মানবজাতির সংকট নিরসনে নববী আদর্শের শিক্ষা-১
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

নবী করীম (সা.)-এর ওফাতের পর কিছু সাহাবী যখন উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাযি.)-এর নিকট জানতে চেয়েছিলেন যে, নবী করীম (সা.)-এর জীবনাচরণ কেমন ছিল? তখন হযরত আয়েশা (রাযি.) তাদের উত্তরে বলেছিলেন, ‘মহাগ্রন্থ আল কোরআনই ছিল তাঁর জীবনাচরণ।’
এতে আমরা বুঝতে পারি, হযরত নবী করীম (সা.) ছিলেন আল কোরআনের প্রার্থিত চরিত্র। এই কিতাবের দ্বারাই তিনি মুমিন সম্প্রদায়কে দুনিয়া ও আখেরাতের আদর্শ সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। আল কোরআনের তাফসীর হচ্ছে হিকমাহ বা সুন্নতে নববী। এর প্রকৃত নমুনা হচ্ছেন স্বয়ং নবী করীম (সা.), যাঁর সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন : নিশ্চয়ই আপনি মহান জীবনাচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত। (সূরা ক্বলাম : ০৪)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন : তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের কামিয়াবী চায় আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। (সূরা আহযাব : ৩৩)। মূলত, আখলাকে নববীর দ্বারাই মানবতা মুক্তি পেয়েছে। আজ এবং আগামী দিনেও মানুষ যদি মুক্তি ও কামিয়াবী চায় তাহলে তাকে আখলাকে নববীর আলোকেই নিজের জীবন গঠন করতে হবে।
দুনিয়াতে সাহাবা, তাবেয়ী, তাবয়ে তাবেয়ী, শুহাদা, মুজাহিদীন, আইম্মাহ, উলামা ও সুলাহা শ্রেণি মূলত আখলাকে নববীর চর্চা ও প্রসারের খেদমতই আঞ্জাম দিয়েছেন। কোরআন, সুন্নাহ, দীন ও শরীয়ত মূলত আখলাকে নববীরই বিস্তারিত রূপ। বর্তমান যুগে ও ভবিষ্যতে নববী ইলম ও জীবনাচার ধারণ, লালন, প্রচার ও প্রতিষ্ঠা আলেমসমাজ এবং তলাবাদের জীবনের লক্ষ্য। এ জন্য মানুষের স্বভাবজাত মন্দ আখলাক ও নিন্দিত আচরণ নিজের জীবন থেকে দূর করে উচ্চতর মানবিক গুণ ও উন্নত জীবনাচার অর্জন করাই ইলম হাসিলের মূল লক্ষ্য।
যে মিশন নিয়ে আল্লাহর পিয়ারা নবী দুনিয়াতে এসেছিলেন। আল্লাহ বলেন : আল্লাহ, যিনি আরবের (মুক্তমনা) মানুষের কাছে তাদের মধ্য হতেই নিজ রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। তিনি তাদের কাছে আল্লাহর আয়াত ব্যাখ্যা করে বোঝাবেন, তাদের অন্তর ও জীবনাচারকে পরিশুদ্ধ করবেন, তাদের কোরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দেবেন। (সূরা জুমুআ : ০২)।
এখানে প্রতীয়মান হয় যে, দীনি ইলম শেখার পাশাপাশি মানুষ হিসেবে সর্বোচ্চ নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হওয়া নবী করীম (সা.)-এর শিক্ষা, দীক্ষা ও সোহবতের অন্যতম উদ্দেশ্য, যা নবী করীম (সা.)-এর হাদিস থেকে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি ইরশাদ করেন : ঈমানের দিক থেকে সেই ব্যক্তিই পরিপূর্ণ, আখলাক ও আচরণের দিক থেকে যিনি সেরা। (জামে তিরমিযী : ১১৬২)।
অন্য হাদিসে এসেছে : আমলের পাল্লায় উত্তম চরিত্র ও আচরণের চেয়ে ভারী আর কোনো আমল হবে না। (জামে তিরমিযী : ২০০৩)। নবী করীম (সা.) নিজের দুনিয়ায় নবী হিসাবে আগমনের অন্যতম কারণ হিসাবে বলেছেন : সৎ ও উত্তম চরিত্র আচরণ বা জীবনাচারের চরম উৎকর্ষ ও পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি। (মুসনাদে আহমাদ)।
ইসলামী শিক্ষার মূল হলো এই পাঁচটি বিষয়। এর মধ্যে আক্বাইদ ও ইবাদত আল্লাহর সঙ্গে খাস। যদিও বান্দার স্বার্থ জড়িয়ে আছে এমন ইবাদতও আল্লাহ বিধিবদ্ধ করেছেন। তবে আর্থসামাজিক ও চারিত্রিক বিধানাবলি বলতে গেলে প্রায় সবগুলোই বান্দার হকের সাথে জড়িত। মুআমালাত, মুআশারাত ও আখলাক বিশেষভাবে হুকুকুল ইবাদের অংশ।
এসব বিষয়ে মানুষের মনের জগতে বিপ্লব আনার মধ্যদিয়ে মহানবী (সা.) একটি বড় পরিবর্তন এনেছিলেন, যার নজির পৃথিবীতে নেই। তিনি একটি উম্মাহ সৃষ্টি করেছেন। নতুন জীবনব্যবস্থা দান করেছেন। নতুন জাতি, নতুন সভ্যতা, নতুন জীবনবোধ ও নতুন বিশ^ব্যবস্থা দিয়েছেন। মানুষের বস্তুগত ও মর্মগত পূর্ণতা দান করেছেন। শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক বিপ্লব সংঘটিত করে বিশ^কে চির দিনের জন্য শান্তি ও মুক্তির বার্তা শুনিয়েছেন। জাহেলি যুগে যে অজ্ঞতা ও অন্ধকার পৃথিবীকে ছেয়ে ছিল, যে অন্যায়-অনাচার মানবসভ্যতাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে দাঁড় করিয়েছিল তা থেকে সবাইকে মুক্ত করেছেন।
পৃথিবীর সব জায়গায় এখন সভ্যতার যে সংকট চলছে তার সমাধান পরিপূর্ণরূপে ইসলামে রয়েছে। নবী করীম (সা.) যখন দুনিয়াতে এসেছিলেন তখন দুনিয়া যেমনই থেকে থাকুক, এর সমস্যা যে ধরনেরই থেকে থাকুক কিংবা ছোট আকারে এর জনসংখ্যা যে পরিমাণই থেকে থাকুক সংকটের বিচারে আজকের পৃথিবী মোটেও তার থেকে ভিন্ন নয়। এখনো পৃথিবীতে মানুষই বসবাস করছে। মানুষের দোষ-গুণ ও চরিত্র আগের মতোই আছে।
এখানে সভ্যতার দ্বন্দ্ব, স্বার্থের সংঘাত, ক্ষমতার রাজনীতি, প্রতিপত্তি বিস্তার যেমন আছে ঠিক তেমনই দম্ভ, অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ, জিঘাংসা, প্রতিশোধপ্রবণতা, শোষণ, অত্যাচার, অন্যায়, অবিচার, পাপ ও ব্যাভিচার সবই আছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কারণে, মানুষ উন্নত ও শিক্ষিত হওয়ার কারণে, সবকিছুতেই গতি, ক্ষিপ্রতা, ব্যাপ্তি আর বৈচিত্র্য বহুগুণ বেড়েছে।
আগে মানুষ সামনাসামনি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করত। জয়-পরাজয় লড়াইয়ের ময়দানে নির্ধারিত হতো। শোষণ ও জুলুমের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা ছিল। মানুষের অধিকার বিনষ্ট হওয়ারও সীমাবদ্ধ রূপ ছিল। অর্থনৈতিক শক্তিও ছিল আঞ্চলিক ও অনেকটাই বৈচিত্র্যহীন। কিন্তু আজ দেড় হাজার বছরের ব্যবধানে পৃথিবী অনেক পাল্টে গেছে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ৫ ভারতীয় যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত, ব্রিগেড সদর দপ্তর ধ্বংস

পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা

রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে বার্সেলোনাকে হারিয়ে ফাইনালে ইন্টার মিলান

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড সদরদপ্তরে হামলার দাবি পাকিস্তানের

নিরপত্তা কমিটির সঙ্গে বৈঠক, কঠোর পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি পাক প্রধানমন্ত্রীর

ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি পাকিস্তানের

পাকিস্তানের তিন শহরে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা,নিহত অন্তত ৭

চাদরে মোড়ানো নিরাপত্তায় ফিরোজায় পৌঁছালেন খালেদা জিয়া

অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা চায় না কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন

নারায়ণগঞ্জে হকার হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

জামায়াত নেতা আজহারের আপিলের পরবর্তী শুনানি কাল

পুলিৎজার পুরস্কার পেল রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট

ডিবির হারুনের ঘনিষ্ঠ জাহাঙ্গীর ও রাজশাহীর দুই সাবেক চেয়ারম্যানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ অবস্থায় দেশে ফেরায় আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়

নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা

সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী আলেমদের বিরুদ্ধে উগ্র নারীবাদীকে লেলিয়ে দিয়েছে

হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হুকুমের আসামি সাবেক মন্ত্রী ও মেয়র

শ্যামল দত্তের জামিন প্রশ্নে রুল

সোনারগাঁওয়ে প্রাইভেটকার দিয়ে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা ছিনতাই

রূপগঞ্জে উচ্ছেদ অভিযানে সরকারি জমি দখলমুক্ত