ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মওত ও জানাজা : বাণী ও বার্তা

Daily Inqilab মাওলানা ইমদাদুল হক

৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৭ এএম

মৃত্যু মানে ক্ষুদ্র ও ক্ষণস্থায়ী জগৎ থেকে বৃহৎ ও চিরস্থায়ী জগতে পাড়ি জমানো, যেখান থেকে কেউ কখনো ফিরে আসে না। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষ তার প্রকৃত গন্তব্যের দিকে যাত্রা করে। তার এই যাত্রা ও গন্তব্য যেন সুখময় হয় তার কিছুক্ষণের পৃথিবীর সঙ্গী ও স্বজনদের এই প্রার্থনা খুবই স্বাভাবিক। ফিতরাত ও স্বাভাবিকতার ধর্ম ইসলাম এই প্রেরণাকে উৎসাহিত করেছে এবং প্রিয়জনের জন্য কল্যাণ-প্রার্থনার সঠিক উপায় শিক্ষা দিয়েছে। এটি ইসলামের বিশিষ্টতা। একজন মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের যে কয়টি হক রয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে, মৃত্যুর পর জানাযায় শরীক হওয়া এবং সম্ভব হলে দাফনকার্যেও অংশগ্রহণ করা। এ হক আদায়ের দ্বারা যেমন ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিচয় দেয়া হয় তেমনি অনেক সওয়াবও পাওয়া যায়। এ তো আল্লাহ তাআলার মেহেরবাণী যে, তিনিই বান্দাকে তার কর্তব্য সমাধার উপায় শিখিয়েছেন আবার এর কারণে অশেষ সওয়াবও ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর সকল দয়া ও মেহেরবাণীর মর্যাদা রক্ষার তাওফীক দান করুন। আমীন।

স্বজনের মৃত্যুতে মানুষের চোখে অশ্রæ ঝরে, প্রিয়জন ও আপনজনের বিয়োগব্যথা মানুষ সইতে পারে না। যে ভাইটি-বোনটি এতো প্রিয় ছিল, উচ্ছ¡াস-উচ্ছলতায় সকল শূন্যতা পূর্ণ করে রাখত, যে আব্বা-আম্মা এতো আপন ছিলেন, মমতার শীতল ছায়ায় বেষ্টন করে রেখেছিলেন; যে পুত্র-কন্যা কলিজার টুকরা ছিল, যাদের দেখলে, যাদের কথা শুনলে প্রাণ জুড়িয়ে যেত; যে জীবনসঙ্গী ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয়জন, যাঁর সঙ্গ পৃথিবীর সকল প্রতিক‚লতা মোকাবিলার শক্তি যোগাত, হঠাৎ তার সকল বন্ধন ছিন্ন করা চিরবিদায়ের শোক কীভাবে মানুষ সইতে পারে; তাই মানুষের চোখ থেকে অশ্রু ঝরে, তার হৃদয় বিদীর্ণ হতে চায়। এই সংকটের মুহূর্তেও ইসলাম থাকে মানুষের পাশে। ইসলামের নির্দেশনা মানুষকে শক্তি যোগায় সংযত থাকার।

এখানে আরেকটি দিকও আছে যে দিক নিয়ে চিন্তা করা দরকার। মৃত্যু মানে তো শুধু পরপারে পাড়ি জমানো নয়, মৃত্যু মানে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো। আজ যার মৃত্যু হলো, এতোদিন সে পৃথিবীতে স্বাধীন ছিল। যখন যা ইচ্ছা করার শক্তি ছিল, ন্যায়-অন্যায়, ফরমাবরদারী-নাফরমানী সবকিছুর সমান ক্ষমতা ছিল। সে কি আল্লাহর পূর্ণ ফরমাবরদার ছিল, না অনেক নাফরমানীও তার দ্বারা হয়েছে? প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে গুনাহর কাজ হয়েছে? আজ আল্লাহ তাকে ডাক দিয়েছেন হিসাবের জন্য। এ ডাকে সাড়া না দেয়ার উপায় নেই। স্বজন-প্রিয়জনদের সাধ্য নেই, তাকে কোথাও লুকিয়ে রাখে।

আজ তাকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। এখন তাকে কবরে নামানো হবে, ফেরেশতারা আসবে, তাকে প্রশ্ন করা হবে- তোমার রব কে, তোমার দ্বীন কী এবং যিনি তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন তিনি কে? তার গোটা জীবনের কর্মই হবে এইসব প্রশ্নের জবাব। সে কি সারা জীবন ঈমানের উপর ছিল? সুন্নতের উপর ছিল? ইসলামের ফরয বিধান নামায, রোযা, হজ্জ-যাকাত, পর্দা-পুশিদা, লেনদেন, সততা, অন্যের হক আদায় ইত্যাদি কি তার দ্বারা পালিত হয়েছে?

