বিপদ-আপদ ও অভাব-অনটন দূর হওয়ার আমল
১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১১ এএম

জীবনে ধনসম্পদের প্রাচুর্য ও হালাল সম্পদ আল্লাহর তাআলার বিশেষ নেয়ামত। কিন্তু কখনো কখনো তিনি আমাদেরকে এগুলো না দিয়ে পরীক্ষায় ফেলেন, কিন্তু দুর্বল ঈমানদার হওয়ার কারণে অনেকে ধৈর্যহারা হয়ে পড়েন।আর মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের রিজিকেরও ব্যবস্থা করেছেন। আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অবলম্বন করা, তার নির্দেশাবলি পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। এর পাশাপাশি আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা, তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে তার সাহায্য প্রার্থনা করা।
কারণ, আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন, কখনো সচ্ছলতা দিয়ে আবার কখনো অভাব-অনটন দিয়ে। তাই সব অবস্থায় মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে। তার কাছেই অভাব-অনটন থেকে মুক্তি চাইতে হবে। আর এজন্য পবিত্র কোরআনে দোয়াও রয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেছিলেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দান করব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেবো এবং তোমার অভাব ঘুচিয়ে দেবো। আর যদি তা না করো, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেবো এবং তোমার অভাব দূর করবো না।’ (তিরমিজি) অভাব-অনটনের সময় নিরাশ হওয়া যাবে না। মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে চেষ্টা ও দোয়া করতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি এই দোয়াটি পাঠ করবে তার অভাব-অনটন দূর হয়ে যাবে। দোয়াটি হলো, উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল ফাকরি, ওয়াল কিল্লাতি, ওয়াজজিল্লাতি, ওয়া আউজুবিকা মিন আন আজলিমা আও উজলিমা। (বুখারি : ১৫৪৪)। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দরিদ্রতা থেকে এবং আপনার কম দয়া থেকে ও অসম্মান থেকে এবং আমি আপনার কাছে আরও আশ্রয় চাচ্ছি, কাউকে জুলুম করা থেকে অথবা কারও দ্বারা অত্যাচারিত হওয়া থেকে।)
অভাব থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহ আমাদের যে দোয়া শিখিয়েছেন, সেটি হলো, উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বানা আনজিল আলাইনা মায়িদাতাম মিনাস সামায়ি তাকানু লানা ঈদান লিআওয়ালিনা ওয়াআখিরিনা ওয়া আয়াতাম মিনকা। ওয়ার জুকনা ওয়া আনতা খাইরুর রজিকিন। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ১১৪)। অর্থ: ‘হে আল্লাহ, হে আমাদের রব, আসমান থেকে আমাদের প্রতি খাবারপূর্ণ দস্তরখান নাজিল করুন, যা আমাদের জন্য আনন্দের কারণ হবে; আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্যও। আর আপনার পক্ষ থেকে এক নিদর্শন হবে। এছাড়া আমাদের রিজিক দান করুন, আপনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করবে, মহান আল্লাহ তাকে সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ )।
দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচার আকুতি : অভাব-অনটন ও দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম আমল হলো দোয়া। মহানবী (সা.) দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, নবীজি (সা.)-এর যুগে (অতিবৃষ্টির কারণে) মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হলে একদিন জুমার দিন তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে লোকদের সামনে জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। এক বেদুইন দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, ধন-সম্পদ বরবাদ হয়ে গেল, সন্তানসন্ততি ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ছে।...’ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের চারপাশে, আমাদের ওপর নয়।’ বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসুল (সা.) হাত দিয়ে যেদিকেই ইশারা করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে সেদিকেই ফরসা হয়ে গেছে। এমনকি আমি মদিনাকে আয়নার মতো পরিষ্কার দেখতে পেলাম। এদিকে ‘কানাত’ নামক প্রান্তরে এক মাস ধরে পানির ধারা বয়ে গেল। যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউই এসেছে, সে-ই অতিবৃষ্টির সংবাদ দিয়েছে। (মুসলিম : ১৯৬৪)।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে বাঁচার দোয়া : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, অভাব ও দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) এভাবে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধা থেকে আশ্রয় চাই, কারণ তা নিকৃষ্ট শয্যাসঙ্গী। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই খিয়ানত করা থেকে। কেননা, তা খুবই নিকৃষ্ট বন্ধু।’ (আবু দাউদ : ১৫৪৭)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি দারিদ্র্য থেকে, আপনার কম দয়া থেকে ও অসম্মান থেকে। আমি আপনার কাছে আরও আশ্রয় চাইছি জুলুম করা থেকে অথবা অত্যাচারিত হওয়া থেকে।’ আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় এই দোয়া করতেন। (বুখারি : ১৫৪৪)।
অন্য হাদিসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়াকে অভাব দূর হওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে যাবতীয় বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন এবং তাকে অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিক দান করবেন।’ (আবু দাউদ : ১৫১৮)।
সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া : উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’
নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে। (বুখারি)।
নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা : বান্দা যখন নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে, তখন আল্লাহ তাআলা তার প্রতি খুশি হন। বিপদ-আপদ ও অভাব-অনটন দূর করার পাশাপাশি নেয়ামত বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ০৭)। রিজিকের মালিক হলেন আল্লাহ। তিনি যাকে চান অঢেল রিজিক দান করেন। আমাদের কাজ হলো তার নির্দেশ অনুযায়ী পরিশ্রম করে হালাল উপার্জন করা।আল্লাহতায়ালা আমাদের মনের সব ভালো ইচ্ছা পূরণ করুন। আমিন!
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

‘ফরিদপুরে উত্তাল’ 'ফিলিস্তিনে ইসরাইলী বাহিনীর গনহত্যার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ'

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সুন্দরগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল

গাজায় ইসরাইলের চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে নিটারে মিছিল

গাজায় ইসরাইলি বর্বর আগ্রাসনের প্রতিবাদে বেরোবিতে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

মুন্সীগঞ্জে ৩ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে নাগেশ্বরীতে বিেিক্ষভ মিছিল ও সমাবেশ

মৌলভীবাজারে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত

আটঘরিয়ায় সাদা সোনার বাম্পার ফলন

ভূরুঙ্গামারীতে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

মাগুরায় নিহত যুবদলের নেতা মিরাজের নামাজে জানাজায় গন মানুষের ঢল

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচারে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে দাউদকান্দিতে হেফাজত ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল

সাভার পৌরসভায় দুদকের অভিযান, অনিয়মে ও দুনীর্তির প্রমাণ মিলেছে

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে চিলমারীতে বিক্ষোভ মিছিল

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে গোয়ালন্দে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

ফিলিস্তিনে গণহত্যায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পীরগনজ বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবাদ -সমাবেশ

‘বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের উদ্যোগ ইতিবাচক, বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবেন’

রামুতে ফিলিস্তিনে গনহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল’ আন্দোলনে ঢাবি সাদা দলের সংহতি

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ: মিছিলে উত্তাল বায়তুল মোকাররম এলাকা