যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
(গত দিনের পর) নমরূদ ও তার পরিণতি : নমরূদও এক সময় সাধারণ জনগনের উপর জুলুম-নিপিড়ন চালিয়েছিল। কিন্তু সেও ঠিকতে পারেনি । এক সময় সবকিছু চুরমার হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি কি ঐ ব্যক্তির অবস্থা চিন্তা করনি, যাকে আল্লাহ রাজত্ব দান করার কারণে সে নিজ প্রতিপালকের (অস্তিত্ব) সম্পর্কে ইবরাহীমের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়? যখন ইবরাহীম বলল, তিনি আমার প্রতিপালক যিনি জীবনও দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তখন সে বলল, আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। ইবরাহীম বলল, আচ্ছা, আল্লাহ তো সূর্যকে পূর্ব থেকে উদিত করেন, তুমি তা পশ্চিম থেকে উদিত কর তো! এ কথায় সে কাফের নিরুত্তর হয়ে গেল। আর আল্লাহ এরূপ জালিমদের হেদায়াত করেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৮)।
পৃথিবীতে প্রথম ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী ছিল নমরূদ। সে-ই আসমান অভিমুখে টাওয়ার নির্মাণ করেছিল। আল্লাহ তাকে শায়েস্তা করার জন্য একটি মশা পাঠান। সেটি তার নাকে প্রবেশ করে। মশার জ্বালা থেকে বাঁচার জন্য তার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হত। তার রাজত্ব ছিল চারশত বছর। সে যেমন চারশত বছর পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল তেমনি আল্লাহ তাকে চারশত বছর এই আযাবে রাখেন। অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৮৭৮)। যুগে যুগে বহু জালিমের জন্ম হয়েছে। দুনিয়াতে তারা অনেক নিরিহ মানুষের উপর জুলুম আর নির্যাতন চালিযেছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা কোন জালিমকেই ছাড় দেননি। তাদেরকে পাকড়াও করেছেন কঠিন ভাবে। চরম ভাবে অপমান করেছেন । পরবর্তীরা যাতে শিক্ষা নিতে পারে এজন্য পরবর্তীদের মাঝে তাদের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। উল্লেখ করেছেন তাদের জুলুম আর নির্যাতনের বিবরণ। যা আজো মানুষ ঘৃণা ভরে স্মরণ করে।
জালিম রেহাই পাবে না : মানুষকে তার প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এটি সুনিশ্চিত। পরকালীন জীবনে কোন আদম সন্তানই জবাবদিহি ছাড়া এক কদমও নাড়াতে পারবে না। ইসলামে সব ধরনের জুলুম বা অত্যাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। শুধু জুলুম নয়, জুলুমের সহযোগিতা করা এবং জালিমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। আর এ বিধান শুধু মুসলমান নয়, কোন অমুসলিমের উপর জুলুম করলেও তার জন্য এ হুকুম। ইসলাম মতে, মানুষের উপর জুলুম এক ভয়াবহ গোনাহ। এ কারণে পরকালে দোযখে প্রবেশ করতে হবে।
আমাদের মনে রাখা দরকার, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন এমন এক অপরাধ যা সাধারণত আল্লাহ মাফ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই মজলুম ব্যক্তি (যার প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে) জালিমকে (অত্যাচারী ব্যক্তিকে) মাফ না করেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে (সুরা হুদ, আয়াত : ১১৩)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা জালিমকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন, তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তার পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপতিরোধ্য। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) ।
মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন আর নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের উপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।
জুলুমের শেষ পরিণাম : জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি (তিরমিযী, হাদিস ২৫১১)। সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের উপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের উপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ (সুরা রুম, আয়াত ৪১)। পরিশেষে, মহান আল্লাহর কাছে দুআ করি, তিনি যেন আমাদের জালিমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন এবং মাজলুমের অভিসম্পাত থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আমিন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়
‘হাই অ্যালার্টে’ লন্ডন, মার্কিন দূতাবাসের সামনে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