধিকাংশেই নিজের বেলায় তা আমলে নেয় না। অন্যকে বেশি কথা না বলতে উপদেশ দেই, কিন্তু নিজে হামেশাই বলি। নিজে বেশি বলতে পছন্দ করি, বলতে পারাকে কৃতিত্ব মনে করি এবং বেশি বলে আনন্দ বোধ করি। আনন্দ বোধ করি বলে, সময়ের বাছ-বিচার করি না, স্থান বিবেচনায় রাখি না এবং পাত্রেরও প্রভেদ লক্ষ্য রাখি না। অর্থাৎ স্থান-কাল-পাত্র নির্বিচারে আমরা কথা বলতে থাকি। যে স্থানে যে কথা খাটে না, বলা যায় না বা বলা উচিত নয়, সেখানে তা অবলীলায় বলি।
যে কথা যে সময়ের নয়, সে কথা ওই অসময়ে ছাড়তে থাকি। যাকে যে কথা বলা যায় না বা বলা উচিত নয় তাকে লক্ষ্য করে সে কথা বলে ফেলি। ফলে সবটাই হয়ে যায় বেহুদা কথা ও অতিকথা। স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় রেখে যে কথা বলা হয়, তা হয় কাজের কথা আর তা বিবেচনায় না রাখলে দামী কথাও বেহুদা কথা হয়ে যায়। কারণ সে কথায় কেবল সময়ই নষ্ট করা হয়, কারও কিছু উপকার হয় না। সেই উপকারহীন কথা আমরা বলি বা শুনতে পাই যানবাহনে, সভা-সেমিনারে, মিটিংয়ে, এমনকি শ্রেণিকক্ষে।
এই নির্বিচার কথা, যা অনুপকারী কথা বা বেহুদা কথার নামান্তর, কারা বলছে? অজ্ঞ-অশিক্ষিত লোকে? না, বরং শিক্ষিতজন। অশিক্ষিতদের তো সভা-সেমিনারে কথা বলার সুযোগ নেই। বেহুদা কথা তারা বললেও সীমিত গ-িতে বলে। যে কোনো স্থানে তাদের কথা বলার সুযোগ ও ক্ষমতা নেই। সে সুযোগ ও ক্ষমতা শিক্ষিতদেরই আছে। যত্রতত্র নির্বিচার কথা তারাই বলে। সব কথায় তারা সর্বত্র মুখর।
এর উল্টাটাও আছে। অনেক সময়ই স্থান-কাল-পাত্রের দাবি কথা বলা। যথোপযুক্ত কথা বলা। যা বলা না হলে ব্যক্তিবিশেষের বা সমষ্টির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাস্তবে ক্ষতি হয়েও যায়। কিন্তু অনেকেই তা বলি না। বলার সুযোগ থাকে, ক্ষমতাও থাকে, তাও বলা হয় না। মুখর স্বভাবের লোককেও দেখা যায়, প্রয়োজনের সময় প্রয়োজনীয় কথাটি বলে না। হয়ত প্রতিবেশী ভদ্র লোকটি (?) বউ পেটাচ্ছে। আশপাশের সবাই শুনতে পাচ্ছে তার হিংস্র চিৎকার। শুনছে স্ত্রীর আর্তনাদও। কিন্তু কেউ তাকে বলছে না, ওহে! তুমি এসব কী করছ? শিক্ষিত সামাজিক লোকটি তার গৃহকর্মীকে মারছে। কিন্তু তাকে লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে না ‘ওহে বীর! এর ওপর তোমার যত ক্ষমতা, তোমার ওপর আল্লাহর ক্ষমতা তার চেয়ে ঢের বেশি।’
রিকশাচালকের গালে চড় বসিয়েছে শক্তি মদমত্ত যুবক। তাকে শাসানোর বা বোঝানোর ক্ষমতা যাদের আছে, সবাই নিরব-দর্শক। কেউ বলছে না, তুমি এটা কী করলে! দুই শিশু মারামারি করছে। হম্বি-তম্বিতে অভ্যস্ত গুরুজন তা দেখছে। কিন্তু নিজের কেউ না হওয়ায় যেন তার কোনও দায় নেই। একটি ধমকও সে তাদের উদ্দেশে খরচ করছে না। জালিমের জুলুম চোখে পড়ে ঘরে-বাইরে সর্বত্র। অন্যায়-অনুচিত কাজ ঘটতে দেখা যায় অহর্নিশ। প্রকাশ্যে দিবালোকে নানা অনাচার চোখের সামনেই আমরা হতে দেখি। দু’কথা বলার অল্প বিস্তর ক্ষমতাও আছে। সব জায়গায় না থাকলেও অনেক জায়গায়ই সে ক্ষমতা আছে। কিন্তু সর্বত্র আমরা নিরব দর্শক হয়েই থাকছি। এ মহা মৌনতার কি কোনও জবাব আছে?
একদিকে অতিকথা, অন্যদিকে মহামৌনতা। যেখানে দরকার কথা বলার, সেখানে থাকছি নিরব, আর যে স্থানের দাবি নিরবতা, সেখানে বলার অদম্য উৎসাহ। বাকশক্তির ব্যবহারে এই দ্বিবিধ প্রান্তিকতার শিকার অধিকাংশ লোক। হয় অতিকথনের সীমালংঘন, নয়ত অনুচিত মৌনতার শৈথিল্য। উভয়টিই ক্ষতিকর, যেমন ব্যক্তির নিজের পক্ষে, তেমনি সমাজ ও সমষ্টির পক্ষেও।
বাকশক্তি আল্লাহ তায়ালার একটি নিয়ামত ও মহা দান। বহুমুখী প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে তিনি এ নিয়ামত বান্দাকে দান করেছেন। বান্দার বহুবিধ কল্যাণ এর মধ্যে নিহিত। প্রয়োজনস্থলে এ শক্তির ব্যবহার দ্বারাই সেসব কল্যাণ লাভ হতে পারে। যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে ব্যবহার দ্বারা শক্তির অপচয় ছাড়া কিছু হয় না। বরং যে কোনও শক্তির অপচয়ই সংশ্লিষ্ট সকলের পক্ষে ক্ষতিকর; তা অর্থশক্তি হোক, পেশিশক্তি হোক বা অন্য কোনও শক্তি। যেমন স্থান-কালের চাহিদা মোতাবেক তার ব্যবহার না করাটাও সমান ক্ষতি বয়ে আনে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন
মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ
পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়
সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা
ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি
‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস