ঢাকা   সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪ | ২৭ কার্তিক ১৪৩১

যেসব কর্ম শয়তানকে হতাশ করে

Daily Inqilab আবদুল কাইয়ুম শেখ

০৭ জুলাই ২০২৩, ১০:১৮ পিএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

শত্রুর কাজ হলো প্রতিপক্ষকে ঘৃণা করা ও তার ক্ষতি সাধন করা। যে ব্যক্তি নিজের শত্রুকে যত বেশি হতাশ, নিরাশ, পরাস্ত ও পর্যুদস্ত করতে পারে সে তত বেশি আপন ক্ষতি রোধ করতে পারে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নিজের শত্রুকে পরাজিত, বিপর্যস্ত ও ঘায়েল করতে পারে না সে অধিক পরিমাণে অকল্যাণ, ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। তাই বুদ্ধিমান লোকেরা নিজ নিজ শত্রুকে চিহ্নিত করে তাকে পরাস্ত করায় প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। আর এ বিষয়টি আমাদের জানা আছে যে, মানবজাতির জন্য শয়তানের চেয়ে বড় শত্রু আর কেউ নেই। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। মানুষকে পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত ও সত্যচ্যুত করার জন্য শয়তান সব সময় তৎপর রয়েছে। প্রতিটি মানুষকে জাহান্নামে নেওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়েই পৃথিবীর বুকে তার যাত্রা শুরু হয়েছে। তাই মানবজাতির প্রতিটি সদস্যের জন্য অপরিহার্য হলো, শয়তানের সব চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা নস্যাৎ করে তাকে হতাশ, নিরাশ ও ব্যর্থ করা। কতিপয় কর্ম এমন রয়েছে যেগুলো সম্পাদন করলে শয়তান হতাশ, নিরাশ ও ব্যর্থ হয়।

বিসমিল্লাহ বলা : হাদিস শরিফের ভাষ্য অনুযায়ী প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা বিসমিল্লাহ না বলে শুরু করা হয় তা বরকত শূন্য হয়। তাই কোন ব্যক্তি যদি গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ বিসমিল্লাহ না বলে শুরু করে, তাহলে শয়তান খুশি হয়। এমন কাজে সে অবাধে হস্তক্ষেপ করতে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্ষতি সাধন করতে পারে। কিন্তু ব্যক্তি যদি কোন কাজ শুরু করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে, তাহলে শয়তান মনমরা হয়ে যায়। সে উল্লিখিত ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারবে না বলে হতোদ্যম হয়। হজরত আবুল মালিহ রহ. জনৈক সাহাবি সূত্রে বলেন, আমি জন্তুযানে নবি সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে বসা ছিলাম। হঠাৎ তার বাহন হোঁচট খেলে আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হয়েছে। তিনি বললেন, এ কথা বলো না যে, শয়তান ধ্বংস হয়েছে। কেননা তুমি এ কথা বললে সে অহংকারে ঘরের মতো বড় আকৃতির হয়ে যাবে ও বলবে, আমার ক্ষমতা হয়েছে। অতএব, বলো, বিসমিল্লাহ। যখন তুমি বিসমিল্লাহ বলবে তখন শয়তান হ্রাসপ্রাপ্ত হয়ে মাছির মত হয়ে যাবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৮২)।

আল্লাহকে স্মরণ করা : যে ঘরে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয় সেই ঘরে শয়তান বসবাস করতে পারে না। অনুরূপভাবে যে খাওয়ার পূর্বে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় সেই খাওয়ায় শয়তান অংশ নিতে পারে না। তাই শয়তান মানুষকে সব সময় আল্লাহ ভুলা করে রাখতে চায়। সে মানব শ্রেণীকে আল্লাহ থেকে উদাসীনরূপে দেখতে চায়। এই চিরশত্রু শয়তান যেন মানুষের ঘরে বসবাস করতে না পারে এবং মানবজাতির সঙ্গে খাওয়া দাওয়ায় অংশ নিতে না পারে তাই মানব শ্রেণীর জন্য করণীয় হলো, তাদের হৃদয়ে সব সময় আল্লাহর স্মরণ জাগ্রত রাখা। ঘরে প্রবেশের পূর্বে ও খাওয়ার সূচনায় আল্লাহর নাম নিলে বঞ্চনার দরুন শয়তান হতাশ হয়। হজরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশের এবং খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে, তখন শয়তান হতাশ হয়ে তার সঙ্গীদের বলে, এখানে তোমাদের রাত্রি যাপনও নেই, খাওয়াও নেই। আর যখন সে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে আল্লাহর নাম স্মরণ না করে, তখন শয়তান বলে, তোমরা থাকার স্থান পেয়ে গেলে। আর যখন সে খাবারের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ না করে, তখন শয়তান বলে, তোমাদের নিশি যাপন ও রাতের খাওয়ার ব্যবস্থা হলো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫১৫৭)।

আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া : শয়তান মানুষকে জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাপ কাজ করায়। কিন্তু মানুষ যখন পাপ কাজ করার পর মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তখন আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন। এতে শয়তানের উদ্দেশ্য প- হয়ে যায়। তার কষ্ট বেকার হয়ে পড়ে। তাই পাপ কাজ করার পর যখন মানুষ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় এবং আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন তখন শয়তান আপন পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে দেখে অত্যন্ত হতাশ হয়। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ইবলিস তার রবকে বলেছে, আপনার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম, আমি বনি আদমকে ভ্রষ্ট করতেই থাকব যতক্ষণ তাদের মধ্যে রূহ থাকে। আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম, আমি তাদের ক্ষমা করতে থাকব যতক্ষণ তারা আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে। (মুসনাদে আহমদ)।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের অবদান
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
দোয়া কবুল হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়সমূহ
দুর্ভিক্ষ, বিপর্যয় কেন আসে
জনসাধারণের খোঁজ-খবর নেয়া শাসকের নৈতিক দায়িত্ব
আরও

আরও পড়ুন

দফতর পুনর্বণ্টনের পর কে পেলেন কোনটি

দফতর পুনর্বণ্টনের পর কে পেলেন কোনটি

গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা বন্ধ করেছে কাতার

গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা বন্ধ করেছে কাতার

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না ইইউ

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না ইইউ

ইয়েমেনের রাজধানীতে মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর অভিযান

ইয়েমেনের রাজধানীতে মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর অভিযান

আড়াই হাজার লিটার বুকের দুধ দান করে বিশ্বরেকর্ড

আড়াই হাজার লিটার বুকের দুধ দান করে বিশ্বরেকর্ড

পরাজয় নিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরে উত্তাপ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

পরাজয় নিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরে উত্তাপ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

দলীয় পদে শামা ওবায়েদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

দলীয় পদে শামা ওবায়েদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

পরকীয়ার জন্য স্বামী আত্মঘাতী হলে দায় স্ত্রীর নয় : আদালত

পরকীয়ার জন্য স্বামী আত্মঘাতী হলে দায় স্ত্রীর নয় : আদালত

ফের রাজপথে

ফের রাজপথে

মার্কিন-মেক্সিকো চুক্তি

মার্কিন-মেক্সিকো চুক্তি

বিশ্ব সেরা স্কুল

বিশ্ব সেরা স্কুল

দুঃসংবাদ

দুঃসংবাদ

৮৮ হাজার টাকা জরিমানা, ৯৩৬ কেজি পলিথিন জব্দ

৮৮ হাজার টাকা জরিমানা, ৯৩৬ কেজি পলিথিন জব্দ

তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে সিলেটে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় টিমের মতবিনিময়

তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে সিলেটে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় টিমের মতবিনিময়

শহীদ নুর হোসেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক : ডা. ইরান

শহীদ নুর হোসেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক : ডা. ইরান

সিলেটের বন্ধ থাকা সকল পাথর কোয়ারী খুলে দিতে হবে: চরমোনাইর পীর

সিলেটের বন্ধ থাকা সকল পাথর কোয়ারী খুলে দিতে হবে: চরমোনাইর পীর

সাইবার বুলিং বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকার আলাদা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে : নাহিদ ইসলাম

সাইবার বুলিং বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকার আলাদা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে : নাহিদ ইসলাম

ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির বন্ধুত্ব কতটা মুখে আর কতটা কাজে!

ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির বন্ধুত্ব কতটা মুখে আর কতটা কাজে!

যশোরের সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত ট্রাক আটক

যশোরের সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত ট্রাক আটক