ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

মানবজাতির সংকট নিরসনে নববী আদর্শের শিক্ষা-২

Daily Inqilab উবায়দুর রহমান খান নদভী

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

হিজরতের পর থেকে নবী করীম (সা.)-এর ওফাত পর্যন্ত এবং এর পর ত্রিশ বছর খেলাফতে রাশেদা ও পরবর্তী চৌদ্দশ’ বছর ইসলাম ছিল পৃথিবীর জন্য আল্লাহর রহমতের বিশেষ ছায়া। বিশ্বনবী আগমনের সূচনালগ্ন থেকে বিশেষ করে তাঁর দীনপ্রচার কাজ শুরুর দিন থেকে জাহান্নামী গোষ্ঠী তাঁর বিরোধিতা করতে শুরু করেছিল। মহানবী (সা.)-এর হিজরত, অনেকগুলো যুদ্ধ, বিজয় ও সন্ধি, মক্কা বিজয় এমনকি ওফাত পর্যন্ত তারা তাঁকে মোটেই স্বস্তি দেয়নি। নজিরবিহীন সদাচরণ, অপরিসীম ধৈর্য ও ক্ষমা, আল্লাহর নৈকট্যের জীবনব্যাপী সাধনা দিয়েই তিনি একটি নতুন জীবনব্যবস্থা কায়েম করেছেন।

শত বাধা ও প্রতিকূলতার ভিতর দিয়েই তিনি একটি নতুন জাতি, নতুন সভ্যতা, নতুন ধর্ম, নতুন সংস্কৃতি, নতুন জীবনবিধান ও নতুন বিশ^ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন। যার বিকাশে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, মাশায়েখে তরীকত, ইসলামের বিজয়ী বীর ফাতেহীনে ইসলামসহ লাখো রিজালে দীন, মুসলিম মনীষী তাদের মূল্যবান জীবন উৎসর্গ করে গিয়েছেন।

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবেও ইসলাম বিশ^কে পথনির্দেশ দিয়ে এসেছে। এ সময় চৌদ্দশ’ বছর পৃথিবীর মানবতা, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শাসন ও বিচার, নীতি ও সংস্কৃতি- সবকিছুর নেতৃত্ব মুসলিম জাতির হাতেই ছিল। অন্ধকার যুগ, ইতিহাসপূর্ব যুগ কিংবা পশ্চিমা মধ্যযুগ কোনোটিই ইসলামের এ সহস্রাধিক বছরের মতো শান্তি ও সাফল্যের অভিযাত্রার কোনো নজির দেখাতে পারবে না। সভ্যতার ইতিহাসে স্বভাবতই আজকের এ সময়টিকে (একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ও দ্বিতীয় দশক) মানবজাতির উৎকর্ষের শ্রেষ্ঠ সময় দাবি করা উচিত।

কারণ অতীতের ভুলগুলো সুধরে অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ মানুষ তাদের বর্তমানটিকেই সবচেয়ে সুন্দর করে সাজাবে- যুক্তি তাই বলে। কিন্তু আমরা যারা ইসলামের ভক্ত আর আমাদের যাদের চোখে আধুনিক বিশ^দর্শনের রঙিন চশমা নেই তারা খোলা চোখে দেখে বিস্মিত না হয়ে পারি না যে, বিশ^নবী (সা.)-এর আগমনের সময়কার পৃথিবী ও মানবসভ্যতা যে কঠিন সময় পার করছিল, মানবতা সবদিক দিয়ে যে রকম জাহান্নামে পতিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল, বলতে খুবই লজ্জা ও দুঃখ হয় এবং সত্যি করে বলছি যে, বলতে মোটেও দ্বিধা হয় না যে, বিশ^নবী (সা.)-এর আগমনের এবং তাঁর কর্মসাধনার সূচনালগ্নের সেই ঐতিহাসিক অন্ধকার পৃথিবীর তুলনায় যেকোনো বিচারে আজকের পৃথিবী লক্ষ কোটি গুন বেশি অন্ধকারে নিমজ্জিত।

নবী করীম (সা.)-এর অতুলনীয় নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব, চরিত্র মাধুর্য ও সৃষ্টির সেরা উত্তম আচরণ তাঁর সীরাত ও সুন্নায় ভরপুর। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওযিয়্যার যাদুল মাআদ এ বিষয়ে একটি অনন্য কিতাব। পবিত্র কোরআনকেও হযরতের বিশ^াস, চেতনা, নীতি, চরিত্র ও আচরণের মূল নির্দেশিকা বলে আখ্যায়িত করা হয়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও বিশে^র প্রতি তাঁর যে বার্তা সেটি বিশ^মানবতার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট ও চিরন্তন আদর্শরূপে প্রমাণিত।

আল্লাহর প্রতি বিশ^াস, উন্নততর নৈতিকতা, সমৃদ্ধতম আধ্যাত্মিক অবস্থা ও সর্বোত্তম মানবিক গুণাবলি যদি উম্মতের কারও মধ্যে বিকশিত হয়ে থাকে তা হলে তা হযরতের প্রধান সাহাবী হযরত সিদ্দীকে আকবর (রাযি.)-এর জীবনে দেখতে হবে। খোদাভীতি ও নবীপ্রেমের সর্বশ্রেষ্ঠ নমুনা হযরত সিদ্দীকে আকবর (রাযি.) আল্লাহর দীনের অখণ্ডতা ও সুরক্ষায় যে ঐতিহাসিক সাহসিকতা, ত্যাগ ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছিলেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।

হযরত ওমরের শাসনামলের মতো গণমুখী, জনপ্রিয়, কল্যাণকর, নাগরিক অধিকারের চরম উৎকর্ষতায় পূর্ণ শাসন মানব ইতিহাসে বিরল। আরবী উৎস কিতাবাদি ছাড়া শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবীর ইজালাতুল খফা, মাওলানা শিবলী নোমানীর আলফারুক ও আধুনিক আরবী ইতিহাসবিদের সংকলন আলকাযা ফী আহদি ওমর থেকে আগ্রহীরা মোটামুটি ধারণা পেতে পারেন।

জাহেলি আরবদের বিশ^াস, চেতনা, চরিত্র ও মনোজগতে সংঘটিত নতুন বিপ্লবের অব্যবহিত পরপরই দশ বছর হযরত ওমর (রাযি.) মানবসভ্যতার যে রকম বহুমুখী দিকনির্দেশনামূলক নেতৃত্ব দান করেছেন এর চেয়ে উত্তম ও নিখুঁত নেতৃত্বের উপমা মানব ইতিহাসে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ নবুওয়তি ভাবধারা অবলম্বনে খেলাফতি শাসনব্যবস্থা এমন সুষ্ঠু আঙ্গিকে আর কবে কে পরিচালনা করেছে?

পৃথিবীর সব রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ও গবেষক আন্তরিকতার সাথে শ্রেষ্ঠ পথ ও পদ্ধতি তালাশ করলে তাদের সকলের অনুসন্ধানের সব পথ নিঃসন্দেহে এসে মিশবে হযরত ওমর (রাযি.)-এর শাসনযুগে। এসব বিষয়ে ইসলামের ভক্ত ও অনুসারী হিসেবে একজনের বক্তব্যই যথেষ্ট মনে না হলে যে কেউ নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল অমুসলিম লেখকদের- হন তিনি প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যের- বই মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখতে পারেন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান