ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪ | ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রমজান কীভাবে কাটাবেন

Daily Inqilab আবরার নাঈম

৩১ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৫০ এএম

পবিত্র মাহে রমজান আসন্ন। প্রতিটি মুমিন হৃদয় উচ্ছ্বসিত এ মাসের আগমনে। পাপের পাহাড় ধ্বসে যাবে গড়ে উঠবে নেকের পাহাড়। রব ও বান্দার মাঝে দৃঢ় হবে আবদিয়্যাত এর সম্পর্ক। শয়তানের আনুগত্য পরিহার করে বান্দা ফিরে আসবে আপন প্রতিপালকের নিকট। এমন বরকতময় মাস কীভাবে কাটাব, কোনটা করব কোনটা ছাড়ব এ-সব বিষয় হয়তোবা অনেকেরই অজানা। তাই পবিত্র রমজানের কিছু করণীয় ও বর্জনীয় দিক আলোচনা করা প্রয়োজনবোধ করছি।

রমজানে কতিপয় করণীয় : ১. রমজানের রোজা রাখা। প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ, বুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি নর-নারীর উপর রমজানের রোজা রাখা ফরজ। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোাজ ফরজ করা হয়েছে। সাধারণভাবেই প্রশ্ন জাগে এই রোজা শুধু কি আমাদের উপরই ফরজ, নাকি পূর্ববর্তী উম্মতের উপরও ফরজ ছিল? আয়াতের পরের অংশে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। রোজা রেখে উপকারীতা কী?কেনইবা রোজা রাখব? এর উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলেন, রোজা এজন্য রাখবা, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার। (সূরা বাকারাহ : ১৮৩)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। (সূরা বাকারাহ : ১৮৫) ।

এক হাদিসে হযরত ইবনে আব্বাস রা থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সা ইরশাদ করেন, তোমরা রমজানের পূর্বে রোজা রেখ না। রমজানের চাঁদ দেখার পর রোজা রাখা আরম্ভ কর। চাঁদ দেখার পর তা ভাঙ্গ। মেঘের কারণে চাঁদ দেখা না গেলে তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ কর। (সুনানে তিরমিজি : ৬৮৮)। উপরিউক্ত আয়াত ও হাদিসের আলোকে রোজা ফরজ হওয়া এবং রোজা রাখার সময়সীমা নির্ধারিত হয়ে গেল।

২. সাহরী খাওয়া। সাহরী একটি বরকতময় খাবার। যদিও তা সামান্য পরিমাণে হয়। হযরত আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত- রাসূল সা. ইরশাদ করেনঃ তোমরা সাহরী খাও। কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে। (সুনানে নাসায়ী-২১৪৭)। তাই অলসতা ছেড়ে শেষরাতে ঘুম থেকে জেগে অল্প পরিমাণে হলেও সাহরী খাওয়া। এতে রাসূল সা. এর সুন্নতের উপর আমল হবে পাশাপাশি শারীরিক উপকারীতা তো আছেই। ৩. কুরআন তেলাওয়াত করা। রমজান মাস হলো পবিত্র কুরআন নাযিলের মাস। কুরআন ছাড়াও পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাব এ মাসেই অবতীর্ণ হয়েছে। তাই বছরের অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় এ মাসে কুরআন তেলাওয়াতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়াই যুক্তির দাবি। আল্লাহ তাআলা বলেন, রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েতে এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৫)।

৩. অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা। কারণ এই মাসে অন্যান্য আমলের প্রতিদান যেমন একের বদলে সত্তুর,ঠিক তেমনি দানের বেলায় কম নয়। তাই বেশি থেকে বেশি দান করা। রমজানে রাসূল সা এর দান-সদকার অব¯া কেমন ছিল এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস এখানে পেশ করছিঃ-হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, রাসূল সা ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন। রমজানে জিবরাইল যখন তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাইল আ. তার সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সা তাকে কোরআন পড়ে শোনাতেন। জিবরাইল যখন তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন। ( সহীহ বুখারী-১৯০২)।

৪. ইফতার করানো। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধায় ইফতার করা ও করানো দুটোই পূণ্যের কাজ। এতে রোজা রেখে যে সওয়াব হাসিল হয় কোনো রোজাদারকে ইফতার করালেও সেই পরিমাণ সওয়াব হাসিল হয়। তাই এমন একটি মহৎ কাজে প্রত্যেক মুমিনের যথাসাধ্য শরীক থাকা অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করি। বিভিন্ন হাদিসেও রাসূল সা. এ বিষয়ে সাহাবিদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এক হাদিসে হযরত যাইদ ইবনে খালিদ আল জুহানী রা থেকে বর্ণিত আছে : রাসূল সা. ইরশাদ করেন, কোনো রোজাদারকে যে লোক ইফতার করায় সে লোকের জন্যও রোজা পালনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। কিন্তু এর ফলে রোজা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দু পরিমাণ কমানো হবে না। (সুনানে তিরমিজি-৮০৭)।

