ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাফিকুল মাহদী সম্প্রদায়ের উত্থান

Daily Inqilab এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

আমরা পূর্ববর্তী আলোচনায় দ্বীন ইসলামের ধারক ও প্রচারক যে নতুন সম্প্রদায়ের অভ্যুদয় অত্যাসন্ন বলে উল্লেখ করেছি, তাঁরাই হলেন রাফিকুল মাহদী সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা সাইয়্যেদেনা হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর বন্ধু, দোসর সাথী, সহচর ও সৈনিক হিসেবে কাজ করবেন এবং বিশ্বময় ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় নিজেদের জান এবং মাল অকাতরে উৎসর্গ করবেন।

আরবী ‘রাফিক’ শব্দটি রিফকুন্ মূল ধাতা হতে উৎসারিত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্চে নরম, সহজ, প্রাণস্পর্শী, আদরনীয়। আর ‘রাফিক’ শব্দের অর্থ হলো বন্ধু, সাথী, সহচর, ভালোবাসার পাত্র। আল কুরআনে রাফিক শব্দটি একবার এসেছে। ইরশাদ হয়েছে : আর কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করলে সে নবী, সিদ্দীক (সত্যনিষ্ঠ) শহীদ ও সৎ কর্মপরায়ন যাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করেছেন তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী। (সূরা আন্নিসা : ৬৯)।

এই আয়াতে কারীমায় স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে তারা পরকালে নবী, সিদ্দীক (সত্য নিষ্ঠ) শহীদ ও সালেহিনদের যাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করেছেন, তাদের বন্ধু ও সাথী বলে গৃহীত হবে। নবী বলতে তাঁদেরকেই বুঝায় যাঁরা ওহি বা কিতাব লাভ করেছেন। সিদ্দিক বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায় সে পরম সত্যনিষ্ঠ, সত্যবাদী। যার মধ্যে সততা ও সত্যবাদিতা পূর্ণ মাত্রায় বিরাজিত থাকে। নিজের আচার-আচরণ ও লেন-দেনে ইনসাফের সহযোগী হয়। সত্য ও ন্যায় নীতি বিরোধী যে কোনো বিষয়ের বিরুদ্ধে সে পর্বত সমান অটল অস্তিত্ব নিয়ে রুখে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে সামান্যতম দুর্বলতাও দেখায় না।

সে এমনই পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হয় যে তাঁর আত্মীয়-অনাত্মীয় বন্ধু শত্রু, আপন-পর কেউই তাঁর কাছ থেকে নিখাদ সত্য প্রীতি, নির্মলতা, সত্য সমর্থন ও সত্যবাদিতা ছাড়া আর কিছুরই আশঙ্কা করে না। কোনোরকম দ্বিধা সংকোচ ও শত্রুতা তাঁদের মনে কখনো স্থান পায় না। যেমনটি ছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)। শহীদ বলতে তাদেরকেই বুঝায় যারা ধর্ম যুদ্ধে দ্বীন ও ইমানের হেফাজতের লক্ষ্যে নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন।

শহীদগণ মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে জীবিত। আর সালেহিন ও সৎকর্মশীল বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যে তাঁর নিজের চিন্তা ধারা আকিদা বিশ্বাস ইচ্ছা, সংকল্প এবং কথাও কর্মের মাধ্যমে সত্য-সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে। এর সাথে নিজের জীবনে সৎ ও সুনীতি অবলম্বন করে। আর যারা প্রকাশ্য ও গোপন সবক্ষেত্রেই সৎকর্ম সমূহের অনুবর্তী।

মোটকথা, রাফিকুল মাহদী বান্দাহগণ তাদের আমলের ভিত্তিতে জান্নাতে তাদের পদমর্যাদা লাভে ধন্য হবেন। কেননা তারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করেছে। আল্লাহর নির্দেশ পালন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসরণই ছিল তাদের জীবনের পথ এবং পাথেয়। এজন্য তাদেরকে তাদের আমল তথা কৃতকর্ম অনুযায়ী পদমর্যাদা প্রদান করা হবে। যথা. তাদের প্রথম শ্রেণির লোকদেরকে আল্লাহপাক নবীও রাসূলগণের সাথে জান্নাতের উচ্চতর স্থানে জায়গা দেবেন। আর দ্বিতীয় শ্রেণির লোকদেরকে নবীগণের পরবর্তী মর্যাদার লোকদের সাথে স্থান দেবেন। যাদেরকে সিদ্দিকিন বলা হয়। অতঃপর তৃতীয় শ্রেণির রাফিকুল মাহদী লোকেরা শহীদগণের সাথে থাকবেন। আর চতুর্থ শ্রেণির লোকেরা সালেহিনদের সাথে থাকবেন।

সার কথা, আল্লাহপাকের চয়নকৃত রাফিকুল মাহদী বান্দাহগণ সে সকল মহান ব্যক্তিদের সাথে জান্নাতে থাকবেন, যারা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের নিকট সর্বাধিক সম্মানীত ও মকবুল। এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : জান্নাতবাসীরা নিজেদের জানালা দিয়ে উপরের শ্রেণির লোকদেরকে তেমনিভাবে দেখতে পাবে যেমন পৃথিবীতে তোমরা সুদূর দিগন্তে নক্ষত্রকে দেখ। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কি শুধু নবী রাসূলগণ? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, অবশ্যই না। তারা এমন কিছু লোক যারা আল্লাহর ওপর ইমান এনেছে এবং নবী ও রাসূলদের সহায়তা করেছে। (সহিহ বুখারি : ৩২৫৬; সহিহ মুসলিম : ২৮৩১)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের

নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২

এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন

ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন

মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া

মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত

পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি

‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’

‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