দ্বীন পালনে সংকোচ দুঃখজনক বাস্তবতা-২
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৮ পিএম | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
মানব জীবনের নিতান্ত ছোট ও ক্ষুদ্র এবং ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও বৈশ্বিক পর্যায়ের সবচে বড়, সবচে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচে জটিল বিষয়েও ইসলামের সুষ্পষ্ট, সর্বোৎকৃষ্ট এবং সু-উপযোগী শিক্ষা, সমাধান ও বিবরণ রয়েছে। আর এই দ্বীন যেহেতু কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের জন্য এবং তা মানব জাতির স্রষ্টার পক্ষ থেকে নির্ধারিত, সুতরাং তাতেই প্রকৃত কল্যাণ, দুনিয়া ও আখেরাতের প্রকৃত সফলতা নিহিত। একথা বিশ্বাসে যেমন বদ্ধমূল হতে হবে, আমল-আচরণেও তার সুস্পষ্ট প্রকাশ হতে হবে। আর এই প্রকাশ হতে হবে সৌভাগ্য ও গর্বের অনুভূতির সাথে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলোÑ অনেক সময় দেখা যায়, তথাকথিত সভ্য সমাজে দ্বীনদারী রক্ষা করে চলা ব্যক্তি ও পরিবার কেমন যেন কোণঠাসা বোধ করেন। নিজেদের চেতনা বিশ্বাস ও কর্মরীতিকে লুকিয়ে পালন করতে চেষ্টা করেন। অথবা কিছুটা সংকোচ নিয়ে পালন করেন। যেন সবার সামনে নিজেদের এই আচার-পদ্ধতি প্রকাশ না পেলেই ভালো। যেন এটা নিজেদের অসম্মান ও নিম্ন শ্রেণি তার প্রমাণ। ফলে দ্বীন মানার কোনো প্রসঙ্গ বা ক্ষেত্র প্রকাশ পেয়ে গেলে কেমন যেন অপ্রয়োজনীয় ব্যাখ্যার আশ্রয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করেন। অপারগতা ও দুর্বলতা জাহির করেন। একজন মুমিনের জন্য যা মোটেও শোভনীয় নয়।
উদাহরণ স্বরূপ, ঘরোয়া বা সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেলোÑ অনেকে বাম হাতে চা কফি খাচ্ছে। সেখানে দ্বীনদার কেউ ডান হাতে খেতে আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও ইতস্তত বোধ করছে। ডান হাতে খাওয়াটাকে আভিজাত্য পরিপন্থি মনে করছে। অথবা সেখানে ইসলামী শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান ‘পর্দা’ লঙ্ঘন করে নারীদের কেউ কেউ চেহারা খুলে রেখেছে। কিংবা অনৈসলামিক পোশাক পরে আছে। তখন পর্দানশীন কোনো নারী বা তার অভিভাবক সেখানে পর্দা রক্ষা করতে সংকোচ করছেন। কিংবা দ্বীন পালনের কারণে বোরকা পরা বা চেহারা ঢেকে রাখার জন্য নানা অজুহাত পেশ করছেন। নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করছেন।
তেমনিভাবে এমন কোনো আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছেন, যারা নিয়মিত নামজ পড়ে না। সেখানে নামাজের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার পরও নামাজের প্রসঙ্গ তুলতে সংকোচবোধ করছেন। নামাজ পড়তে চাইলে তারা কী ভাববে অথবা নামাজ পড়তে চাওয়া এখানে ঠিক হবে কি নাÑ এসব ভাবতে ভাবতে নামাজ কাজা হয়ে যাচ্ছে। দ্বীন পালনে এমন সংকোচ ও হীনম্মন্যতা অবশ্যই পরিত্যাগ করা উচিত। হৃদয়ে লালন করা উচিত দ্বীন পালনের তীব্র আগ্রহ এবং প্রকৃত সৌভাগ্যের অনুভূতি। বাস্তবেই দ্বীন পালন করা একজন মুমিনের জন্য যেমন জরুরি বিষয় তেমনি আনন্দ, সৌভাগ্য ও গর্বেরও বিষয়।
মুমিনের উচিত এই আনন্দ, সৌভাগ্য ও গর্বকে উপলব্ধি করা। নিজেদের মজবুত অবস্থান থেকে স্বাধীনভাবে বিষয়গুলো আঞ্জাম দেওয়া। এবং সুযোগে সময়ে পশ্চিমা সভ্যতার আত্মীয়-পরিজনদেরকেও বিষয়গুলো জানানো ও বোঝানো। অন্তত নিজের ভেতর যে সৌভাগ্যের অনুভূতি আছে সেটা প্রকাশ করা। হীনম্মন্যতা ও নিজেকে তুচ্ছ জ্ঞান করা কিংবা দ্বীন মানাকে দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা মনে করা কোনোভাবেই মুমিনের শান হতে পারে না। মুমিনের ইমান তো তার শক্তির উৎস। তার সৌভাগ্যের সুউচ্চ মিনার।
