মাহে রমজান : ফজিলত ও করণীয়
৩১ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:১৬ এএম
মাহে রমযান বছরের বাকি এগার মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের বিশেষত্ব অনেক। ১. এ মাসেই মানুষ ও জিন জাতির মুক্তির সনদ কুরআন মজীদ একত্রে লাওহে মাহফূয থেকে প্রথম আসমানে বাইতুল ইযযতে অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলে কারীম (সা.)-এর নিকট সর্বপ্রথম এ মাসেই ওহী অবতীর্ণ হয়। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : ‘রমযান মাসই হল সে মাস যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। (সূরা বাকারা : ১৮৫)। ২. এ মাসে রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। হাদীস শরীফে এসেছে- ‘রমযান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৭৯/২)।
৩. অন্য এক হাদীসে এ মাসের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে যে, ‘রমযান মাসের শুভাগমন উপলক্ষে জান্নাতের দরজাসমুহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৭৯/১)। ৪. এ মাস জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভের মাস। সুতরাং বেশি বেশি ইবাদত ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে মুক্তির পরওয়ানা লাভ করার এটিই সুবর্ণ সুযোগ। হাদীস শরীফে এসেছে- ‘আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমদ হাদীস ২১৬৯৮)। ৫. ব্যবসায়ী মহলের একটি বিশেষ মৌসুম থাকে যখন তাদের ব্যবসা হয় খুব জমজমাট ও লাভজনক। সে মৌসুমে বৎসরের অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আয় হয়। আখেরাতের ব্যবসায়ীদের জন্য আখেরাতের সওদা করার উত্তম মৌসুম হল এই রমযান মাস। কেননা এ মাসে প্রতিটি আমলের অনেক গুণ বেশি ছওয়াব পাওয়া যায়। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন- ‘রমযানের ওমরা হজ্জ সমতুল্য।’ (জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৩৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৯৮৬)।
অন্য এক বর্ণনায় (যা সনদের দিক থেকে দুর্বল) বিষয়টি এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘রমযান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফযর আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরয আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরয আদায় করল। (শুআবুল ঈমান ৩/৩০৫-৩০৬)। অর্থাৎ এ মাসে নফল আদায় করলে অন্য মাসের ফরযের ন্যায় ছওয়াব হয়। আর এ মাসের এক ফরযে অন্য মাসের ৭০ ফরযের সমান ছওয়াব পাওয়া যায়। এ তো হল রোযা ছাড়া এ মাসের অন্যান্য আমলের ছওয়াব। আর রোযার ছওয়াব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা নিজেই ইরশাদ করেন- (তরজমা) ‘নিশ্চয় রোযা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দিব।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫১/১৬৫)। এ ছওয়াবের পরিমাণ যে কত তা একমাত্র তিনিই জানেন। এ প্রসঙ্গে ‘রোযার ফযীলত’ শিরোনামে আলোকপাত করা হয়েছে।
রমযান মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের মাস। তাই এমন মাস পেয়েও যে ব্যক্তি স্বীয় গুনাহ মাফ করাতে পারল না তার জন্য স্বয়ং জিবরাঈল আ. বদদুআ করেছেন এবং নবী করীম (সা.) রাহমাতুল্লিল আলামিন হয়েও আমীন বলে সমর্থন জানিয়েছেন। হাদীস শরীফে এসেছে- ‘নবী কারীম (সা.) মিম্বরে উঠে আমীন, আমীন, আমীন বললেন। তাঁকে বলা হল, হে রাসূল! আপনি তো এরূপ করতেন না। নবী (সা.) ইরশাদ করেন, জিবরাঈল আমাকে বললেন, ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেয়েও (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি বললাম, আমীন। অতঃপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমযান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমীন। জিবরাঈল আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার নিকট আমার নাম আলোচিত হল অথচ সে আমার উপর দুরূদ পড়ল না। আমি বললাম, আমীন। (আল আদাবুল মুফরাদ : ২২৫, হাদীস ৬৪৬; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৯০৮)।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে রমযানের হক আদায় করার তওফীক দান করুন এবং নবীজীর অভিসম্পাৎ থেকে রক্ষা করুন। আমীন!
