যুবক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আজকের যুবসমাজ
১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১১ এএম

শুরুর কথা : মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হলো, তার যৌবনকাল। যৌবনকালকে জীবনের স্বর্ণযুগ বলা হয়। এটি হায়াতের সবচেয়ে মূল্যবান একটি অংশ। এ সময়টি যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বেশ ঝুঁকিপূর্ণও। এজন্য যৌবনে সফল হতে প্রয়োজন নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের বাস্তবায়ন। কেননা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্ববিষয়ে আমাদের আদর্শ। একজন শিশু থেকে শুরু করে যুবক বা বৃদ্ধ, শিক্ষক থেকে নিয়ে ছাত্র, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র, জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিটি শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য তিনি উত্তম আদর্শ। তার সকল আদর্শ আমাদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। তাঁর যৌবনকাল আমাদের যুবসমাজের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। যুবসমাজকে সত্য, সঠিক ও সফলতার রাজপথে উঠতে নবীয়ে আরাবীর সীরাত অনুকরণের কোন বিকল্প নেই।
নবীজির যৌবনকাল : নবীজির যৌবনকাল ছিল পবিত্র। নবীয়ে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যৌবনকাল ছিল পুত: পবিত্র, পাপ পঙ্কিলতা মুক্ত। যৌবনে তিনি কোনো অশৃঙ্খলতা প্রদর্শন করেননি। তিনি কোনোদিন জাহিলিয়াতের কোনো আচার অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। অন্ধযুগীয় কোনো পাপ কর্মেও লিপ্ত হন নি। ইবনে হিশাম রাহি, নবিজীর যৌবন কালের বিবরণ তুলে ধরে লিখেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুবক বয়সে উপনিত হলেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে রক্ষণাবেক্ষণ ও হেফাজত করেন। জাহেলিযুগের নোংরামি থেকে রক্ষা করেন।
কেননা তিনি তাকে রিসালত ও সম্মানের আসনে অধিষ্টিত করতে চান। তিনি ছিলেন তার লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম বীরত্বের অধিকারী, তাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্র, বংশে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানি, সর্বোত্তম প্রতিবেশি, কথাবার্তায় তাদের মধ্যে সবচেয়ে সত্যবাদী, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিশ্বস্ত, অনৈতিকতা ও অশ্লীলতা যা মানুষকে কলুষিত করে তা থেকে তিনি ছিলেন অনেক দূরবর্তী। (সীরাতে ইবনে হিশাম ১/১৮৩)।
হযরত খাদিজা রাযি.-এর মুখে নবীজির যৌবনকালের বিবরণ : উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজা রাযি. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়ত পূর্ববর্তী জীবনের কিছু অবস্থা তুলে ধরেছেন। তাঁর সংক্ষিপ্ত এ বক্তব্যে যৌবনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারিত্রিক উৎকর্ষতা, উন্নত চরিত্র ও মহানুভবতার চমৎকার বিবরণ উঠে এসেছে। খাদিজা রাযি. বলেছিলেন আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। (সহিহ বুখারি : ৩)।
আরবরা তাঁর নাম দিয়েছিল ‘আল-আমীন’ যুবক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমানতদারিতা ও সততা আরবদের কাছে প্রসিদ্ধ ছিল। সকলেই একবাক্যে তার সততা ও বিশ্বস্ততার স্বীকৃতি দিতো। বিশ্বাসের এই জায়গা থেকে আরব্য লোকের তাঁর কাছে নানানকিছু আমানত রাখত। নবীয়ে আরাবীর সততায় মুগ্ধ হয়ে আরবরা তাঁর নাম দিয়েছিল ‘আল আমীন’। ইবনে হিশাম রাহি. লিখেন, আরবের লোকেরা রাসুল সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লামের নাম রেখেছিল ‘আল আমীন’। (সীরাতে ইবনে হিশাম ১/১৯৮)।
জীবিকা নির্বাহ : মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যৌবনকাল ছিল খুবই আদর্শিক ও মিছালী জীবন। যৌবনে পদার্পন করে নবীয়ে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিকা নির্বাহের জন্য বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করেন। নি¤েœ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকটি পেশার বিবরণ তুলে ধরা হলো :
১. ছাগল চরানো : শৈশবে নবীয়ে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা হালিমা সাদিয়া রাযি. এর প্রতি পালনে থাকাকালে দুধ ভায়ের সাথে বকরী চরিয়েছেন।পরবর্তীতে যুবক বয়সেও তিনি ছাগল চরিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। হাদিস শরীফে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যত নবী রাসুল পাঠিয়েছেন সকলেই ছাগল চরিয়েছেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনিও কি চরিয়েছেন? তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আমি কয়েক কিরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরিয়েছি। (শ্রম খেটেছি)।’ বুখারী ২২৬২।
আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী রাহি, বলেন, সব নবীগণই ছাগল চরিয়েছেন। ছাগল চরানোর সাথে নবুওত পরবর্তী জীবনের বাস্তব একটি প্রশিক্ষণ হয়ে যায়। এজন্য আল্লাহ তায়ালা সকল নবীগণকে এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। একজন রাখাল যেমন তার পশুগুলোর প্রতি সর্বদা তৎপর থাকে, খোঁজ খবর রাখে। কোন একটি পশু যেন নেকড়ের শিকার না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখে তেমনি একজন নবী সদা-সর্বাদা তার উম্মতকে নিয়ে ফিকির করেন। উম্মতের মঙ্গল কামনা রাত দিন ব্যস্ত থাকেন। উম্মত যেন শয়তানের শিকার না হন সেজন্য নবীগণ সদা তৎপর থাকেন। (সীরাতে মুস্তফা ১/১২৯)।
২. ব্যবসা পরিচালনা : পরবর্তীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন। অল্প দিনেই তিনি ব্যাপক সুনাম ও বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। অনেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ব্যবসায় শরিক হন।তাদের একজন ছিলেন আব্দুল্লাহ বিন সায়েব রাযি.। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে মক্কা বিজয়ের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলে তিনি বলেন, ‘মোবারকবাদ হে আমার ভাই! মোবারকবাদ হে আমার ব্যবসার অংশিদার!’ (আর-রাহীকুল মাখতুম : ৬৫)।
ব্যবসা পরিচালনায় নবীজির আমানতদারির বিস্ময়কর ঘটনা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও আমানতদার। তিনি ব্যবসার কোন কাজে ওয়াদা দিলে তা রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আবুল হামসা রাযি. এর সাথে একবার ঘটে যায় এক বিস্ময়কর ঘটনা। আব্দুল্লাহ ইবনে আবুল হামসা রাযি. বলেন,”নবুওত লাভের পূর্বে আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে একটি জিনিস ক্রয় করি। কিছু দাম দেওয়া বাকি ছিল। আমি নবীজিকে বললাম, এখনই আমি অবশিষ্ট মূল্য নিয়ে এখানে আসছি। ঘটনাক্রমে ঘরে গিয়ে বিষয়টি বেমালুম ভুলে যাই। তিন দিন পর আমার এ কথা স্মরণ আসে। সাথে সাথে আমি অবশিষ্ট মূল্য নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম, তিনি সেখানেই আছেন। আমি হাজির হলে তিনি শুধু এতটুকু বললেন, ‘তুমি আমাকে বেশ কষ্ট দিলে। আমি তিন দিন যাবত এখানে তোমার অপেক্ষা করছি’। (সুনানে আবি দাউদ : ৪৯৯৬)। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