সাহাবি হযরত উমর ফারূক (রা.)-এর সেই উক্তি বারবার স্মরণ করার মতো, যা তিনি হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)-কে লক্ষ করে বলেছিলেন। হযরত উমর (রা.) তখন মুসলিম জাহানের খলিফা। খ্রিস্টানদের সাথে একটি চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি শামে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একটি জলাভূমি বা অগভীর খাল ছিল। তার ওপারে মুসলিম খ্রিস্টান সবাই তাঁকে সম্ভাষণ জানাতে এসেছে। হযরত উমর খালের সামনে গিয়ে উট থেকে নেমে পড়লেন। পা থেকে চামড়ার মোজা খুলে কাঁধে ঝুলিয়ে নিলেন। এরপর নিজেই উটের লাগাম ধরে পানিতে নেমে গেলেন।
এই দৃশ্য দেখে হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) বললেন, আমীরুল মুমিনীন! পুরো শহরবাসী আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনি নিজ হাতে উটের লাগাম ধরে চলছেন! পায়ের মোজা (সাধারণ মানুষের মতো) কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়েছেন! .... আমার কাছে বিষয়টি ভালো লাগছে না। হযরত উমর (রা.) তাকে বললেন, থাম আবু উবাইদা! আজ তুমি ছাড়া যদি অন্য কেউ একথা বলত...।
এরপর বললেন সেই ঐতিহাসিক বাণী : (শোন!) আমরা ছিলাম অত্যন্ত হীন জাতি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইসলামের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন। অতএব যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সম্মান দান করেছেন তা ছাড়া যখনই অন্য কিছুতে সম্মান তালাশ করব, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে লাঞ্ছিত করে ছাড়বেন। (মুসতাদরাকে হাকেম : ২০৭)।
কী দৃপ্ত উচ্চারণ! কী আত্মবিশ্বাসী বাণী! নিজ হাতে উটের রশি ধরে চলা আর শুকনো চামড়ার মোজা প্রয়োজনে কাঁধে ঝুলিয়ে নেওয়া এতে সরলতা আছে, সামাজিকতা আছে, আছে বিনয় ও আত্মবিলোপের গভীর প্রকাশ। তাতে দ্বীনবিরাধী কিছু তো নেই। অন্যায় নেই। অহংবোধ নেই। অসম্মান নেই। নেই অনভিজাত সংকোচের কোনো কিছু।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যে সন্মান অর্জন করেছেন তা এইভাবে নষ্ট কইরেন না
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
সম্পর্ককে বাণিজ্য সহযোগিতায় রূপান্তরের জন্য আর্জেন্টিনার প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
গ্রেফতারকৃত এসকে সুরের বাসায় দুদকের অভিযান, ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার
চাল আমদানির সময় বাড়ল ২৭ দিন: দুইমাসে ৯,৬৬২ টন চাল আমদানি হলেও প্রভাব নেই বাজারে
সিরিয়ার আসাদ সরকারের মাদক বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ
হাইকোর্টে চিন্ময়ের জামিন আবেদন, শুনানি সোমবার
পুলিশ লাইন্সে ফ্যানের সঙ্গে নারী কনস্টেবলের লাশ ঝুলছিল
দাউদকান্দির গৌরীপুর চররায়পুর আসমানিয়া সড়কে বড় বড় গর্ত, জনদুর্ভোগ চরমে
লৌহজংয়ে যানবাহন চলাচলে জন্য বালিগাঁও সেতু উন্মুক্ত করা হয়েছে
নারায়ণগঞ্জে পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি, ৮ ডাকাত গ্রেপ্তার
ভারতের প্রথম মহিলা নৃবিজ্ঞানী ইরাবতী কারভে, সাহসী গবেষক ও সংস্কারক
মুজিবনগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালন
ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ!
মিডিয়া থেকে ইসলামফোবিয়া কবে যাবে? সারজিস আলম
যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখল ইসরাইল
দাউদকান্দিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালিত
টেকনাফমুখী ৪টি পণ্যবাহী জাহাজ এখনো ছাড়েনি আরাকান আর্মি
বাঁওড়ের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
মার্কিন মুলুকে নিষিদ্ধ টিকটক, আমেরিকা প্লাটফর্মটি প্রত্যাশা করেঃ মি.বিষ্ট