ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

আল্লাহর সিদ্ধান্তই মুমিনের জন্য মঙ্গল

Daily Inqilab মুফতি আ. জ. ম. ওবায়দুল্লাহ্

১৬ জুন ২০২৩, ০৭:৩৩ পিএম | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

আমরা আমাদের জীবনে চলার পথে অনেক বিপদ-আপদ, বালা-মুসীবত ও বাঁধা-বিপত্তির সম্মুখীন হই। আমরা অনেক সময় এতে বিরক্ত ও নৈরাশ হয়ে যাই। তবে একটি জিনিস আমাদের বুঝতে হবে যে, ভাল-মন্দ যা কিছুই ঘটে না কেন, সবই কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে তারই হুকুমে হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা অনেক সময় আমাদেরকে বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন, আবার অনেক সময় বিপদের মধ্য দিয়েই আমাদের উপর রহমত ও দয়া প্রদর্শন করেন; কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারিনা। সুতরাং আমাদের উপর বিপদ আসলে কখনোই নৈরাশ ও ধৈর্যহারা হওয়া উচিত নয়। বরং তখন আমাদেরকে সবর ও শুকরিয়া আদায় করতে হবে।

বিপদে সবর করার বিষয়টি স্পষ্ট, কিন্তু বিপদে শুকরিয়া আদায়ের কোনো বিষয় থাকতে পারে কি? হ্যা, সবরের পাশাপাশি বিপদে শুকরিয়া আদায় করারও বিষয় রয়েছে। বিপদে কেন আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করতে হবে? ওলামায়ে কেরাম তার কয়েকটি কারণ ব্যাখ্যা করেছেন- প্রথমত: আল্লাহ তাআলা আমাকে যে বিপদ দিয়েছেন, এর ওসিলায় হয়তো তিনি বড় বিপদ থেকে আমাকে রক্ষা করেছেন। দ্বিতীয়ত: আল্লাহ আমাকে যে বিপদ দিয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে হয়তো তিনি আমাকে বড় ধরনের উপকার বা দয়া করেছেন, যা আমি স্বল্প জ্ঞানের কারণে উপলব্ধি করতে পারিনি। তৃতীয়ত: আমার উপর আরোপিত বিপদের কারণে আল্লাহ তাআলা হয়তোবা আমার গোনাহসমূহ মাফ করে দিয়েছেন। চতুর্থত: এই বিপদ দিয়ে হয়তো তিনি পরকালে আমাকে একটি বড় বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। পঞ্চমত: এই বিপদের কারণে হয়তো তিনি জান্নাতে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন।

সুতরাং প্রতীয়মান হল- বিপদের মাঝেও বহু কল্যাণ ও মঙ্গলের দিক রয়েছে, তা জানার পরে কোন মানুষেরই বিপদে নৈরাশ ও অধৈর্য হওয়ার কোন কারণ থাকতে পারেনা। তাই সব সময় এই একীন বা বিশ^াস করতে হবে- যা কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তাতে বিবিধ উপকারীতা ও কল্যাণ নিহিত আছে। কিন্তু হয়তো আমরা কল্যাণের দিকটা তাৎক্ষণিক বুঝতে পারিনা। পরে যখন আল্লাহ আমাদেরকে তা বুঝার তাওফিক প্রদান করেন, তখন আমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ঠিকই অনুতপ্ত হই এবং আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি। বিপদের মধ্য দিয়েও যে আল্লাহ আমাদের উপর দয়া ও উপকার করেন, তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হল :

কোন এক যুগে সমুদ্রের মাঝখানে একটি জাহাজ প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে পড়ে বাতাস ও ঢেউয়ের প্রকোপে ডুবে গেল এবং যাত্রীরা অধিকাংশই ডুবে মারা গেল। সেই জাহাজের বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী ভাসতে ভাসতে নির্জন এক দ্বীপে এসে পৌছালো। জ্ঞান ফেরার পর প্রথমেই সে আল্লাহর দরবারে প্রাণখুলে শুকরিয়া জানালো তার জীবন বাঁচানোর জন্য। তারপর বাড়ীতে ফিরে যেতে চেষ্টা শুরু করল। প্রতিদিন সে দ্বীপের তীরে এসে বসে থাকতো, যদি কোন জাহাজ সেদিকে আসে এই আশায়। কিন্তু প্রতিদিনই তাকে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হতো। এরই মধ্যে সে সমুদ্র তীরে থাকার জন্য ছোট একটি ঘর তৈরি করল। সমুদ্রের মাছ শিকার করে এবং বন থেকে ফলমূল খেয়ে সে বেঁচে থাকল।

একদিন সে খাবারের খোঁজে বনের গভীরে প্রবেশ করল। বন থেকে ফিরে সে দেখতে পেল যে, তার রান্না করার চুলা থেকে আগুন লেগে পুরো ঘরটিই ছাই হয়ে গিয়েছে এবং কালো ধোঁয়ায় আকাশ ছেয়ে গেছে। লোকটি চিৎকার করে উঠল আর বলল, হায় আল্লাহ! তুমি আমার এত কষ্টের ঘরটিও শেষমেশ পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিলে! এই বলে সে মাতম করতে করতে ঘুমিয়ে গেল। পরদিন সকালে একটি জাহাজের আওয়াজে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে দেখতে পেল- জাহাজটি তাকে ইঙ্গিত করে দ্বীপের দিকেই আসতেছে। আসতে আসতে যখন জাহাজটি দ্বীপে নোঙ্গর তুলল, তখন অসহায় লোকটি জাহাজের ক্যাপ্টেনকে বলল, আপনারা এখানে কী উদ্দেশ্যে আসলেন? জাহাজের ক্যাপ্টেন বলল, আমরা আপনাকে উদ্ধার করার জন্যই এখানে এসেছি। লোকটি অবাক হয়ে বলল, আপনারা কিভাবে জানলেন যে, আমি এখানে আটকা পড়ে আছি? জাহাজের ক্যাপ্টেন জানালো- দূর থেকে আমরা দেখতে পেলাম যে, এই দ্বীপে আগুন জ¦লতেছে। এতেই আমরা বুঝতে পেরেছি, নিশ্চয়ই এখানে কোন মানুষ বিপদের মধ্যে রয়েছে। তাই আমরা আপনাকে উদ্ধার করতে এসেছি।

লোকটি তখন বুঝতে পারল- ঘরে আগুন না লাগলে জাহাজ কর্তৃপক্ষ এখানে কখনোই আসতো না। আর আমিও কখনো বাড়ীতে ফিরে যেতে পারতাম না। আল্লাহ যা করেন, তা মানুষের কল্যাণের জন্যই করেন। কিন্তু আমরা তা না বুঝতে পেরে অহেতুক আহাজারি করি।

শিক্ষা: সকল বিপদ-আপদ ও বালা-মুছীবতে আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে ধৈর্যের সাথে বিপদ-মুছীবতকে হাসিমুখে বরণ করে নিতে হবে এবং সর্বদা বিশ্বাস রাখতে হবে যে, ‘আল্লাহ যা করেন মুমিন বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন’।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো