ঢাকা   শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রশ্ন: বিদ্রোহী সীমালংঘনকারীদের জন্য কেউ কাঁদে না?

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম

উত্তর : আসমান ও যমীনে সীমালংঘনকারী ও বিদ্রোহীর জন্য কেউ কাঁদে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“অত:পর না আসমান তাদের জন্য কেঁদেছে না যমীন এবং সামান্যতম অবকাশও তাদের দেয়া হয়নি।”(সুরা দুখান:২৯) আয়াতটি ফিরাউন সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। ফেরাউনের বিদ্রোহ ও সীমালংঘন সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশী জানি।

আসলে এ ধরনের শাসকেরা যখন ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের চারদিকে তাদের শ্রেষ্টত্বের ডংকা বাজতে থাকে। তাদের প্রশংসার গীত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। তাদের আগে পেছনে চাটুকারদের ভিড় লেগে থাকে। তাদের এমন ভাবমূর্তি সৃষ্টি করা হয় যেন গোটা দেশই তাদের গুণাবলীর ভক্ত-অনুরক্ত, তাদের দয়া ও করুণার দানে ঋণী এবং পৃথিবীতে তাদের চেয়ে জনপ্রিয় আর কেউ নেই। কিন্তু যখন তাদের পতন হয় একটি চোখ থেকেও তাদের জন্য অশ্রুপাত হয় না বরং সবাই প্রাণ ভরে এমন শ^াস নিতে থাকে যেন তার পাঁজরে বিদ্ধ কাাঁটাটি বের হয়ে গিয়েছে। একথা সবারই জানা, তারা আল্লাহর বান্দাদের কোন কল্যাণ করেনি যে তারা তার জন্য কাঁদবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যও কোন কাজ করেনি যে, আসমান-বাসীরা তাদের ধ্বংসের কারণে আহাজারি করবে।

আল্লাহর ইচ্ছানুসারে যতদিন তাদেরকে অবকাশ দেয়া হয়েছে ততদিন তারা পৃথিবীর বুকে ওপর দুর্বলদের অত্যাচার করেছে। কিন্তু তাদের অপরাধের মাত্রা সীমালংঘন করলে এমনভাবে ছুঁড়ে ফেলা হয়, যেমন ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। অবকাশের সময় নির্দিষ্ট করার মানে এই নয় যে, তাদের জন্য বছর, মাস, দিন ধরে একটি আয়ুস্কাল নির্দিষ্ট করা হয় এবং এ সময়টি শেষ হয়ে যেতেই তাকে অবশ্যিই খতম করে দেয়া হয়। বরং এর মানে হচ্ছে, এদেরকে যে শাসন ক্ষমতা দেয়া হয়, তার কর্মকা-ের মধ্যে ভাল ও মন্দের আনুপাতিক হার কমপক্ষে কতটুকু বরদাশত করা যেতে পারে, এ অর্থে তার কাজ করার একটি নৈতিক সীমানা চিহ্নিত করা হয়। যতদিন একটি শাসকের মন্দ গুণগুলো তার ভাল গুণাবলীর তুলনায় ঐ আনুপাতিক হারের সর্বশেষ সীমার মধ্যে অবস্থান করতে থাকে ততদিন তাকে তার সমস্ত অসৎকর্ম সত্ত্বেও অবকাশ দেয়া হয়। আর যখন তা ঐ সর্বশেষ সীমানা পার হয়ে যায় তখন এ ধরনের অসৎ বৃত্তিসম্পন্ন ও অসৎ কর্মশীল শাসককে আর কোন বাড়তি অবকাশ দেয়া হয় না। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের অবকাশ দেবেন। প্রকৃত ব্যাপার হলো, আল্লাহর নির্ধারিত সময় যখন এসে যায় তখন তা থেকে বাঁচা যায় না। আহ! যদি তোমরা তা জানতে।”(সুরা নুহ:৪)

মুলত: যেদিন থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করে সেদিন থেকেই আল্লাহর অবকাশ শুরু হয়। যারা মানবতার কল্যাণে কাজ করে তারা মূলত: অবকাশকে সঠিক কাজে ব্যয় করে। তারা আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ করে না। তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা। আর যারা নিজের সীমানা অতিক্রম করে এমন একটি সীমানায় পদার্পণ করে যেখানে প্রবেশ করার অধিকার তার নেই। অর্থাৎ যারা সীমালংঘন করে সীমানা পেরিয়ে আল্লাহর রাজ্যে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব ও আচরণ গ্রহণ করে, যারা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মধ্যে থেকেও নিজেদের অহংকার ও শ্রেষ্টত্বেও ডংকা বাজায় এবং যারা মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে তারা সবাই বিদ্রোহী গণ্য হয়। তাদের ওপরই নির্দিষ্ট অবকাশের সীমা অতিক্রমের পর পরই আল্লাহর গযবের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত আবর্তিত হয়। অর্থাৎ আল্লাহর গযবে নিপতিত হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“এমন এক সময় আসা বিচিত্র নয় যখন আজ যারা অস্বীকার করছে, তারা অনুশোচনা করে বলবে, হায়, যদি আমার আনুগত্যের শির সত করে দিতাম! ছেড়ে দাও এদেরকে, খানাপিনা করুক, আমোদ ফুর্তি করুক এবং মিথ্যা প্রত্যাশা এদেরকে ভুলিয়ে রাখুক। শিগগির এরা জানতে পারবে।”(সুরা হিজর:২-৩)

