সুুস্থতা ও অবসর দুটো নিয়ামত
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এমন দু’টি নিয়ামত আছে, যে দু’টিতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। তা হচ্ছে, সুস্থতা ও অবসর।’ (বুখারী : ৬৪১২)। সত্যিকারার্থে সুস্থতা ও অবসর আল্লাহর দেয়া অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি নিয়ামত। সুস্থতা কত বড় নিয়ামত তা অনুধাবন করার জন্য একজন অসুস্থ ব্যক্তির কাছে যেতে হবে। তিনি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেন সুস্থতা তার জীবনে কত বড় নিয়ামত ছিল। তেমনিভাবে অবসরের গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য একজন ব্যস্ত ব্যক্তির কাছে যেতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ দু’টো নিয়ামতের প্রতি আমরা বড়ই অবহেলা করি। আজকে যারা সুস্থ আছেন বা অবসর সময় আছে তারা এ দু’টো নিয়ামতকে অবহেলা ভরে আজে বাজে কাজে ব্যয় করে থাকি। বেহুদা কাজে নিজেদের সময় ও সুস্থতাকে বিনিয়োগ করে মহাকালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। একদিন এই সুস্থতা থাকবে না আর অবসরও থাকবে না। বিচিত্র নয়, একদিন এমন সময় আসবে যে, মাথার চুল ছিড়লেও এই সময় ও যৌবনকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। সেদিন আফসোসই হবে শুধু জীবন সাথী।
উল্লেখিত হাদীসটি আল কুরআনের ছোট্ট সুরা আল আসরের প্রতিধ্বনি। সেখানে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,‘সময়ের কসম। মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনছে, সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।’ (আল আসর : ১-৩)। এ সুরায় সময়ের কসম খাওয়া হয়েছে যে, মানুষ বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে এবং এই ক্ষতি থেকে তারাই রক্ষা পাচ্ছে যারা চারটি কাজ করছে ১. ঈমান ২. সৎকাজ ৩. পরস্পরকে হকের উপদেশ দিচ্ছে ৪. একে অন্যকে সবর করার উপদেশ দিচ্ছে। অত্যন্ত সীমিত ও সুনির্দিষ্ট মানুষের জীবন। এই সুনির্দিষ্ট জীবনে মানুষকে কত কিছুই না করতে হয়। জীবনকে যদি চারটি ভাগে ভাগ করেন এবং সেখান থেকে শিশুকাল বাদ দেন তাহলে এই নির্দিষ্ট সময় আরো ছোট্ট হয়ে আসে। সেই চারটি হলো, শিশুকাল, বালেগ হওয়ার পর যৌবন, প্রৌঢ় ও বার্ধক্যকাল। অত্যন্ত সীমিত জীবনের এ সময়টুকু খুব দ্রুত প্রতি মহুর্তে অতীতের অতল গহব্বরে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে। যা আর কখনো ফিরে আসে না এর কোন পূণরাবৃত্তিও ঘটবে না। কুরআনের এই সুরায় সময়ের কসম করে সুস্থতা ও অবসরেরই প্রতিধ্বনি করা হয়েছে।
সুস্থতা ও অবসর মানুষের সারা জীবনকেই বুঝায়। হাদীসে এই দু’টি নিয়ামতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ বলা হয়েছে। আবার সুরা আসরেও বলা হয়েছে মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। ক্ষতি বলতে লাভের বিপরীতেকে বুঝায়। যখন কোন ব্যবসায়ী তার সমস্ত পূঁজি লোকসান দিয়ে দেউলিয়া হয়ে যায় তখন এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আল কুরআনে এই শব্দটি কল্যাণ ও সফলতার বিপরীত অর্থে ব্যবহার করেছে। কুরআনের সাফল্যের ধারণা যেমন নিছক কোন পার্থিব সমৃদ্ধির সমার্থক নয় বরং দুনিয়া থেকে নিয়ে আখিরাত পর্যন্ত মানুষের প্রকৃত ও যথার্থ সাফল্য এর অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে তার ক্ষতির ধারণাও নিছক পার্থিব ব্যর্থতা ও দুরবস্থার সমার্থক নয় বরং দুনিয়া থেকে নিয়ে আখিরাত পর্যন্ত মানুষের সমস্ত যথার্থ ব্যর্থতা ও অসাফল্য এর আওতাভুক্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ কুরআন বলিষ্ঠতার সাথে চূড়ান্ত পর্যায়ে ঘোষণা দিচ্ছে, আসলে মানুষ ক্ষতির মধ্যে অবস্থান করছে, তখন এর অর্থ হয় দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানের ক্ষতি। এই ক্ষতি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় ক্ষতিকেই অন্তর্ভুক্ত করে।
সুস্থতা ও অবসর এর ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে এবং জীবনে সফলতা পেতে হলে সুরা আসরের পরিভাষায় আমাদেরকে চারটি কাজ করতে হবে। উল্লেখ্য, এই চারটি কাজ একটি পরিপূর্ণ সিলেবাস। অর্থাৎ ইসলামের সামগ্রীক কাজকর্মই এখানে নিহিত রয়েছে। প্রথমেই ঈমানের কথা বলা হয়েছে। ঈমান শুধু স্বীকৃতির নাম নয় বরং সাচ্চা দিলে মেনে নেয়া ও বিশ^াস করা। কুরআনের পরিভাষায় ঈমান হলো : আল্লাহ বলেন,‘মু’মিন তো আসলে তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনে আর তারপর সংশয়ে লিপ্ত হয় না।’ (আল হুজরাত : ১৫)। ‘যারা বলেছে, আল্লাহ আমাদের রব আর তারপর তার ওপর অবিচল হয়ে গেছে।’ (হা-মীম আস সাজদা : ৩০)। ‘আসলে তারাই মু’মিন, আল্লাহর কথা উচ্চারিত হলে যাদের দিল কেঁপে উঠে।’ (আনফাল : ২)।
আল্লাহ আমাদের প্রভু ও ইলাহ। তাঁর কর্তৃত্বে কারো অংশীদারিত্ব নেই। তিনি ভাগ্য গড়েন ও ভাঙেন। যা কিছু প্রয়োজন বান্দা একমাত্র তাঁর কাছেই চাইতে পারে। তিনি সবকিছু দেখেন এবং প্রতিটি কথা তিনি শোনেন। প্রকাশ্যে ও আড়ালের প্রতিটি আচরণ তিনি গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেন। তিনি রাসুল পাঠিয়েছেন। তাঁর মাধ্যমে আমাদের সবকিছু জানিয়ে দিয়েছেন। রাসুলকে বিশ^াস করা এবং তাঁকে মানার কারণ তিনি আল্লাহর নিযুক্ত পথপ্রদর্শক ও নেতৃত্বদানকারী। দ্বিতীয় যে বিষয়টি মানুষকে ক্ষতি থেকে বাঁচায় তা হলো, সৎকাজ। কুরআনের পরিভাষায় যাকে ‘সালেহাত’ বলা হয়। কোন ধরনের সৎকাজ ও সৎবৃত্তি এর বাইরে থাকে না। সৎকাজ হলো ঈমানের প্রতিফলন। মজবুত ঈমান বলে দিবে কোনটি করতে হবে এবং কোনটি করা যাবে না। আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রদর্শিত পন্থায় নিজের জীবন পরিচালনার নামই সৎকাজ।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়