‘ফরিদপুরে উত্তাল’ 'ফিলিস্তিনে ইসরাইলী বাহিনীর গনহত্যার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ'

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সুন্দরগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল

গাজায় ইসরাইলের চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে নিটারে মিছিল

গাজায় ইসরাইলি বর্বর আগ্রাসনের প্রতিবাদে বেরোবিতে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

মুন্সীগঞ্জে ৩ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে নাগেশ্বরীতে বিেিক্ষভ মিছিল ও সমাবেশ

মৌলভীবাজারে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত

আটঘরিয়ায় সাদা সোনার বাম্পার ফলন

ভূরুঙ্গামারীতে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

মাগুরায় নিহত যুবদলের নেতা মিরাজের নামাজে জানাজায় গন মানুষের ঢল

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচারে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে দাউদকান্দিতে হেফাজত ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল

সাভার পৌরসভায় দুদকের অভিযান, অনিয়মে ও দুনীর্তির প্রমাণ মিলেছে

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে চিলমারীতে বিক্ষোভ মিছিল

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে গোয়ালন্দে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

ফিলিস্তিনে গণহত্যায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পীরগনজ বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবাদ -সমাবেশ

‘বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের উদ্যোগ ইতিবাচক, বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবেন’

রামুতে ফিলিস্তিনে গনহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল’ আন্দোলনে ঢাবি সাদা দলের সংহতি

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ: মিছিলে উত্তাল বায়তুল মোকাররম এলাকা