রমজানের কতিপয় বর্জনীয়। ১. রোজা অবস্থায় গীবত থেকে বেচে থাকা। গীবত একটি নিন্দনীয় কাজ। যা আল্লাহ ও তার রাসূল এবং মুমিনগণ ঘৃণা করেন। কুরআনে গীবত করাকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! কতো জঘন্য অপরাধ এটা। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করনা। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে চায়? বস্তুত তোমরা তো এটা ঘৃণাই কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। গীবত কাকে বলে? এক হাদিসে রাসূল সা এর পরিচয় দিয়েছেন এভাবে- তুমি তোমার ভাই সম্পর্কে তার অগোচরে এমন আলোচনা কর, যা সে শুনতে পেয়ে অপছন্দ করবে। এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, যদি তার মধ্যে বাস্তবেই সে দোষ থাকে( তা উল্লেখ করাও গীবত)? তিনি বললেন, তার মাঝে বাস্তবিকই যদি সে দোষ থাকে,তবে সেটাই তো গীবত। আর না থাকলে তো সেটা অপবাদ। অন্য হাদিসে রাসূল সা. বলেন, গীবত হলো যিনার চেয়ে ভয়ংকর অপরাধ। তাই এমন ঘৃণিত এবং জঘন্য অপরাধ থেকে আমাদের বেঁচে থাকা কর্তব্য।

২. মিথ্যা কথা না বলা। সকল গোনাহের মূল হচ্ছে মিথ্যা কথা বলা। তাই মিথ্যা কথা বলা সর্বাবস্থায় পরিহারযোগ্য। বিশেষত রমজান মাসে। রোজা রেখে সবধরনের মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকাই রোজার উদ্দেশ্য। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার। এক হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা এবং সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ বুখারী : ১৯০৩)। অতএব মিথ্যা, পরনিন্দা, চোগলখোরি এসব নিন্দনীয় কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পবিত্র রমজানের পুরোপুরি হক আদায় করে তার সমূহ বরকত হাসিলের তাওফিক দান করুন। আমিন।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের অবদান
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
দোয়া কবুল হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়সমূহ
দুর্ভিক্ষ, বিপর্যয় কেন আসে
জনসাধারণের খোঁজ-খবর নেয়া শাসকের নৈতিক দায়িত্ব
আরও

আরও পড়ুন

পর্তুগালের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরের রাউন্ডে ক্রোয়েশিয়া

পর্তুগালের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরের রাউন্ডে ক্রোয়েশিয়া

মধ্যপ্রদেশে মেলা থেকে মুসলিম ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ

মধ্যপ্রদেশে মেলা থেকে মুসলিম ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ

ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করা পুলিশ সদস্যের তালিকা হচ্ছে

ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করা পুলিশ সদস্যের তালিকা হচ্ছে

আয়ারল্যান্ড সিরিজে অভিজ্ঞদের দলে ফেরাল বাংলাদেশ

আয়ারল্যান্ড সিরিজে অভিজ্ঞদের দলে ফেরাল বাংলাদেশ

হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী শীর্ষ নেতাদের কারাদণ্ড

হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী শীর্ষ নেতাদের কারাদণ্ড

হেমন্তের শেষভাগেও বরিশালে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে : কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব অব্যাহত

হেমন্তের শেষভাগেও বরিশালে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে : কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব অব্যাহত

কামরুল ইসলাম ৮ দিনের রিমান্ডে

কামরুল ইসলাম ৮ দিনের রিমান্ডে

ঢাকায় হিপহপের ঝলক দেখালেন র‍্যাপার টাইগা ট্রিস

ঢাকায় হিপহপের ঝলক দেখালেন র‍্যাপার টাইগা ট্রিস

মুরাদের হ্যাটট্রিক, বোলিং অনুশীলন হলো ভালোই

মুরাদের হ্যাটট্রিক, বোলিং অনুশীলন হলো ভালোই

গারো পাহাড়ের চাঞ্চল্যকর সোহেল হত্যা মামলায় ৩ জন গ্রেপ্তার

গারো পাহাড়ের চাঞ্চল্যকর সোহেল হত্যা মামলায় ৩ জন গ্রেপ্তার

বিতর্কিত এনজিও-নেত্রীদের দিয়ে নারী সংস্কার কমিশন গঠন: ব্যাপক সমালোচনা

বিতর্কিত এনজিও-নেত্রীদের দিয়ে নারী সংস্কার কমিশন গঠন: ব্যাপক সমালোচনা

সাদপন্থীদের সড়কে অবস্থান : রাজধানীতে তীব্র যানজট

সাদপন্থীদের সড়কে অবস্থান : রাজধানীতে তীব্র যানজট

মুখ ঢেকে রাতের অন্ধকারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিল

মুখ ঢেকে রাতের অন্ধকারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিল

ইমরান খানের ‘শেষ ডাক’’,আগামী দুইমাস ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি

ইমরান খানের ‘শেষ ডাক’’,আগামী দুইমাস ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি

চট্টগ্রামে পালানো হাসিনার বিরুদ্ধে আরেক মামলা

চট্টগ্রামে পালানো হাসিনার বিরুদ্ধে আরেক মামলা

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে নতুন চেয়ারম্যান হলেন শাহীন সুলতানা

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে নতুন চেয়ারম্যান হলেন শাহীন সুলতানা

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে গিয়ে অসুস্থ প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট, হাসপাতালে ভর্তি

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে গিয়ে অসুস্থ প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট, হাসপাতালে ভর্তি

ইসরাইলি বর্বর হামলায় নিহত আরও ৫০ ফিলিস্তিনি

ইসরাইলি বর্বর হামলায় নিহত আরও ৫০ ফিলিস্তিনি

মধুপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৪

মধুপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৪

হিজবুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে

হিজবুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে