ঢাকা   শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৯ পৌষ ১৪৩১

প্রশ্ন: আমার প্রিয় হযরত কী নবী কামলিওয়ালা?

Daily Inqilab ইনকিলাব

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

উত্তর: আল্লাহ রাব্বুলআলামিন মানব জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল দুনিয়ার বুকে পাঠিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসুল হলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। মানবতার মুক্তির মহান অগ্রদূত মহানবী (সা.)-সব মানুষের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মানবতার মুক্তির দূত, সাইয়্যেদুল মুরসালিন খাতামুননাবিয়ীন, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহতায়ালা বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন-তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনীর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তাঁর প্রতিটি কথা, কাজ, অনুমোদন, নির্দেশনা, আদেশ, নিষেধ ও উপদেশ দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণের বার্তাবাহী। তিনি গোটা মানব জাতির শিক্ষক। তাঁর সে কালজয়ী আদর্শ ও অমিয়বাণী দ্যুাতি ছড়িয়ে পথপদর্শন করেছে যুগ যুগান্তরে, আলোকিত হয়েছে মানবমন্ডলী। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী এবং রাসূল। তিনি মানুষের আলোর দিশারী। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের সময় সমগ্র আরব জাহানে এক চরম অরাজকতা বিরাজ করছিল। গোত্রে গোত্রে কোন্দল, মারামারি, অহেতুক রক্তক্ষয় ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। ব্যভিচার, মদ্যপান, জুয়াখেলা, খুন, চুরি, ডাকাতি প্রভৃতি অপকর্মে সমাজে এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছিল। নারীদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করণ। কন্যা শিশু হত্যা করতেও তৎকালীন আরব পিতারা পিছপা হতো না। ঠিক এরকম এক ভয়াবহ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। মানুষের মুক্তি,শান্তি, শিক্ষা ও কল্যানের জন্য তিনি আজীবন সাধনা করেছেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-সর্বগুণে গুণান্বিত একজন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ব্যক্তিজীবনে সমাজ ও রাষ্ট্রে একমাত্র তাঁর অনুকরণ –অনুসরণই দিতে পারে মুক্তির দিশা। আল্লাহতাআলা বলেন আল্লাহর রাসুলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি মানবজাতির সর্বোচ্চ পূর্ণতায় অধিষ্ঠিত একমাত্র ব্যক্তি। (হে রাসুল) নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।

নবুয়্যত প্রাপ্তির পর হযরত মুহাম্মদ (সা.)-ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে শুরু করেন। ইসলাম ধর্মের মূলবাণী হলো-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ অর্থাৎ এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই মুহাম্মদ তাঁর প্রেরিত রাসূল। এই মহাসত্য তিনি প্রচার করতে থাকেন। এই সত্য প্রচারের জন্য তাঁকে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। মক্কার একদল বিপদগামী লোক তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু মহানবী ছিলেন নির্ভীক। কোনো বাধাই তাঁকে সত্যধর্ম প্রচার থেকে বিরত রাখতে পারেনি। ধর্ম প্রচারকালে তাঁর হাতে মহিলাদের মধ্যে বিবি খাদিজা (রা.)-ও পুরুষদের মধ্যে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। এভাবে ইসলামের আলো ক্রমশ: চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। মহানবীর হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর মাধ্যমে ইসলাম নতুন গতি ও নতুন শক্তি লাভ করে। মহানবী (সা.)-মুহাজির ও আনসারদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করেন। মুহাজির অর্থ হিজরতকারী। মক্কা থেকে হিজরত করে যাঁরা মদিনায় যান তাঁদেরকে বলা হয় মুহাজির। মুহাজিরদের মদিনায় যাঁরা আশ্রয় ও সাহায্য-সহযোগিতা দিলেন তাঁরা হলেন আনসার। আনসার অর্থ সাহায্যকারী। মহানবী (সা.)-মদিনায় হিজরত করে একটি আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলেন। এখানে মুহাজির ও আনসারসহ সকল মুসলমান এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী, ইহুদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য মতাদর্শের লোক একত্রে মিলেমিশে সুখে-শান্তিতে নিরাপদে বাস করবে। তাদের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় থাকবে এবং স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্মকর্ম পালন করতে পারবে। সঙ্গে সঙ্গে মদিনার নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে এই উদ্দেশ্যে তিনি সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তি সম্পাদন করেন। এটিই মদিনার সনদ নামে খ্যাত এবং এটিই পৃথিবীর সর্বপ্রথম লিখিত সনদ। মদিনার সনদ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, কুটনৈতিক দূরদর্শিতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সুন্দর সমাজ গঠনের এক জ্বলন্ত স্বাক্ষর বহন করে।

