বালা মুসিবত ও তার প্রতিকার
১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
জ¦ীন ও মানুষকে মহান আল্লাহ কেবলমাত্র তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। জ¦ীন ও মানুষ মহান আল্লাহর দেয়া বিধানে জীবন যাপন করবে। পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর খলিফা হিসাবে দায়িত্ব পালন করবে। এই পৃথিবীতে চলতে গিয়ে তাদের সুখ দুঃখ, হাসি কান্না, আনন্দ বেদনা, আরাম কষ্ট এগুলোর মুখোমুখি হতে হয়। কখনো যে আনন্দে থাকে কখনো তাকে পেরেশানী কষ্ট কাবু করে ফেলে। এই কষ্ট পেরেশান, বালা মসিবত কখনো তার অর্জিত কামাই হিসেবে তাকে পাকড়াও করে, যাতে সে মহান রবের দিকে ফিরে আসে। কখনো মহান রবের পক্ষ থেকে তাকে যাচাই করে নেওয়ার জন্য, তার মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য পরীক্ষা হিসেবে তার কাছে আসে। সুরা শুরার ৩০ তম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, তোমাদের উপর যে বিপদ মসিবত আপতিত হয় তা তোমাদের হাতের কামাইয়ের কারণেই আসে। আর তিনি অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন।
সুরা রূমের ৪১ তম আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, মানুষের কৃত কর্মের কারণেই জলে এবং স্থলে মহা দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। যাতে তাদের কোন কোন কাজের স্বাদ তিনি তাদেরকে আস্বাদন করান। যাতে তারা (আল্লাহর দিকে) ফিরে আসে। সুরা নিসার ৭৯ তম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, আর তোমার যা অকল্যাণ ঘটে, তা তোমার নিজের কারনেই। সুরা আনআমের ৪২ তম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, অতঃপর আমি তাদের (অবাধ্যতার কারণে) তাদেরকে অর্থ সংকট ও দুঃখ দুর্দশা কষ্টে আক্রান্ত করলাম। যাতে তারা অনুনয় বিনুনয় এর নীতি অবলম্বন করে। সুরা আনআমের ৪৩ তম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, কাজেই যখন আমার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপিত হলো তখন তারা কেন বিন¤্র হল না? বরং তাদের মন আরো বেশি কঠিন হয়ে গেল এবং শয়তান তাদেরকে আশ^স্ত করেছে তোমরা যা করছ ভালই করছ।
সুরা মুমিনুনের ৭৬ তম আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি তাদেরকে আামর শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করেছি। তখনও তারা নিজ প্রতিপালকের সামনে নত হয়নি এবং তারা কোন প্রকার অনুনয় বিনুনয় করেনি। সুরা তাওবার ১২৬ তম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, তারা কি লক্ষ্য করে না, তারা প্রতি বছর দুই বার পরিক্ষার সম্মুখীন হয়। তবুও তারা তাওবা করেনা এবং উপদেশ গ্রহণ করেনা। আমাদের কৃতকর্মের কারণেই মহান রব আমাদের নিকট থেকে তাঁর নেয়ামত কেড়ে নেন, বালা মসিবত, বিপদ আপদ, জুলুম নির্যাতন, নিপিড়ন, ক্ষুধা দারিদ্র চাপিয়ে দেন। এই ব্যাপারে হাফেজ ইবনুল কাইয়্যুম রাহ বলেন, গোনাহের শাস্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, আল্লাহর নেয়ামত দূর হয়ে যায় এবং তাঁর অসন্তুষ্টি ও শাস্তি আপতিত হয়। অতএব গুনাহ ব্যতিত বান্দার নিকট থেকে নেয়ামত দূর হয় না। আলী রা. বলেন, গোনাহ ও পাপাচার ব্যতিত কোন বালা মসিবত আসে না। তাওবাহ ব্যতিত কোন বিপদ দূর হয় না।