যেই নেতৃত্ব জুলুমতন্ত্র কায়েম করে। রাষ্ট্রের সকল স্তরে বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি, স্বেচ্ছাচারিতা,অশান্তি আর অস্থিরতা প্রবল আকার ধারণ করে। বিদ্বেষ, পেশীশক্তি, সংকীর্ণ গোত্র বা বংশ মর্যাদা এবং কুৎসীত ঘরোয়া প্রতিদ্বন্ধীতা ও সংঘর্ষ দানা বেধেঁ উঠে। স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে সাধারণ মানুষকে চরম অসহায়ত্বে নিক্ষেপ করে, মানবিক অধিকার বঞ্চিত দাসানুদাসে পরিণত করতে থাকে। স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের ফলে জনগণের ওপর মর্মস্পশী স্বৈরচারী শাসন পরিচালনা হতে থাকে এবং আল্লাহর বিধি-বিধান বিভিন্নভাবে অবহেলিত হতে থাকে। রাষ্ট্রের সহায়তায় মদ ও বারের আসন জমজমাট হতে থাকে। যেসব প্রতিষ্ঠানে আল্লাহর নাম উচ্চরিত হয়, সেগুলো গুরুত্বহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালানো হয়। রাষ্ট্রশক্তি একটি স্বৈরাতন্ত্রে পরিণত হয়ে চরম অহংকারী ও সীমালংঘনকারীতে নিমজ্জিত হয়। যা চিন্তা করা হতো, তার যুক্তিকতা সকলকেই মেনে নিতে থাকে। যখন বলে দিয়েছে, তখন আর সে বিষয়ে জনগণের কিছু বলবার সুযোগ থাকে না। তার কথাই হবে আইন, জনগণ তা অকুণ্ঠিত মনে ও নির্বাক চিত্তে মেনে নিতে হবে। তার শাসনের যাঁতাকলে জনগণ নির্বোধ বনে যাচ্ছে। কেউ তার স্বাধীন বিমুক্ত চিন্তা-বিবেচনা শক্তির প্রয়োগ করতে পারে না।

নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এরা আন্তর্জাতিক স্বৈরাচারের পদলেহন করে। আন্তর্জাতিক ন্বৈরাচার দুর্দ- প্রতাপ নিয়ে বিভিন্ন অজুহাত তথা ‘গণতন্ত্র পুণরুদ্ধার’ ‘সন্ত্রাস দমন’ ইত্যাদি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে দেশে যেখানে যেটি প্রযোজ্য সেটি ব্যবহার করে মূলতঃ তারাই সন্ত্রাস করে যায়। জোর পূর্ব্ক নিজেদের স্বৈরতান্ত্রিক ও জুলুমতান্ত্রিক চিন্তাধারা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার কোশেশ করে। অন্যদিকে মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে গায়ের জোরে পৃথিবীর মানবতার সাথে পাশবিক আচরণ করে। এদের কোন দেশের সীমানা প্রাচীর অতিক্রম করে মরণান্ত্র নিয়ে অন্যের প্রাচীরের ভেতর প্রবেশ করার জন্য কোন লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না। অন্যের ভৌগোলিক সার্বভৌমত্বকে যে কোন সময় তছনছ করে প্রবেশ করার অধিকার তার রয়েছে। কারো নিন্দা জ্ঞাপণ বা আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনকে সে পরোয়া করে না। এরা পৃথিবীর দেশে দেশে বহু দালাল ও লোভী শ্রেনীর স্বৈরাচার সৃষ্টি করেছে। তাদের সহযোগীতা নিয়ে বর্তমানে দেশে দেশে নিরীহ মানবতার রক্তের হোলী খেলায় মেতে উঠেছে।

উত্তর দিচ্ছেন: জাফর আহমাদ, শিক্ষাবীদ, গবেষক।


বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নামাজের কোনো ওয়াক্তে মসজিদে আজান এবং জামাত না হওয়া প্রসঙ্গে?
অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?
হাটুর উপর কাপড় উঠে গেলে অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে?
হাই কমোডের পাশের ট্যাবে অজু করা প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন : আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। এমতাবস্থায় কি আমি তার সাথে যৌন সম্পর্ক করতে পারি?
আরও

আরও পড়ুন

তৃতীয়বারেও জামিন পাননি ডিডি, কারাগারেই উদযাপন করবেন ক্রিসমাস'

তৃতীয়বারেও জামিন পাননি ডিডি, কারাগারেই উদযাপন করবেন ক্রিসমাস'

লাহোরকে হারিয়ে ফাইনালে রংপুর

লাহোরকে হারিয়ে ফাইনালে রংপুর

ডেভিড পারডিউকে চীনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডেভিড পারডিউকে চীনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ছাতকে সাত ইউপি চেয়ারম্যান লাপাত্তা, সেবা দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানরা

ছাতকে সাত ইউপি চেয়ারম্যান লাপাত্তা, সেবা দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানরা

ক্লাব বিশ্বকাপে একই গ্রুপে রিয়াল-আল হিলাল, মেসিদের প্রতিপক্ষ পোর্তো

ক্লাব বিশ্বকাপে একই গ্রুপে রিয়াল-আল হিলাল, মেসিদের প্রতিপক্ষ পোর্তো

বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলায় অভিযুক্ত ‘এইচএসএস’ হিন্দু সংগঠনের বয়স মাত্র এক সপ্তাহ

বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলায় অভিযুক্ত ‘এইচএসএস’ হিন্দু সংগঠনের বয়স মাত্র এক সপ্তাহ

কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশায় ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম

কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশায় ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম

বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে ছেড়ে দেব না : জামায়াত আমির

বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে ছেড়ে দেব না : জামায়াত আমির

হাতিয়ায় মাছধরা নৌকা ডুবি : ২ জেলের লাশ উদ্ধার

হাতিয়ায় মাছধরা নৌকা ডুবি : ২ জেলের লাশ উদ্ধার

গফরগাঁওয়ে তোপের মুখে অর্থনৈতিক শুমারীর প্রশিক্ষণ পণ্ড

গফরগাঁওয়ে তোপের মুখে অর্থনৈতিক শুমারীর প্রশিক্ষণ পণ্ড

কুলাউড়ায় রাস্তার দু’পাশে জরাজীর্ণ গাছগুলো মরণ ফাঁদে পরিণত

কুলাউড়ায় রাস্তার দু’পাশে জরাজীর্ণ গাছগুলো মরণ ফাঁদে পরিণত

বিএসএফের গুলিতে পঞ্চগড় সীমান্তে বাংলাদেশি নিহত

বিএসএফের গুলিতে পঞ্চগড় সীমান্তে বাংলাদেশি নিহত

১৩ ডিসেম্বর পেশোয়ারে মহাসমাবেশের ডাক ইমরান খানের

১৩ ডিসেম্বর পেশোয়ারে মহাসমাবেশের ডাক ইমরান খানের

দিনাজপুরে বাস ও ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৪

দিনাজপুরে বাস ও ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৪

বাংলাদেশ, অযোধ্যা, আর সম্ভলইকে ‘একই ডিএনএ’ বলে মন্তব্য উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর

বাংলাদেশ, অযোধ্যা, আর সম্ভলইকে ‘একই ডিএনএ’ বলে মন্তব্য উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর

আজ কলাপাড়া মুক্ত দিবস

আজ কলাপাড়া মুক্ত দিবস

শীতে ত্বকের যত্নে শুরু হলো বায়োজিন ইয়ার এন্ড সেল

শীতে ত্বকের যত্নে শুরু হলো বায়োজিন ইয়ার এন্ড সেল

আজমির শরিফ-সম্ভল ছাড়া যে ১০টিরও বেশি উপাসনাস্থল নিয়ে ‘মন্দির-মসজিদ’ বিতর্ক চলছে

আজমির শরিফ-সম্ভল ছাড়া যে ১০টিরও বেশি উপাসনাস্থল নিয়ে ‘মন্দির-মসজিদ’ বিতর্ক চলছে

আখাউড়ায় ৭১ এর পতাকা উড়ানোর স্থানে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত

আখাউড়ায় ৭১ এর পতাকা উড়ানোর স্থানে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত

ফ্যাসিস্ট হাসিনা‌-দাঙ্গাবাজ মোদির বুকে কাঁপন ধরালো যে ৩ ছবি

ফ্যাসিস্ট হাসিনা‌-দাঙ্গাবাজ মোদির বুকে কাঁপন ধরালো যে ৩ ছবি