যাপিত জীবনে শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা
০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
(গত দিনের পর) রাগ না করে হাসিমুখে কথা বলা :রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন।এবং ক্রোধান্বিত হওয়া থেকে বিরত থাকতেন।কেননা ক্রোধান্বিত হয়ে মানুষ বেশি ভুল করে থাকে। হাস্যোজ্জ্বল মানুষের সঙ্গে যে কেউ কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সুতরাং ব্যাক্তিজীবনে সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা উচিত। এ মর্মে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; ‘হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (তিরমিজি : ১৯৫৬)। তেমনিভাবে রাগ পরিহার করা নিয়ে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বলেন, তুমি রাগ কোরো না। লোকটি কয়েকবার কথাটা পুনরাবৃত্তি করলে নবী করিম (সা.) প্রত্যেকবারই বলেন, রাগ কোরো না। (বুখারি : ৬১১৬)
কুধারণা পরিহার করা : এক মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সুধারণা পোষণ করতে হবে,এটাই ইসলামের শিক্ষা। মানবতার মুক্তির দূত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মূর্ত প্রতীক। কারণ, কুধারণায় পরিবার, সংসার ও প্রতিষ্ঠান—সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। ইসলামে কুধারণা পাপ। কোনো মানুষের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা সমীচীন নয়। কেননা এতে মানুষ কষ্ট পায়। আল্লাহ বলেন : ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা অধিক ধারণা করা থেকে বিরত থাক। নিশ্চয়ই কিছু কিছু ধারণা পাপ।’ (সুরা হুজুরাত : ১২)। এ মর্মে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;’আমার সাহাবিদের কেউ যেন তাদের অপরজনের কোনো খারাপ কথা আমার কাছে না পৌঁছায়। কারণ আমি তাদের সঙ্গে পরিষ্কার ও উদার মন নিয়েই দেখা করতে ভালোবাসি। (জামে তিরমিজি : ৩৮৯৬) সুতরাং কারো ব্যাপারে এমন কোনো কথা বলা নিষিদ্ধ, যাতে তার ব্যাপারে মন্দ ধারণা তৈরি হয়।
অন্যকে অপমানিত না করে তার প্রতি সহমর্মি হওয়া : হাদিসের ভাষ্যমতে এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। আর ভাই -ভাইকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করবে—এটাই ইসলামের শিক্ষা। এর ফলে আল্লাহর সাহায্য মিলবে। কথায় আছে, সৃষ্টির সেবায় স্রষ্টা মিলে। এ মর্মে হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে,আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন।যে কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দুর করবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। (বুখারি : ২৪৪২)
জনসাধারণের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার ও উত্তম কথা বলা : সমাজে প্রতিনিয়ত ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। যেগুলোর মূল কারণ খুঁজলে দেখা যায়- অতি তুচ্ছ একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এসবের সূচনা। এসব তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক সময় বড় ধরনের ঝগড়া বিবাদ এমনকি মারামারি ও হত্যার মতো জঘন্য অপরাধও ঘটে থাকে। তাই ঝগড়া বিবাদ থেকে রক্ষা পেতে সদাচারণ বা উত্তম ব্যবহারের বিকল্প নেই। সদাচরণ মানুষকে কাছে টানে। সদাচরণের বাস্তব উদাহরণ ছিলেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা : আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি(স্বীয় উম্মত) কোমল-হৃদয় হয়েছিলেন।যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন।তারপর আপনি কোন সংকল্প করলে আল্লাহর উপর নির্ভর করবেন।নিশ্চয় আল্লাহ (তার উপর) নির্ভরকারীদের ভালবাসেন।(আলে ইমরান : ১৫৯)এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : যার আচার-ব্যবহার সুন্দর।আমি তার জন্য সর্বোচ্চ জান্নাতে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি। (সুনারে আবু দাউদ)।
আন্তরিকতা ও নিরাপত্তা। ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনের বাঁকে, চলতি পথে কারো মধ্যে কোনো মন্দাচার দেখলে ব্যক্তিগতভাবে তাকে হিকমতের সঙ্গে বলা, যাতে সে সংশোধন হয়ে যায়। অন্যকে ক্ষতি থেকে তাকে রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা। আবূ হুরাইরাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য আয়নাস্বরূপ এবং এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভাই। তারা একে অপরকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে রক্ষা করে। (আবু দাউদ : ৪৯১৮)।
একজন মুসলিম নিজেকে অন্যান্য জাতি অপেক্ষা ভিন্ন বৈশিষ্ট্যম-িত করতে সক্ষম হবে তখনই, যখন ইসলামি শিষ্টাচারের সুষমাকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও পার্থিব জীবনের সকল দিক ও বিভাগে ফুটিয়ে তুলতে পারবে। কারণ শিষ্টাচারসম্পন্ন মানুষ কোনো তুচ্ছ বিষয়ে নিজেকে জড়ায় না। কারও সঙ্গে শত্রুতা করে না বা কারও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করে না। আর শিষ্টাচারসম্পন্ন মানুষকে সবাই শ্রদ্ধা করে। হোক সে ব্যক্তি অসুন্দর কিংবা গরিব। ইসলামেও আদব, শিষ্টাচার ও সৌজন্যতাকে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে শিষ্টাচারসম্পন্ন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়
‘হাই অ্যালার্টে’ লন্ডন, মার্কিন দূতাবাসের সামনে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