রাসূলুল্লাহ (সা.) : যিনি ছিলেন সততার অনন্য উপমা
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
সততা। মানবীয় গুণাবলীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি দিক। পবিত্র কুরআন মাজীদে অনন্য এ গুণটি নিজের মাঝে পরম মমতায় ধারণ করতে মুমিনদেরকে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো’। (সূরা তাওবা : ১১৯)। আয়াতের বার্তা পরিষ্কার। কুরআন মাজীদ মুসলিম সমাজকে আহ্বান করছে সততার মতো এই সুউচ্চ গুণে গুণান্বিত হওয়ার প্রতি, সৎ ব্যক্তিদের সঙ্গী হওয়ার প্রতি। কেননা, সততাই হলো সকল কল্যাণের চাবিকাঠি।
সততার মত এই মহান গুণের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন একজন উত্তম দৃষ্টান্ত ও আদর্শ। সততার সর্বোচ্চ চূড়ায় ছিল তার অবস্থান। নবুওয়ত প্রাপ্তিরও বহু আগে মক্কার কুরাইশদের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে আস-সাদিক (সত্যবাদী) এবং আল-আমীন (আমানতদার) উপাধি প্রদান করা হয়েছিল। এই বিশ্বস্ততার বিমল গুণে মুগ্ধ কুরাইশরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাদের মূল্যবান সম্পদ গচ্ছিত রাখতো।
নবীজী (সা.) যখন ইসলামের দাওয়াত দেয়া শুরু করেন তখন তাঁর আত্মীয় স্বজন ও তাঁর বংশের লোকেরা শত্রুতা, বিদ্বেষ, ঘৃণা ও বিরোধিতা শুরু করে। এমন ভয়াল প্রতিকূল মুহূর্তেও তিনি সততা ও আমানতদারীর প্রকাশ ঘটিয়ে তাদের গচ্ছিত সম্পদ যথাযথভাবে তাদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে যান।
আল্লাহ তায়ালা যখন নবীজী (সা.) কে নিজের নিকটাত্মীয়দের আখিরাতের প্রতি সতর্ক করার নির্দেশনা প্রদান করেন, তখন তিনি সাফা পর্বতে আরোহণ করে সকলকে ডেকে বলেন : ‘বলো তো, আমি যদি তোমাদের বলি, অশ্বারোহী শত্রুসৈন্য উপত্যকায় এসে পড়েছে, তারা তোমাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করতে উদ্যত, তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা সর্বদা তোমাকে কথা ও কাজে সত্যবাদী পেয়েছি।’ (সহীহ বুখারী : ৪৭৭০)।
এভাবে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সততার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে তা লিপিবদ্ধ। হাজার বছর ধরে মানবসভ্যতা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সততার সৌরভে সুরভিত। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সততার ব্যাপারে সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক স্বয়ং আল্লাহ তায়া’লা সাক্ষ্য রয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেন : ‘যে ব্যক্তি সত্য কথা নিয়ে এসেছে এবং নিজেও তা বিশ্বাস করে এরূপ লোকই মুত্তাকী।’ (যুমার : ৩৩)।
সততার অনন্য উপমা রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা কথা ও কাজে অন্যদেরকেও সত্য ও সততার প্রতি উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা মিথ্যাচার বর্জন করো। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে ধাবিত করে এবং পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। কোন ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যচারকে স্বভাবে পরিণত করলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তার নাম মিথ্যুক হিসেবেই লেখা হয়। আর তোমরা অবশ্যই সততা অবলম্বন করবে।
কেননা সততা নেক কাজের দিকে পথ দেখায় এবং নেক কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর কোন ব্যক্তি সর্বদা সততা বজায় রাখলে এবং সততাকে নিজের স্বভাবে পরিণত করলে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকটে তার নাম পরম সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। (সুনানে আবু দাউদ-৪৯৮৯)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে যে, তিনি সন্দেহপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে চলতেন। এ ব্যাপারে তিনি নিজে যেমন সচেতন ছিলেন, অন্যদেরও এ ব্যাপারে সচেতন থাকার শিক্ষা দিতেন। সত্য ও সততার প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি এমনটা করতেন এবং বলতেন।
আবুল হাওরা আস-সাদী (রাহ.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, হাসান ইবনু আলী (রা.)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে কোন কথাটা মনে রেখেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এই কথাটি মনে রেখেছি, যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু, সত্য হলো শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হলো দ্বিধা-সন্দেহ। (জামে তিরমিজি : ২৫১৮)।
সত্যের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই আগ্রহ ও ভালোবাসা সাময়িক ছিল না। বরং তিনি সর্বদা জীবনের সকল কাজ ও কর্মে সত্যের উপর অটল অবিচল থেকেছেন। সত্য ছিল তাঁর স্বভাবজাত। এ কারণে তিনি মজা ও হাস্যরসের সময়ও সত্য বলতেন। যদিও অনেকে মনে করেন, এইসব একটু মিথ্যার আশ্রয় নেয়া দোষের কিছু নয়।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত : একদা এক লোক নবী (সা.) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটি আরোহীর ব্যবস্থা করে দিন। নবী (সা.) বললেন, আমি তোমাকে আরোহণের জন্য একটি উটনীর বাচ্চা দিবো। লোকটি বললো, উটনীর বাচ্চা দিয়ে আমি কি করবো? নবী (সা.) বললেন, সকল উটকে তো উটনীই জন্ম দেয়। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৯৮)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মারা গেছে ইনফ্লুয়েন্সার তনির স্বামী
সিটির ড্রয়ের রাতে পয়েন্ট হারাল লিভারপুল-চেলসিও
পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে: আইজিপি
রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি হলেন মাহাবুব চেয়ারম্যান
হাজীগঞ্জে ভেকু দিয়ে কৃষি জমির মাটি কাটার হিড়িক
৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিলো গ্রিস
গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় ডেসটিনির এমডিসহ ১৯ জনের কারাদণ্ড
খুঁজে খুঁজে একে একে সবাইকে ধরা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিএনপি নির্বাচনের জন্য ‘অস্থির’ কেন?
বরিশালে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকগন মুনফা সহ বিনিয়োগকৃত আসল অর্থ তুলতে পারছেন না
মানিকগঞ্জে ক্যান্সার আক্রান্ত দুই সন্তানের জননীকে জবাই করে হত্যা
ভারত কেন এখন তালিবানকে কাছে টানছে ?
মুরাদনগরে ভূমিদস্যুদের আতঙ্ক এসিল্যান্ড
বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করলেই সফল হবে জাতিসংঘ : ফিলেমন ইয়াং
গুরুদাসপুরে একই গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রী ও কলেজ ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু
মতলবে বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধন
দেশের সর্বাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত হোটেলিয়ার-শাখাওয়াত হোসেন
যুদ্ধবিরতি চুক্তি : প্রথম পর্যায়ে মুক্তি পাবেন এক হাজার ফিলিস্তিনি
কালবিলম্ব না করে অবাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করুন- এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী
সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে চার কমিশন