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-দশম হিজরীতে মক্কায় হজ্ব পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এটা ছিল তাঁর জীবনের শেষ হজ্ব। তিনি এরপর আর হজ্ব করার সুযোগ পাননি। তাই একে বিদায় হজ্ব বলে। প্রায় একলক্ষ মুসলমান এতে যোগ দিয়েছিলেন। আরাফাত ময়দানে পর্বতের চূড়ার ওপর দাঁড়িয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে মর্মস্পর্শী যে ভাষণ দিয়েছিলেন, ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। এখানে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-ঘোষণা করলেন মুসলমান সবাই একে অন্যের ভাই। ইসলাম জাতিগত, বর্ণগত, সম্পদগত বা বংশগত মর্যাদায় ছোট বড় ভেদ নেই। সংসারে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার। তাদের একের ওপর অপরের সমান দাবি রয়েছে। দাস-দাসীদের প্রতি তাদের প্রভুদের যথেষ্ট কর্তব্য আছে। প্রভু যা খায়, দাস-দাসীদেরকেও তা খাওয়াতে হবে এবং প্রভু যেমন কাপড় পরে, দাস-দাসীদেরকেও সে রকম কাপড় পরতে দিতে হবে। প্রিয় নবীজি (সা.)-শত নামে পরিচিত। তিনি মুহাম্মদ, আহমাদ, মুজ্জাম্মিল, মুদ্দাচ্ছির, ইয়াসিন, ত্বহ্, রউফ, রহিম ও রহমাতুল্লিল আলামিন। আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতাআলা কোরআন কারিমে ঘোষণা করেন অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট এক রাসুল এসেছেন। তোমাদিগকে যাহা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলুন আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ বা মাবুদ নাই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি। (সুরা-৯ তাওবাহ,আয়াত : ১২৮-১২৯)। আল্লাহর বিশেষ রহমত মহানবীর দুনিয়ায় আগমন। নবী করিম (সা.)-এর আবির্ভাবে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সমগ্র বিশ্ব পরিণত হয় এক বেহেশতি পরিবেশে। তাই তো আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেনহে নবী (সা.)! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি বিশ্বজগতের জন্য শান্তি ও রহমতস্বরূপ। (সুরা আম্বিয়া : ১০৭)

উত্তর দিচ্ছেন: ফখবুল ইসলাম নোমানী, ইসলামি গবেষক ও কলামিসট


বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মোবাইলের ব্যাককভারে প্রিন্ট করা ছবি লাগানো প্রসঙ্গে
কেউ মারা গেলে সে বাড়ীতে চারদিন পর্যন্ত চুলা না জ্বালানো প্রসঙ্গে।
কারো বাড়িতে কেউ মারা গেলে এ বাড়িতে চারমাস দশদিন বিয়েশাদী বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে।
বিয়ের সময় বউকে সাজিয়ে স্টেজে সবার সামনে বসিয়ে রাখা প্রসঙ্গে?
চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের জামাত পড়ার সময় তিন রাকাত না পেলে কেরাত পড়া প্রসঙ্গে।
আরও

আরও পড়ুন

আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ

আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ

যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ

যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে

মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে

সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়

সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়

লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ

লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ

ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০

ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০

গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ

গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ

আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫

আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫

নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট

ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট

ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত

ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত

আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস

আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন

শেনজেন অঞ্চলের পূর্ণ সদস্য হলো রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া

শেনজেন অঞ্চলের পূর্ণ সদস্য হলো রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া

প্লাস্টিক দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা

প্লাস্টিক দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা

১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন: মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ

১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন: মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