এখন আল্লাহ যদি নিজ ক্ষমা ও করুণার ছায়ায় তাকে আবৃত করেন তবেই সে রক্ষা পাবে, অন্যথায় কী হবে তার অবস্থা? আল্লাহর ফয়সালা থেকে তো পালিয়ে যাওয়ার পথ নেই, মুক্তি পাওয়ারও উপায় নেই, যতদিন না মালিক নিজ দয়ায় মুক্তি দান করেন। পৃথিবীতে মা-বাবার জন্য, ছেলে-মেয়ের জন্য, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের জন্য আমাদের কতই না মায়া-মমতা, প্রীতি-ভালবাসা, তাদের কষ্ট আমাদের কষ্ট, তাদের আনন্দ আমাদেরই আনন্দ।
আজ সেই প্রিয়জনকেই দাঁড় করানো হচ্ছে বিচারের কাঠগড়ায়। কী হবে রায়? মুক্তির না শাস্তির? তার কবর কি হবে বেহেশতের বিছানা, না আগুনের গহŸর? স্বজন-হারানোর বেদনার চেয়েও এই প্রশ্নগুলোই তো আমাদের কাছে বড় হওয়া উচিত। তাহলে আমরা শোকে আত্মহারা হওয়ার পরিবর্তে স্বজনের কিছু উপকার-চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করতে পারব।

সাহাবা-তাবেয়ীন, সালাফে সালেহীন এবং সবযুগের খোদাভীরু ব্যক্তিরা যখন কোনো ব্যক্তির মৃত্যুসংবাদ শুনতেন, কারো জানাযায় শরীক হতেন তখন তাদের সামনে এই দিকটিই বড় হতো। সাথে সাথে তারা নিজেদের জন্যও শিক্ষা নিতেন। কারণ সকলেই তো এ পথের পথিক, সবাইকে একদিন কর্মের জীবন শেষে প্রতিদানের জীবনে প্রবেশ করতে হবে। সবাইকে দাঁড়াতে হবে বিচারের কাঠগড়ায়। ব্যবধান শুধু এই যে, কারো ডাক আগে আসে, কারো ডাক পরে।

আমাকেও তো একদিন গোসল দেয়া হবে, কাফন পরানো হবে। আমারও তো জানাযা হবে, দাফন হবে। অন্ধকার কবরে আমাকেও তো ঈমানের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। আমারও কবরে ফেরেশতা আসবে, জান্নাত-জাহান্নাম আমারও সামনে তুলে ধরা হবে। হায়! সেদিন আমার কী অবস্থা হবে?

তাই তো দয়ার নবী পূর্ব থেকে সতর্ক করে বলেছেন : তোমরা রোগীদের দেখতে যাও এবং জানাযার পিছনে পিছনে গমন কর। এটা তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে। (মুসনাদে আহমদ ৩/২৩ : ১১১৮০)। সাহাবা-তাবেয়ীন কোনো মৃতকে দেখলে, কারো জানাযায় শরীক হলে মৃত্যু ও মৃতের চিন্তা তাদের উপর এমনই প্রভাব ফেলত যে, অনেকদিন পর্যন্ত তাদের চেহারায় তা দৃশ্যমান থাকত।

 

 

 


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
বান্দা জানে না, কিসে তার কল্যাণ-২
আরও

আরও পড়ুন

সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

মার্কিনের পর এবার ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা ইউক্রেনের

মার্কিনের পর এবার ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা ইউক্রেনের

আহমেদাবাদ শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে ৩৫ ইরানি ছবি

আহমেদাবাদ শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে ৩৫ ইরানি ছবি

কিউই সিরিজের কথা ভুলে অস্ট্রেলিয়ায় হ্যাটট্রিকের অভিযানে ভারত

কিউই সিরিজের কথা ভুলে অস্ট্রেলিয়ায় হ্যাটট্রিকের অভিযানে ভারত

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান

সেনাকুঞ্জে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া, ড. ইউনূসের সঙ্গে কুশল বিনিময়

সেনাকুঞ্জে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া, ড. ইউনূসের সঙ্গে কুশল বিনিময়

সউদী আরবের ফ্যাশন শো নিয়ে যেসব কারণে ক্ষুব্ধ ইসলামী পণ্ডিতরা

সউদী আরবের ফ্যাশন শো নিয়ে যেসব কারণে ক্ষুব্ধ ইসলামী পণ্ডিতরা

‘সশস্ত্র বাহিনী দিবসে খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত’ : প্রধান উপদেষ্টা

‘সশস্ত্র বাহিনী দিবসে খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত’ : প্রধান উপদেষ্টা

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করেছিল -আ ন ম বজলুর রশীদ

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করেছিল -আ ন ম বজলুর রশীদ

বাংলাদেশে সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে চায় পাকিস্তান

বাংলাদেশে সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে চায় পাকিস্তান

দুর্গাপুরে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার।

দুর্গাপুরে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার।

রাজশাহী মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক বজলুল হক মন্টু ছুরিকাঘাত

রাজশাহী মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক বজলুল হক মন্টু ছুরিকাঘাত

নোয়াখালীতে ট্রাক চাপায় শিশু নিহত

নোয়াখালীতে ট্রাক চাপায় শিশু নিহত

আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে

আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে

মহাখালীতে এটিএম বুথ ভাঙচুর চালান ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা

মহাখালীতে এটিএম বুথ ভাঙচুর চালান ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা

শুধু আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী নয়, সন্ত্রাস লালনকারী দলটিরও বিচার হতে হবে - খেলাফত মজলিস

শুধু আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী নয়, সন্ত্রাস লালনকারী দলটিরও বিচার হতে হবে - খেলাফত মজলিস

চাপ মেনে নিয়েই হুঙ্কার ছাড়লেন কামিন্স

চাপ মেনে নিয়েই হুঙ্কার ছাড়লেন কামিন্স

৬ ঘণ্টা পর মহাখালীতে যান চলাচল শুরু,  কমেনি যানজট

৬ ঘণ্টা পর মহাখালীতে যান চলাচল শুরু, কমেনি যানজট

খাগড়াছড়িতে দুর্গম লম্বাছড়া গ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মিত

খাগড়াছড়িতে দুর্গম লম্বাছড়া গ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মিত

ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করল রাশিয়া

ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করল রাশিয়া