যুবক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আজকের যুবসমাজ
১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
(গত দিনের পর) ব্যবসায়িক কাজে সিরিয়া সফর : কুরাইশের ব্যবসায়ী কাফেলা যখন মক্কা থেকে বের হতো তখন হযরত খাদিজা রাযি. কারো কাছে ব্যবসায়িক চুক্তিতে নিজের সম্পদ দিয়ে দিতেন। এবার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন মক্কার সবচেয়ে আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত, আল-আমীন যুবক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে তার সম্পদ দিয়ে দিবেন। সরাসরি প্রস্তাব রাখেন তাঁর কাছে। এ দিকে যুবক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামও প্রস্তাবে সম্মতি জানান। ইতিহাস সাক্ষী, শামের এই ব্যবসায়িক সফরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যবসায় সর্বদিক থেকে বরকত হয়। সফর শেষে সকল পণ্য ও মূল্য খাদিজা রাযি. এর নিকট অর্পন করেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকতে খাদিজা রাযি. এইবার এতো বিপুল পরিমাণ লভবান হন ইতিপূর্বে আর এ পরিমাণ লাভ হয়নি। (সীরাতে মুস্তফা : ১/১৩০)।
খাদিজা রাযি.-এর সাথে শুভ পরিণয় : হযরত খাদিজা রাযি. আরবের এক সম্ভ্রান্ত বংশের বিত্তশালি একজন নারী। প্রাক ইসলাম ও ইসলাম পরবর্তী উভয়যুগেই তাকে লোকেরা ‘তাহিরা’ (পবিত্র ও সতী সঙ্কী) উপাধিতে ভূষিত করেছিল। তিনি যুবক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সততা, বিশ্বস্ততা ও উত্তম চরিত্রের মাধুর্যতার ব্যাপারে যথেষ্ট অবগত ছিলেন। বিশেষ করে শামের ব্যবসিক সফরের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমানতদারিতার বিষয়টি তার সমনে আরো স্পষ্ট হয়। এ বাণিজ্যিক সফরে তিনি দ্বিগুণ মুনাফা অর্জন করেন। সিরিয়া পৌঁছানোর পর খ্রিস্টান পাদ্রী নাসতুরা তাকে দেখে নবী হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করেন।
এ ছাড়া খাদিজা রাযি. এর দাসী মাইসারা বাণিজ্যিক সফরের সময় লক্ষ্য করেন চলার পথে চলমান মেঘমালা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামকে ছায়া প্রদান করছে। পাশাপাশি ওরাকা বিন নাওফলের ভবিষ্যৎবাণী শুনে খাদিজা রাযি. এর সামনে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী হওয়ার বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। এসব বিষয় সামনে রেখে তিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার একান্ত আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তাঁর কাছে প্রস্তাব প্রেরণ করেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাচা আবু তালিবের পরামর্শে প্রস্তাবে সম্মতি জানান। অত:পর কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বর্গের উপস্থিতিতে বিবাহ সম্পন্ন হয়।
তখন নবীজির বয়স ছিল পঁচিশ বছর। চাচা আবু তালিব বিবাহের খুতবা পড়েন। খুতবায় তিনি বলেন,আম্মা বা’দ! নিশ্চয়ই মুহাম্মদ এমন যুবক, কুরাইশের কোন যুবক তার সমকক্ষ নয়। সম্মান, মর্যাদা ও বুদ্ধি বিবেচনায় তার সাথে যে কোন যুবকের মোকাবেলা করা হলে সে সবার চেয়ে অগ্রগামী হবে। অবশ্য আর্থিক দিক থেকে তার স্বল্পতা রয়েছে, তাতে ক্ষতি নেই কেননা সম্পদ অস্থায়ী ও প্রত্যাবর্তনশীল। উভয়ের একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সম্মতি রয়েছে। (আর রাওযুল উনুফ ১/২৩৮)।
পৃথিবীকে শ্রেষ্ঠ যুবসমাজ তিনিই উপহার দিয়েছেন : ইতিহাস সাক্ষী! আদর্শ যুবসমাজ তৈরির কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে নবীয়ে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানব ইতিহাসে যেই উন্নত যুবসমাজ উপহার দিয়ে গেছেন পৃথিবীতে এর কোন নযীর নেই। তাঁর পবিত্র স্পর্শে পৃথিবী পেয়েছে সংগ্রাম ও বীরত্বের প্রতীক আম্মার ইবনে ইয়াসার, হিজরত ও দাওয়াতের আদর্শ মাসআব ইবনে উমাইর, নেতৃত্ব ও পরিচালনার বিস্ময়কর উদাহরণ উসামা ইবনে যায়েদ, ইলম ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. এর মত যুবকদেরকে। এসব নিষ্ঠাবান তারুণ্যের দাপটে পাল্টে গেছে ইতিহাসের গতিধারা, ধূলোয় মিশে গেছে বাতিলের রাজমুকুট, জুলুম ও অত্যাচারের আঁধার দূরীভূত হয়ে সমাজে কায়েম হয়েছে ন্যায়-ইনসাফ।
একজন সৎ, ন্যায়-নিষ্ঠাবান যুবক সবসময় দীনের পাহাড়াদার। দীনের কোন ক্ষতি সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। যালিমের যুলুম তাকে হকের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না। সে তো যালিমের রক্তচোক্ষুকে পরোয়া করবে না। সে তার অন্তরে গেঁথে নিবে নবীয়ে আরাবীর সেই সাহসী বাণী “সর্বোত্তম জিহাদ হলো অত্যাচারী বাদশার চোখে চোখ রেখে হক কথা বলা। ইতিহাস সাক্ষী! যুগে যুগেই মুসলিম যুবসমাজ এর বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে। মুসলিম যুবক হাতীত আয-যাইয়াতকে হাজ্জাজ বিন ইউসূফ এর কাছে আনা হলো।
ইতিহাস যেই হাজ্জাজকে ‘আলাযযুদ দম’ রক্ত থেকো উপাধি দিয়েছে। তার সামনে যুবক হাতীত যেই সাহসিকতা প্রদর্শন করেছেন তা হাজারো যুবকের প্রেরণা। হাজ্জাজ তাকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি হাতীত? উত্তরে যুবক বললেন, হ্যা। হাজ্জাজ আবার বললো, আমার সম্পর্কে তুমি কি ধারণা পোষণ কর? তখন হাতীত আয-যাইয়াত বললেন : ‘যমীনে তুমি আল্লাহর দুশমনদের মধ্যে অন্যতম একজন দুশমন। তুমি মা বোনদের ইজ্জত নষ্ট কর, সামান্য অপরাধে মানুষ হত্যা কর’। এই ছিল একজন মুসিলম যুবকের সাহসিতা। জালিম শাহীর চোখে চোখ রেখে অকপটে সত্য বলে যাওয়ার অনন্য এক দৃষ্টান্ত। (ইয়াহইয়ায়ে উলূমুদ্দীন ২/৩৪৬)। আজকের যুবসমাজও যদি ইসলামের এই স্ট্রীটকে অন্তরে লালন করতো তাহলে তাদের মাথার উপর বসে ষোল বছর পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী যালিমশাহী যুলুমের ভয়াবহ আগ্রাসণ চালাতে পারতো না। আরও বহু আগেই লেজগুটিয়ে পালাতে বাধ্য হতো।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়
‘হাই অ্যালার্টে’ লন্ডন, মার্কিন দূতাবাসের সামনে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