ইবনে সাদ রাহঃ আবু মুলাইকাহ রাহঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, আসমা বিনতে আবু বকর রা. যখন মাথা ব্যথা অনুভব করতেন, তখন তিনি মাথায় হাত দিয়ে বলতেন, আমার গুনাহের কারণে এই ব্যথা। আর আল্লাহ যা মাফ করেন তা তো অনেক। ইবনে আউন রাহ. বলেন, ইবনে শিরিন রাহ. যখন ঋণের ভারে আক্রান্ত হন এবং এই ঋণের কারণে তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তখন তিনি বলেন আমি এই চিন্তাকে চিনি ও জানি, আমার পাপের কারণে আমি চল্লিশ বছর যাবত এই ঋণে আক্রান্ত হয়ে আছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের পূর্বের অনেক জাতিকে গোনাহের কারণে পাকড়াও করেছেন এমনকি নবী আ. গনের অনুসারী ব্যতিত সকলকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। যেমন নুহ আ. সময়ের নাফরমানদের মহান রব প্লাবনে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছেন। হুদ আ. কাউমকে প্রবল ঝড় ঝঞ্জা দ্বারা ধ্বংস করেছেন। সালিহ আ. এর নাফরমান কাউমকে ভূমিকম্প দ্বারা ধ্বংস করেছেন। লূত আ. এর কাউমকে মহান আল্লাহ জমিন উল্টিয়ে দিয়ে আকাশ থেকে পাথর নিক্ষেপ করে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
ইমানদারগনের উপরও তাদের পাপের জন্য শাস্তি আসে। মহান আল্লাহ চান প্রত্যেক ইমানদের পাপ মুক্ত হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করুক। তাই বালা মুসিবত, বিপদ আপদ, দুঃখ কষ্টের মাধ্যমে তার পাপ মুক্ত করাতে চান। একজন মুমিন সদা সতর্ক থাকবে। তার উপর কোন বিপদ এসে পরলে সে সচেতন হয়ে যাবে। সে খুঁজতে থাকবে তার দ্বারা কি কি পাপ সংঘটিত হয়েছে। পাপ সমূহ থেকে সে আন্তরিক তাওবা করবে। বিপদ আসার পর একজন মুমিন যদি তার পাপগুলো খোজে বের করতে পারে। তাহলে সে তাওবাও করতে পারবে। সে যদি তাওবা করে, তবে তার পাপ মাফ হয়ে যাবে। তার বিপদ মুসিবত দূর হয়ে যাবে। ভবিষ্যতের জন্য সে সতর্ক সচেতন হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা আনফালের ৩৩ তম আয়াতে বলেন, আর আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন না আর যখন তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে তাওবা করতে থাকবে এমতাবস্থায়ও আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন না। ইমাম আহমাদ ফুযালাহ ইবনে উবাইদ রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, বান্দা যতক্ষণ আল্লাহ তায়ালার নিকট ইস্তেগফার করবে ততক্ষণ সে আল্লাহ তায়ালার আযাব থেকে নিরাপদ থাকবে।
আজ আমাদের চিন্তার বিষয় আমাদের উপর এত বিপদ আপদ বালা মসিবত, দুঃখ কষ্ট, জুলুম নির্যাতন, খুন রাহাজানি, ক্ষুধা দারিদ্র, দূভীক্ষ সব কিছু আমাদের ঘিরে ধরেছে। এই ক্ষেত্রে আমরা সহজেই বলে ফেলি আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন। কেউ আমাদের বিপদে খবর নিতে আসলেও শান্তনা দেন, আল্লাহ আপনার পরীক্ষা করছেন। আপনি ধৈর্য্য ধরুণ। আল্লাহর সাহায্য চান। আমরাও আপনার জন্য দোয়া করছি। এখানে শাস্তি এবং পরীক্ষা দুটোর প্রেক্ষাপট দুটি, প্রতিষেধকও ভিন্ন। শাস্তির কারণ হল গুনাহ তার প্রতিকার ইস্তেগফার এবং পাপ কাজ ছেড়ে দেওয়া। পরীক্ষার কারণ হল ইমান আমল যাচাই এবং মর্যাদা বৃদ্ধি, ধৈর্য্যরে পরীক্ষা। তার প্রতিষেধক হল ধৈর্য্য এবং সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ১৫৪ তম আয়াতে বলেন, আর আমি তোমাদেরকে নিশ্চিত নিশ্চিত পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবনের ক্ষতি, ফল ফসলের ক্ষতি দ্বারা। আর হে নবী আপনি ধৈর্য্যশীলদের সুসংবাদ দিন।
