মান ভেজাল রোধে ইসলামী নীতি
০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
মান নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি : আল্লাহ তাআলা মানবজাতির খাওয়ার জন্য যা কিছু হালাল করেছেন, তা-ই খাদ্য। বিভিন্ন অখাদ্য ও নিকৃষ্ট দ্রব্যের মিশ্রণকে খাদ্যে ভেজাল বলে অভিহিত করা হয়। খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ মানেই ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা। এটি ইসলামের দৃষ্টিতে মহা অপরাধ। অধিক মুনাফা লাভের আশায় খাদ্যকে আকর্ষণীয় করার জন্য একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রকমারি রং, ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইউরিয়াসহ প্রভৃতি বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকে। ইসলাম এটি কখনোই সমর্থন করে না। কেননা, এসব কেমিক্যালযুক্ত খাদ্য মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যা মরণব্যাধি ক্যানসারসহ নানাবিধ রোগ সৃষ্টি করে। এটি অনৈতিক ও অমানবিক কাজ হওয়ায় ইসলামে তা চরমভাবে নিন্দনীয়। এ অপরাধ করার মাধ্যমে ব্যক্তি যেমন প্রতারণা, ধোঁকা, অর্থ আত্মসাৎ ও মিথ্যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তেমনি খাদ্যকে অখাদ্যে পরিণত করে, মানুষকে কষ্ট দেয় এবং শারীরিকভাবে ক্ষতি করে। তাই ইসলাম খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে নি¤œরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
পণ্যে ভেজাল মেশানো প্রতারণা : খাদ্যে ভেজাল দেওয়া মানে ক্রেতার প্রতারণা করা। ইসলামে ধোঁকাবাজি, চালচতুরি ও প্রতারণা ইত্যাদি নিষিদ্ধ।এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রাহ (রা.) বর্ণনা করেন, একবার রাসুল (সা.) বাজারে এক খাদ্যস্তুপের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি খাদ্যস্তুপের ভিতরে হাত প্রবেশ করিয়ে দেখলেন ভেতরের খাদ্যগুলো আর্দ্র-ভেজা।তিনি খাদ্য বিক্রেতার নিকট জানতে চাইলেন, এটি কেমন কথা? সে বলল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে হে আল্লাহর রাসুল! রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে তুমি খাদ্যগুলো উপরে রাখোনি কেন, যাতে মানুষ দেখতে পেত। অতপর নবী (সা.) বললেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করবে, সে আমার উম্মত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১০২)। খাদ্যে ভেজাল দিয়ে যে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা হয়, তা অবৈধ পন্থায় অর্জিত। অবৈধ পন্থায় অন্যের সম্পদ ভোগ নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৮)
যারা খাদ্যে ভেজাল মেশায় তাদের ইবাদত কবুল হয় না : খাদ্যে ভেজাল দাতাদের ইবাদত কবুল হয় না। কারণ রুজি-রুটি হালাল হওয়া ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত। অথচ ভেজাল দাতাদের উপার্জিত অর্থ অবৈধ বা হারাম। হারাম খাদ্যের মাধ্যমে যে রক্ত-মাংস তৈরি হবে, সে রক্ত-মাংসের শরীরের মাধ্যমে কৃত কোনো ইবাদত কবুল হয় না। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলো-মলিন দেহ নিয়ে আকাশের দিকে দুই হাত তুলে দোয়া করে বলে, হে আমার রব! বলে দোয়া করে, অথচ সে যা খায় তা হারাম। যা পান করে, তা হারাম। যা পরিধান করে, তা হারাম এবং হারামের দ্বারাই সে পুষ্টি অর্জন করে। তবে তার মুনাজাত কীভাবে কবুল হতে পারে!’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১০১৫)।
যে খাদ্য-পণ্যে ভেজাল দেয় সে মহাপাপী : যেসব ব্যবসায়ী খাদ্যে ভেজাল তৈরি করে, তারা মহাপাপী। তাদের সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের মহাপাপীরূপে ওঠানো হবে, তবে যারা সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেছে তারা ছাড়া।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ১২১০)। খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার একটি সহজ অর্থ হলো- সত্যের সঙ্গে মিথ্যার সংমিশ্রণ। ভালোর সঙ্গে মন্দের মিশেল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সত্যের সঙ্গে অসত্যের মিশ্রণ ঘটাবে না। জেনেশুনে সত্য গোপন করো না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪২)।
