প্রশ্ন: রোজা ও স্বাস্থ্যের উপকারিতা কী?
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

উত্তর: রমজানের রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী না অপকারী তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। কারণ কিছু রোগ ব্যতীত রোজা রাখা নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এটি মুসলিমদের নিজেদের বানানো কথা নয়। বৈজ্ঞানিকভাবে তা প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৯৪ সালে প্রথম ‘ইন্টারন্যাশনাল কনগ্রেস অন হেলথ অ্যান্ড রামাদান’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুসলিম ও নন-মুসলিম গবেষকরা রোজা ও স্বাস্থ্য শিরোনামে প্রায় ৫০টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এদের কোনোটিতেই দেখা যায়নি যে, সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য রোজা স্বাস্থ্যের জন্য অপকারী; বরং তা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকার নিয়ে আসে। রোজা শুধু আধ্যাত্মিক নয়, শারীরিক সুস্থতা আছে বলেই রোজার এত গুরুত্ব। উপবাস বা রোজা রোগ প্রতিরোধ ও রোগ সারাতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। অনেকের ধারণা, উপবাস থাকলে স্বাস্থ্য খারাপ হয়। এ ধারণা ভুল, বরং নিয়মিত উপবাস স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে : মানবদেহের রক্ত সংবহনতন্ত্রে চর্বি বা কোলেস্টেরল জমা হয়ে হৃৎপি-ের ক্ষতি করে। শরীরের ধমনীগুলো হৃৎপি- থেকে বিশুদ্ধ রক্ত বহন করে টিসুর দিকে নিয়ে যায় এবং শিরাগুলো টিসু থেকে দূষিত রক্ত বহন করে হৃৎপি-ে নিয়ে যায়। এভাবে রক্ত অনবরত চলাচল করে। রক্ত সংবহনতন্ত্রের ধমনী, শিরা-উপশিরার ভিতরে লাইনিংয়ে কোলেস্টেরল জমা হলে ঐগুলোর প্রশস্ততা কমিয়ে দেয়। ফলে ধমনী ও শিরা পর্যাপ্ত রক্ত বহন করতে পারে না। এতে রক্তের প্রবাহ চাপ বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থা চলতে থাকলে হৃদপি-ের ক্রিয়া ক্রমান্বয়ে বন্ধ হতে থাকে। তখন বুকে ব্যথা হয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। রোজা থাকার জন্য সারাদিন খাদ্য না খাওয়ায় এবং এক মাস এভাবে দিনে অভুক্ত থাকায় দেহে নতুন করে কোলেস্টেরল জমতে পারে না এবং আগের জমাকৃত কোলেস্টেরলগুলো কমে যায়। ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। স্মৃতিশক্তি বাড়ায় : আমেরিকার একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা রাখলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে। তাই ছাত্রছাত্রীদের জন্য রোজা রাখা খুবই জরুরি। মেদভুঁড়ি হ্রাস করে : মেদভুঁড়ি নিয়ে অনেকেই বিপাকে আছে। রোজা রাখলে দেহে ক্ষয় হয়। ফলে দেহের চর্বি ভেঙ্গে দেহের ক্ষয় পূরণের ব্যবস্থা হয়। এতে সারাদিন খাদ্য না খাওয়াতে নতুন করে চর্বি জমতে পারে না। এক মাস এভাবে দিনে অনাহারে থাকাতে মেদভুঁড়ি কমে যায়। কিন্তু ইফতারি ও রাতে খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে মেদভুঁড়ি কমবে না। পেপটিক আলসার : খাওয়া দাওয়া বেশি করলে পেপটিক আলসার বৃদ্ধি পায়। রোজা থাকলে সারাদিন না খেয়ে থাকায় খাদ্যনালী, পাকস্থলী, যকৃৎ, পিত্তথলি, ক্ষুদ্রাযন্ত্র, হজমে সহায়ক গ্রন্থিগুলোর বিশ্রাম পায়। এতে পেপটিক আলসার রোগীর উপকার হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : সারাদিন না খেয়ে রাতে অল্প সময়ের মধ্যে ঘন ঘন খাওয়ার জন্য বিশেষ করে ছোলা, শরবত, পিয়াজু, শসাসহ বিভিন্ন রকম খাবার খাওয়াতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। হজম ভাল করে : যাদের হজমে সমস্যা আছে তারা এক মাস রোজা রাখলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। কারণ একটানা ১১ মাস সবসময় পাকস্থলি ও অন্যান্য গ্রন্থি হজমে ব্যস্ত থাকে। অপরদিকে, রোজা থাকার জন্য প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা পাকস্থলী, খাদ্যনালী, যকৃৎ পিত্তথলি, ক্ষদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, ডিউডেনাসসহ হজমে সহায়ক বিভিন্ন গ্রন্থির কোনো কাজ থাকে না, অর্থাৎ বিশ্রামে থাকে। পাকস্থলী বিশ্রামের পর সন্ধ্যায় ও রাতে পাকস্থলী খাদ্য পেয়ে নতুন উদ্যামে নতুন শক্তি নিয়ে হজম ক্রিয়ার অংশগ্রহণ করে। ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। যকৃৎ খাদ্য হজম ছাড়াও আরও ১৫ রকমের কাজ করে। ফলে যকৃৎ অবসাদগ্রস্থ হয়ে হজমকারক পিত্তরস ঠিকমত তৈরি করতে পারে না। না খেয়ে থাকলে যকৃতের ক্লান্তি দূর হয় এবং পিত্তরস নিঃসৃত করে হজমে সহায়তা করে। পাকস্থলীতে সামান্য একটু খাবার গেলেই হজমে নিয়োজিত সমস্ত গ্রন্থি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রক্ত বৃদ্ধি হয় : দেহে রক্তের প্রয়োজন হলে তখন এক প্রকার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হাড়ের মজ্জাকে আন্দোলিত করে তোলে। অভুক্ত থাকাকালীন দেহে রক্তের পরিমাণ ও প্রবাহ কমে। ফলে হাড়ের মজ্জায় আন্দোলিত হয়ে রক্ত তৈরি হয়। রোজা থাকার জন্য পরে দেহে রক্তের পরিমাণ বাড়ে। আমাশয় সেরে যায় : রোজা রাখার জন্য দিনে পেট খালি থাকে বলে যে সব ব্যাকটেরিয়া আমাশয় সৃষ্টি করে সে সব ব্যাকটেরিয়া খাদ্যের অনুপস্থিতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ফলে আমাশয় সেরে যায়। অপরদিকে, ইফতারি ও সেহরিতে একটু উন্নতমানের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে দেহের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ হয়। সবশেষে এ সত্যটি মাথায় রাখবেন রোজা কেবল আল্লাহর জন্য। তাই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তা পালন করতে হবে। তাহলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি এসব উপকারও পাওয়া যাবে। কিন্তু এ সব উপকারের কথা চিন্তা করে রোজা রাখলে উপকার পেলেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন নাও হতে পারে। রমজানে সবার সুস্থতা কামনা করছি।
উত্তর দিচ্ছেন: মো: লোকমান হেকিম, চিকিৎসক-কলামিস্ট।
বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

শেরপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে প্রস্তুতি সভা

সদরপুরে দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’র সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল

শেরপুরে বাস ডাকাতির চেষ্টাকালে যাত্রীকে ছুরিকাঘাত

প্রত্যন্ত গ্রামে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ক্রিকেট স্টেডিয়াম! বিসিবি কেন পারে না?

সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক টিম ফিলিপাইনে গমন

ভারতের নতুন ওয়াকফ আইন কেন মুসলিমদের জন্য বিপজ্জনক?

ঢাকায় ৫০ দেশের ছয় শতাধিক বিনিয়োগকারীদের জমজমাট সম্মেলন

আল্লাহ, তুমি জান্নাতের দরজা খুলে দাও,এই পৃথিবী আর গাজাবাসীর জন্য নয়–সিয়াম

নিকলীতে ইটখলা ভেঙ্গে দিলো পরিবেশের প্রশাসন মালিকের স্বপ্ন পুড়ে চ্যাঁই , শত শ্রমিক কর্ম হারালো

ভারতের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস, ২০ সেকেন্ডে কমল ২০ লাখ কোটি রুপির মূলধন

অসুস্থ নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন- বিএনপি নেতা মাহমুদুল হক রুবেল

কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ ভবনে গ্রিল ভেঙে চুরি

সরকারের কাছে নতুন ভোটারদের দাবী দ্রুত নির্বাচন

ঝিনাইদহ সাগান্না বাওড়ের জমি ভেকু মেশিন দিয়ে সমান করছে প্রভাবশালীরা

নওগাঁর আত্রাইয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে ভুট্টা চাষ: বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

মাগুরায় নিহত যুবদলের নেতা মিরাজের নামাজে জানাজায় গন মানুষের ঢল

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে নোয়াখালীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে কয়রায় জামায়াতের বিক্ষোভ

মধ্য গাজায় ফিলিস্তিনিদের নতুন করে 'সরে যাওয়ার' নির্দেশ ইসরায়েলের

ব্রাহ্মণপাড়ায় কলেজ ছাত্র ছফিউল্লাহ হত্যা ২ আসামীকে জেল হাজতে প্রেরণ