কোন ব্যক্তি যদি প্রথমেই নিজেকে পরীক্ষার কাতারে ফেলে দেয় এটা শয়তানের একটি প্রতারণা। ফলে সে তার অপরাধ খোঁজার প্রয়োজন অনুভব করবে না। নিজেকে সে অনেক উঁচু স্তরের মনে করবে। কারণ সে এখন পরীক্ষার্থী। তার গুনাহের কথা স্মরণ হবে না। সে তার তার জিন্দেগী যাচাই করে দেখবে না। সে তার জীবন যাপনের দিকে তাকাবে না। যে তার কোন ভূল, অপরাধ আছে কি না বা হচ্ছে কি না? এখন আমার অনেক গুনাহ আমাকে বিপদে পাকড়াও করেছে। আমি ভাবছি আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করছেন। আসলে বিষয়টা কেমন হয়ে যাচ্ছে না? তাই আমাদের পূর্ববর্তীগন বিপদ আসলে নিজের গুনাহ খোঁজতেন, ইস্তেগফার করতেন। আর ইস্তেগফার নিশ্চয়ই সবর সালাতের বিপরীত নয়।
আজ ইমানদারদের চতুর্দিকে জুলুমের করালগ্রাস। ইমানদারগন ভাবছেন, এটা তাদের পরীক্ষা। ফলে এতো বিপদের পরও আমার আমল আখলাক পরিবর্তন হচ্ছে না। কারণ আমাকে আমি পরীক্ষার্থী ভাবছি। গুনাহগার ভাবতে পারছিনা। তাওবা ইস্তেগফার করাও আমার ভাগ্যে জুটছে না। কারণ আমি নিজেকে শয়তানের প্রতারণায় পড়ে গুনাহগার ভাবতে পারছিনা। ফলে বছরের পর বছর জুলুম নির্যাতনের স্বীকার হয়েও আমি ধৈর্য্য ধারণ আর সালাতের মাধ্যমে মহান মালিকের সাহায্য চেয়েও আমি নির্যাতিতই রয়ে যাচ্ছি। কারণ আমার রোগ একটি আর ঔষধ গ্রহণ করছি অন্য রোগের। ফলে রোগ বালাই আরো বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের মুরুব্বিগন, দায়ীগনও অনেক ক্ষেত্রে এই রোগের শিকার।
আমার জন্য পরীক্ষা হলে আমার গুনাহ খোঁজতে বাঁধা কোথায়। আমরা যতই সতর্ক থাকি কোন না কোন ভাবে আমাদের দ্বারা বড় না হলেও ছোট গুনাহ হয়েই যাচ্ছে। আর বর্তমানে এমন কোন পাপের পথ নেই যেটা খোলা নেই। আল্লাহ তায়ালা পূর্বের জাতিগুলোকে যে সমস্ত পাপের জন্য ধ্বংস করে দিয়েছেন। এই সবগুলো পাপ বর্তমানে চলমান। বর্তমানে নেতৃত্বের মধ্যে অর্থ পদ যষ খ্যাতি প্রাপ্তির প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। এমতাবস্থায় বিপদ আসলেই, মহান আল্লাহ পরীক্ষা করছেন তা ভাবার সুযোগ কোথায়? শুধু সবর আর সালাতের পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ আছে কি? বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিয়, রাজনৈতিক যত সমস্যা বিপদ আপদ আসবে। সবার আগে নিজেদের গুনাহগুলো তালাশ করা উচিত। গুনাহগুলো চিহ্নিত করে মাওলার নিকট খালেস ভাবে ইস্তেগফার করা উচিত। নিজেদের সংশোধন করা উচিত। তাহলে পরিবর্তন আসবেই আসবে। নতুবা যুগ যুগ অপেক্ষা করলেও আশানুরুপ কোন ফলাফল আসার সম্ভাবনা নেই। কেননা আমি যোগ্যতা অর্জন না করেই নিজেকে পরীক্ষার্থী ভাবছি।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়
‘হাই অ্যালার্টে’ লন্ডন, মার্কিন দূতাবাসের সামনে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