মিথ্যা কসমকারী বিক্রেতাদের সঙ্গে আল্লাহ কথা বলবেন না : আমাদের বাজার-ঘাটে সাধরণত দেখা যায়, যারা খাদ্যে ভেজাল মেশান, তারা অনেক সময় মিথ্যা কসম করেন। পণ্য বিক্রি করতে শপথ করে বলেন, ‘আল্লাহর কসম! এটি একদম খাঁটি’ ইত্যাদি। এভাবে মিথ্যা কসম করে পণ্য বিক্রয়কারী সম্পর্কে হাদিসে ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তিন ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলবেন না। তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না ও তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তাদের একজন হলো, যে তার ব্যবসায়িক পণ্য মিথ্যা কসম খেয়ে বিক্রয় করে। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১০৬)।
সত্যিকারের মুমিন অন্যকে কষ্ট দেয় না : যারা খাদ্যে ভেজাল মেশান, তারা মানুষের ও দেশের ক্ষতিকারক-দুশমন। কারণ খাদ্যে ভেজাল মেশালে শুধুমাত্র মানুষের মানসিক ও আর্থিক ক্ষতিই হয় না; বরং ক্ষেত্রবিশেষে মানুষ ফরমালিন, কার্বাইড ইত্যাদি বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত খাবার খেয়ে বিভিন্ন জটিল অসুখে আক্রান্ত হতে পারেনা। আবার অনেক সময় অভাবী ও অসহায় মানুষ চিকিৎসা না করতে পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেও পারেন। আবু হুরায়রাহ (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘মুসলমান তাকে বলা হবে ওই ব্যক্তিকে, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে এবং মুমিন হলো ওই ব্যক্তি, যার পক্ষ থেকে অন্য মানুষের প্রাণ ও সম্পদের কোনো শঙ্কা না থাকে। (বুখারি, হাদিস নং: ১০; মুসলিম, হাদিস নং: ৪০)।
পরিশেষে বলতে চাই, শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন করে বা শাস্তির বিধান করে খাদ্য-ভেজাল রোধ সম্ভব নয়। এজন্য দরকার মানুষের নৈতিকতাবোধ এবং পরকালীন জবাবদিহিতার বোধ জাগ্রত করা। একজন সত্যিকারের মুমিন খাদ্যে ভেজাল মেশাতে পারে না তাই জীবনোপকরণ হিসেবে মানবজীবনে খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনীশক্তি ও কর্মক্ষমতা খাদ্যের ওপরেই নির্ভরশীল। তাই খাদ্য যাতে ভেজালমুক্ত থাকে এ ব্যাপারে সমাজের সব শ্রেণির নাগরিককে সচেতন হতে হবে।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মার্কিন নির্বাচন বুঝতে যে ১২টি বিষয় আপনাকে সাহায্য করতে পারে
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছয় প্রার্থী লড়ছেন মার্কিন নির্বাচনে
নির্বাচনে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ফলাফল জানা যাবে কখন?
রাজধানীতে পুলিশের বিশেষ চেকপোস্ট কার্যক্রম শুরু
নিরাপত্তা তথ্য ফাঁসের দায়ে নেতানিয়াহু’র শীর্ষ চার কর্মকর্তা গ্রেফতার
ডাস্টবিনে মিলল মানুষের খণ্ডিত পা
যশোরে স্কুল ছাত্রীর হাত পা ও মুখ বাধা অবস্থায় লাশ উদ্ধার
জাল ফেললেই ওঠছে প্রচুর ইলিশ
ট্রাম্প না কমলা, কে পাবেন মুসলিম ভোট?
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বি-৫২ বোমারু বিমান মোতায়েন ‘অস্থিতিশীল উপস্থিতি’: ইরান
‘গণপিটুনিতে’ সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রীর ভাগনে নিহত
বিকেলে সিদ্ধান্ত এলপি গ্যাসের দাম কমবে না বাড়বে
ইসলামি মহাসম্মেলনে যোগ দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনতার ঢল
বেরোবিতে ফের ছয় যুগল আটক
রাত পোহালে ৫ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
ফের গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত
পঞ্চগড়ে যুবদলের কর্মীসভায় ককটেল বিস্ফোরণ
যশোরে আলাদা অভিযানে মাদক দ্রব্যসহ ৪ জন আটক
শাকিব-পূজার প্রেমের গুঞ্জনে মুখ খুললো পূজা চেরি
নেইমার ছিটকে গেলেন আবারও