রোযা : রমযান মাসে রোযা রাখা ফরয। এটা এ মাসের বিশেষ আমল। সকল আদব রক্ষা করে পুরো মাস রোযা রাখা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। তারাবীহ : রমযানের রাতের বিশেষ আমল হল কিয়ামে রমযান তথা বিশ রাকাত তারাবীহ। এ মাসের অফুরন্ত রহমত ও মাগফিরাত লাভ করার জন্য এবং প্রতিশ্রুত ছওয়াব ও পুরস্কার পাওয়ার জন্য তারাবী নামাযের প্রভাব অপরিসীম। দান করা : দান-সদকা সর্বাবস্থাতেই উৎকৃষ্ট আমল, কিন্তু রমযানে তার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। হাদীস শরীফে এসেছে- ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) দুনিয়ার সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন। রমযান মাসে তাঁর দানের হস্ত আরো প্রসারিত হত।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০২)।
কুরআন মজীদ তেলাওয়াত : এ মাস কুরআন অবতরণের মাস। রাসূলুল্লাহ (সা.) জিবরীল আ.-এর সাথে রমযানের প্রত্যেক রাতে কুরআন মজীদ দাওর করতেন। হাদীস শরীফে এসেছে- ‘হযরত জিবরীল আ. রমযানের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সাক্ষাত করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে কুরআন মজীদ শোনাতেন।’(সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০২)। অতএব আমাদের প্রত্যেকের উচিত রমযানে অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করা। অন্তত একবার হলেও কুরআন মজীদ খতম করা। সালাফে সালেহীনের জীবনী আলোচনা করলে দেখা যায় যে, তাঁরা এবং পরিবারের সদস্যগণ প্রত্যেকে রমযানে বহুবার কুরআন মজীদ খতম করতেন।
নফল ইবাদত : এ মাসে শয়তান শৃংখলাবদ্ধ থাকে। এই সুযোগে অধিক পরিমাণে নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করা যায়। এ মাসে যে কোনো ইবাদত নিয়মিত করতে তেমন কোনো বেগ পেতে হয় না এবং পরবর্তীতে তা সহজেই অভ্যাসে পরিণত হয়। সুতরাং যিকির-আযকারের সঙ্গে অধিক পরিমাণে নফল নামায আদায় করা উচিত। অন্তত বিভিন্ন সময়ের নফল নামাযগুলো আদায় করা যেমন-ইশরাক, চাশত ও তাহাজ্জুদ ইত্যাদি। আফসোসের বিষয় এই যে, রমযানে সাহরীতে উঠলেই দু’চার রাকাত তাহাজ্জুদ নামায সহজেই পড়া যায়। বছরের অন্য দিনের মতো কষ্ট করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অমনোযোগী হওয়ার ফলে কিংবা সাহরীতে অতি ভোজনের কারণে তাহাজ্জুদ আদায়ের সুযোগ হয়ে ওঠে না।
দুআ করা : এ মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও জান্নাত লাভের মাস। তাই বেশি বেশি আল্লাহ তাআলার শরণাপন্ন হয়ে কান্না-কাটি করে দুআ করা একান্ত কাম্য। মাগফিরাত কামনা করা : যে ব্যক্তি রমযান পেয়েও স্বীয় গুনাহসমূহ ক্ষমা করাতে পারল না তার উপর জিবরীল আ. ও দয়ার নবী (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। তাই জীবনের কৃত গুনাহের কথা স্মরণ করে বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে ক্ষমা মঞ্জুর করিয়ে নেওয়ার এটিই উত্তম সময়। বিশেষ করে ইফতার ও তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহ তাআলার দরবারে ক্ষমা চাওয়া এবং দুআ করা উচিত।
ই’তিকাফ : শেষ দশকের মাসনূন ই’তিকাফ অত্যন্ত ফযীলতের আমল। হাদীস শরীফে এসেছে- ‘নবী কারীম (সা.) রমযানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭১)। শবে কদর অন্বেষণ : ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ করে সহস্র রজনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও উত্তম রাত-লাইলাতুল কদর তালাশ করা কর্তব্য। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : ‘নিঃসন্দেহে কদরের রাতে আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি। আর আপনি কি জানেন শবে কদর কী? শবে কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতা ও রুহুল কুদ্স (জিবরাঈল আ.) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক মঙ্গলময় বস্ত্ত নিয়ে (পৃথিবীতে) অবতরণ করে। (এ রাতের) আগাগোড়া শান্তি যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সূরা কদর)। (চলবে)।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়